কুষ্টিয়ার একজন নারী নেত্রী আফরোজা আক্তার ডিউ

  • Update Time : ০১:০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / 58

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচিত নারী সহ সভাপতি আফরোজা আক্তার ডিউ। তিনি একাধারে কুষ্টিয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দৈনিক স্বাধীনতা প্রতিদিন ও ইংরেজি ডেইলি নিউজ এভরিডে পত্রিকার সম্পাদক। স্কুল জীবন থেকেই শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, বঙ্গবন্ধু কিশোর সংসদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিয়ে সহপাঠীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করেছেন। একইভাবে বিদ্যালয় বিভাগ থেকে ব্যাডমিন্টন খেলায় কুষ্টিয়া জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার গৌরব অর্জন করে। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহন, সামাজিক আন্দোলন, ক্রীড়াঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন আফরোজা আক্তার ডিউ।
কুষ্টিয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। গ্রামে গঞ্জে, পাড়া মহল্লায় সাধারন নারীদের কল্যাণে, নিজের সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাংবাদিক এমএ ওহাব সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করে। তার চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ ওহাবের ছেলের লেখাপড়ার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সম্প্রতি কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুলের এক কোমলমতি শিক্ষার্থীর ব্রেন টিউমার হওয়ায় ভারতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১লাখ টাকা প্রদান করেন। মিরপুরের এক শিশুর চোখের চিকিৎসার জন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসচ্ছল নারীদের সেলাই মেশিন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বই, খাতা কলম সহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরন প্রদান করে থাকেন। সুইপার কলোনীতে হরিজন শিশুদের পাশে দাঁড়ানো, বৃদ্ধাশ্রমে বস্ত্র বিতরণ, অনাথ আশ্রমে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ, মসজিদ মাদ্রাসায় খাটিয়া প্রদান, অসচ্ছল নারীদের মাঝে গাভী গরু ও ছাগল প্রদান করেন। এমনিভাবে নীরবে সমাজের উন্নয়নমুলক কাজ করে যাচ্ছেন। এ জাতিয় সমাজ সেবা মূলক কাজের জন্য আফরোজা আক্তার ডিউ ২০১৬ সালে জয়ীতা পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সুখ দুঃখের সাথী হয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়াও নানাবিধ সামাজিক, ক্রীড়াঙ্গন, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আফরোজা আক্তার ডিউ। ছাত্রাবস্থায় থেকে তিনি সমাজ ও রাজনীতি মনস্ক। এর পেছনে রয়েছে পারিবারিক প্রেরণা এবং চেতনা। আর এই চেতনা থেকে প্রগতির পথে হেঁটে মানবিক হয়ে ওঠা, কাজ করা এই বোধেরও জন্ম সেখান থেকেই। আফরোজা আক্তার ডিউয়ের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সোহরাব আলী ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত (মৃত্যুকালীন পর্যন্ত) কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পাকিস্তান সরকারের চাকরি ছেড়ে কলকাতা থিয়েটার রোডে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মা শাহানারা বেগম মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, বস্ত্র সরবরাহ ও অস্ত্র সংরক্ষণ করেছেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়ায় রাজনৈতিক সফরে গেলে তিনি নিজ হাতে আফরোজা আক্তার ডিউ এর মা শাহানারা বেগমকে আহবায়িকা করে কুষ্টিয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এরপর শাহানারা বেগম দীর্ঘদিন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়িকা ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ডিউয়ের চাচা প্রয়াত আবুল কাশেম পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এমন পারিবারিক প্রতিবেশে তার বেড়ে ওঠা। একজন নারী যে বহুমাত্রিক গুণ ও কর্মের অধিকারী হতে পারে তার কাজ দেখলে বোঝা যায়। চাকুরী করে, সংসার সামলে, সন্তান লালন পালন করে, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, ক্রীড়াঙ্গন, সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা এবং সকল প্রকার অন্যায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে পত্রিকার পাতায় তুলে ধরে প্রতিবাদের পাশাপাশি রাজপথেও সক্রিয় ভূমিকা রেখে সংগঠনের সংকটে ও সংগ্রামে থেকেছেন অবিচল। শুধু কথায় নয় কাজের মাধ্যমে তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য, চিকিৎসার জন্য, লেখাপড়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তিনি নগদ অর্থ, বইখাতাপত্রসহ নিয়মিত আর্থিক সহায়তা করে চলেছেন এই নারীনেত্রী। সমাজসেবামূলক কাজের জন্য বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের সহযোগিতা করায় কুষ্টিয়ার মানুষ তাকে মানবতার নেত্রী উপাধীও দিয়েছে ইতোমধ্যে। এসব ছাড়াও সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালিয়ে নেয়া এবং নারী সাংবাদিক হিসেবে কুষ্টিয়ায় তার প্রত্যক্ষ বিচরণ এবং কার্যকর ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে। একজন নারী সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রজ্ঞা ও গুণের অধিকারী তার প্রমাণ এই নারীনেত্রী। দু’হাতে সমানে শিক্ষা, সমাজসেবা, সাংবাদিকতা ও সামাজিক কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর তিনি । কুষ্টিয়ার রাজপথে আফরোজা আক্তার ডিউয়ের বলিষ্ঠ পদচারনা সেই কথা বলে। তার কথা ও কাজে উচ্চারিত হয় মানুষের অধিকার । তার অদম্য ইচ্ছাশক্তিই আজকের এই সফলতা। এ কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার স্বামী কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব। এই কর্মবীর নারী ১৯৭৬ সালের ২ এপ্রিল কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন পাশাপাশি তিনি মূলধারার সাংবাদিকতা ধরে রেখেছেন নিজের কর্ম প্রচেষ্টায়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে ২০১৬ সালে জয়ীতা হন। ১৯৯৩ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম নিজ হাতে আফরোজা আক্তার ডিউকে কুষ্টিয়া জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল ও সমন্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সচিব করে কুষ্টিয়া জেলা কমিটি ঘোষণা করেন। