রাণীশংকৈল প্রতিমা ভাঙচুর ও শ্মশানের ১০০ গাছ কর্তন করেছে দূর্বৃত্তরা
- Update Time : ০৭:৩৭:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪
- / 151
হুমায়ুন কবির, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ঝাপড়টলা কাটাবাড়ি শ্মশান কালি মন্দিরের প্রতিমাসহ একটি কালি মন্দির, ১০০ টি বিভিন্ন জাতের গাছ, ত্রিশাল কোটি দেবতার ৬ টি ধাম ও শ্মশানের ৭ টি কবর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। গতকাল ৯ জানুয়ারি রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে বুধবার ১০ জানুয়ারি দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, ইউএনও, রকিবুল হাসান, উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না, এডিশাল এসপি, আসাদুজ্জামান, এএসপি সার্কেল রেজাউল করিম, ও ওসি সোহেল রানা।সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় খগেন চন্দ্র, সুরেশ ও সতেন চন্দ্র বলেন, ওই শ্মশান ঘাট ও কালি মন্দিরের জায়গাটি আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে আমরা পূজা ও মৃতদেহ পোড়াতাম।
এটি সরকারি ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত ১ একর ৫৮ শতাংশ জমি, যার দান নং -৮৮, জেল নং ৬১ মৌজা বাচোর। এই জমিটি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শ্মশান ঘাট, কালি মন্দির ও ধাম হিসাবে আমরা ব্যবহার করে আসছি। এর পর ওই শ্মশানের সভাপতি- সম্পাদক ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক বরাবর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য লিখিত আবেদন করেন। গত দুবছর ধরে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ওই শ্মশান ঘাটে নিজেদের মতো করে
কালীপূজো,মৃতদেহ পোড়ানো কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
সর্বশেষ গতকাল রাতে জমিটি নিজেরদের দখলে নিতে ওই ইউনিয়নের ভাংবাড়ি বেল মার্কেট এলাকার সামসুল আলম ও নুর ইসলামসহ কয়েকজন,নিজের দখলে নিতে কাটাবাড়ি শ্মশান ঘাট ও কালি মন্দির, ধাম ও কবর ভেঙে গুড়িয়ে দেয় এবং সেখানকার প্রায় ১০০ টি গাছ কেটে ফেলে বলে স্থানীয়রা অনেকে জানান। অপরদিকে দলিলমুলে ক্রয়কৃত জমির মালিক বাচোর ভাংবাড়ি গ্রামের সামসুল হক জানান এই জমিটি আমব আমার ভাই আব্দুল কালাম, আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ ও মইজউদ্দিন নামে আমরা ভাই ২০০৫ সালে মাহেদা,মহিদুল নামে দুই ব্যক্তির কাছে দলিল মূলে ক্রয় করি। আমাদের এই ১ একর জমির খারিজ, মাঠ পর্চা সব আছে। তখন জমিতে কোন মন্দির ও শ্মশান ছিলোনা। এর পর আমরা পাঁচ ভাই ২০২২ সাল পর্যন্ত ভোগ দখল করি। ২০২২ সালে হঠাৎ করে বাচোর ঝাপরটলি এলাকার খগেন চন্দ্র, সুরেশ ও সতেন চন্দ্রসহ কয়েকজন ওই জমিটি মন্দির ও শ্মশানের নামে জবর দখল করে নেয় এবং মন্দির স্থাপন করেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে জমি দখল নিয়ে কয়েকটি মামলা মকরদ্দমা হয়েছে।
এবং বেশ কয়েকবার দুপক্ষের কাগজপত্রসহ কয়েকটি সালিশ বৈঠক করেও সুরাহা হয়নি।
ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী সুবল রায় ও পলাশ চন্দ্র জানান, আমরা সেদিন সন্ধ্যায় পুকুর থেকে মাছে ধরে আসার সময় দেখি ৫ জন মিলে দা দিয়ে কাটাবাড়ি শ্মশানের গাছ কাটতেছিল এবং কোদাল দিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর, ধাম ও শ্মশানের কবর ভেঙে মাটি সমান করছিল। এ সময় বাধা দিতে গেলে ভয়ভীতি দেখালে সেখান থেকে আমরা পালিয়ে আসি। ওই এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কাটাবাড়ি শ্মশান কালি মন্দিরের সভাপতি খগেন্দ্রনাথ বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় কয়েকজন মিলে কালি প্রতিমা, ১০০ টি গাছ, ৬ টি ধাম ও ৭ টি কবর ভেঙে ফেলেছে। আমি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। কাটাবাড়ি শ্মশান কালি মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক সুরেশ চন্দ্র বলেন, যারা এই ন্যাক্কারজন কাজটি করেছে তাদের বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যপারে বাচোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখ জনক স্থানীয় ইউএনও, উপজেলার চেয়ারম্যান, এডিশনাল এসপি ও এসপি সার্কেল
এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাণীশংকৈল থানা অফিসার ইনচার্জ সোহেল রানা বলেন খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে, সেখানে প্রতিমা ভাঙা, ও বেশ কিছু গাছ কাটা পড়েছিল। অভিযোগ পেলেই প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না বলেন, আমরা ঘটনাস্থল এসে ঘুরে দেখেছি। এই জমিটি নিয়ে দুটি পক্ষের মালিকানা দাবী নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। তবে তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আপাতত আমরা মন্দিরের ঘর নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে কিছু সহায়তা করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, দোষীদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মন্দিরে ঘর নির্মাণে সকল সহায়তা করা হবে।