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০০০ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কুষ্টিয়া জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বিবর্তন’ এর কোষাধ্যক্ষ ও আলোর দিশা মহিলা সংস্থার সভাপতি, কুষ্টিয়া লেডিস ক্লাবের সাহিত্য ও প্রচার সম্পাদক, কুষ্টিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য। সরকারী শিশু সদন (বালিকা) এর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং কুষ্টিয়া জেলা রেফারি আম্পায়ার সমিতির আজীবন সদস্য ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য, আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক। একজন নারী হিসেবে স্বামী, সংসার, কর্মস্থল সামলে সামাজিক,রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে চলেছেন দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ ধরে। আর এসব সংগঠনে তিনি মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে। মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন এবং সমাজ ও সংস্কৃতি মনস্ক নারী আফরোজা আক্তার ডিউ দুই মেয়ে তাসনিয়া ইসলাম তানহা, নূসাইফা ইসলাম ত্বাহা ও স্বামী রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন আরশীনগর ভবন, পূর্ব মজমপুর, কুষ্টিয়ায়।
তিনি বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি ( বানাসাস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের নবনির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক। সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। আফরোজা আক্তার ডিউ’র সাফল্য ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেছেন কুষ্টিয়ার মানুষ। বিশেষ করে সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আফরোজা আক্তার ডিউ এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে কুষ্টিয়ার নারী সমাজ। সেবার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কুষ্টিয়ার একজন নারী নেত্রী আফরোজা আক্তার ডিউ

Update Time : ০১:০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচিত নারী সহ সভাপতি আফরোজা আক্তার ডিউ। তিনি একাধারে কুষ্টিয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দৈনিক স্বাধীনতা প্রতিদিন ও ইংরেজি ডেইলি নিউজ এভরিডে পত্রিকার সম্পাদক। স্কুল জীবন থেকেই শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদ, বঙ্গবন্ধু কিশোর সংসদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিয়ে সহপাঠীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করেছেন। একইভাবে বিদ্যালয় বিভাগ থেকে ব্যাডমিন্টন খেলায় কুষ্টিয়া জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার গৌরব অর্জন করে। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহন, সামাজিক আন্দোলন, ক্রীড়াঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন আফরোজা আক্তার ডিউ।
কুষ্টিয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে নেতৃত্ব দিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। গ্রামে গঞ্জে, পাড়া মহল্লায় সাধারন নারীদের কল্যাণে, নিজের সাধ্যমত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সাংবাদিক এমএ ওহাব সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করে। তার চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ ওহাবের ছেলের লেখাপড়ার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সম্প্রতি কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুলের এক কোমলমতি শিক্ষার্থীর ব্রেন টিউমার হওয়ায় ভারতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১লাখ টাকা প্রদান করেন। মিরপুরের এক শিশুর চোখের চিকিৎসার জন্য ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া অসচ্ছল নারীদের সেলাই মেশিন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বই, খাতা কলম সহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরন প্রদান করে থাকেন। সুইপার কলোনীতে হরিজন শিশুদের পাশে দাঁড়ানো, বৃদ্ধাশ্রমে বস্ত্র বিতরণ, অনাথ আশ্রমে খাদ্য ও বস্ত্র বিতরণ, মসজিদ মাদ্রাসায় খাটিয়া প্রদান, অসচ্ছল নারীদের মাঝে গাভী গরু ও ছাগল প্রদান করেন। এমনিভাবে নীরবে সমাজের উন্নয়নমুলক কাজ করে যাচ্ছেন। এ জাতিয় সমাজ সেবা মূলক কাজের জন্য আফরোজা আক্তার ডিউ ২০১৬ সালে জয়ীতা পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সুখ দুঃখের সাথী হয়ে নিরলসভাবে কাজ করছেন।
রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছাড়াও নানাবিধ সামাজিক, ক্রীড়াঙ্গন, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আফরোজা আক্তার ডিউ। ছাত্রাবস্থায় থেকে তিনি সমাজ ও রাজনীতি মনস্ক। এর পেছনে রয়েছে পারিবারিক প্রেরণা এবং চেতনা। আর এই চেতনা থেকে প্রগতির পথে হেঁটে মানবিক হয়ে ওঠা, কাজ করা এই বোধেরও জন্ম সেখান থেকেই। আফরোজা আক্তার ডিউয়ের পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত সোহরাব আলী ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত (মৃত্যুকালীন পর্যন্ত) কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পাকিস্তান সরকারের চাকরি ছেড়ে কলকাতা থিয়েটার রোডে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারে যোগদান করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মা শাহানারা বেগম মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, বস্ত্র সরবরাহ ও অস্ত্র সংরক্ষণ করেছেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়ায় রাজনৈতিক সফরে গেলে তিনি নিজ হাতে আফরোজা আক্তার ডিউ এর মা শাহানারা বেগমকে আহবায়িকা করে কুষ্টিয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। এরপর শাহানারা বেগম দীর্ঘদিন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়িকা ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। ডিউয়ের চাচা প্রয়াত আবুল কাশেম পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। এমন পারিবারিক প্রতিবেশে তার বেড়ে ওঠা। একজন নারী যে বহুমাত্রিক গুণ ও কর্মের অধিকারী হতে পারে তার কাজ দেখলে বোঝা যায়। চাকুরী করে, সংসার সামলে, সন্তান লালন পালন করে, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, ক্রীড়াঙ্গন, সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা এবং সকল প্রকার অন্যায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে পত্রিকার পাতায় তুলে ধরে প্রতিবাদের পাশাপাশি রাজপথেও সক্রিয় ভূমিকা রেখে সংগঠনের সংকটে ও সংগ্রামে থেকেছেন অবিচল। শুধু কথায় নয় কাজের মাধ্যমে তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। মানুষের মঙ্গলের জন্য, চিকিৎসার জন্য, লেখাপড়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে তিনি নগদ অর্থ, বইখাতাপত্রসহ নিয়মিত আর্থিক সহায়তা করে চলেছেন এই নারীনেত্রী। সমাজসেবামূলক কাজের জন্য বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের সহযোগিতা করায় কুষ্টিয়ার মানুষ তাকে মানবতার নেত্রী উপাধীও দিয়েছে ইতোমধ্যে। এসব ছাড়াও সাহিত্য, সংস্কৃতি চর্চা, সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালিয়ে নেয়া এবং নারী সাংবাদিক হিসেবে কুষ্টিয়ায় তার প্রত্যক্ষ বিচরণ এবং কার্যকর ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে। একজন নারী সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রজ্ঞা ও গুণের অধিকারী তার প্রমাণ এই নারীনেত্রী। দু’হাতে সমানে শিক্ষা, সমাজসেবা, সাংবাদিকতা ও সামাজিক কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর তিনি । কুষ্টিয়ার রাজপথে আফরোজা আক্তার ডিউয়ের বলিষ্ঠ পদচারনা সেই কথা বলে। তার কথা ও কাজে উচ্চারিত হয় মানুষের অধিকার । তার অদম্য ইচ্ছাশক্তিই আজকের এই সফলতা। এ কাজে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার স্বামী কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব। এই কর্মবীর নারী ১৯৭৬ সালের ২ এপ্রিল কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট স্কুল এ্যান্ড কলেজে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন পাশাপাশি তিনি মূলধারার সাংবাদিকতা ধরে রেখেছেন নিজের কর্ম প্রচেষ্টায়।
শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে ২০১৬ সালে জয়ীতা হন। ১৯৯৩ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম নিজ হাতে আফরোজা আক্তার ডিউকে কুষ্টিয়া জেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল ও সমন্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সচিব করে কুষ্টিয়া জেলা কমিটি ঘোষণা করেন। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন ২০০০ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কুষ্টিয়া জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘বিবর্তন’ এর কোষাধ্যক্ষ ও আলোর দিশা মহিলা সংস্থার সভাপতি, কুষ্টিয়া লেডিস ক্লাবের সাহিত্য ও প্রচার সম্পাদক, কুষ্টিয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য। সরকারী শিশু সদন (বালিকা) এর ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং কুষ্টিয়া জেলা রেফারি আম্পায়ার সমিতির আজীবন সদস্য ও জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য, আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সাধারণ সম্পাদক। একজন নারী হিসেবে স্বামী, সংসার, কর্মস্থল সামলে সামাজিক,রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে চলেছেন দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ ধরে। আর এসব সংগঠনে তিনি মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন অত্যন্ত ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে। মানবীয় গুণাবলী সম্পন্ন এবং সমাজ ও সংস্কৃতি মনস্ক নারী আফরোজা আক্তার ডিউ দুই মেয়ে তাসনিয়া ইসলাম তানহা, নূসাইফা ইসলাম ত্বাহা ও স্বামী রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন আরশীনগর ভবন, পূর্ব মজমপুর, কুষ্টিয়ায়।
তিনি বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি ( বানাসাস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি, কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের নবনির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক। সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। আফরোজা আক্তার ডিউ’র সাফল্য ও সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করেছেন কুষ্টিয়ার মানুষ। বিশেষ করে সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আফরোজা আক্তার ডিউ এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে কুষ্টিয়ার নারী সমাজ। সেবার ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে।