কুমিল্লায় ইউপি চেয়ারম্যানের ধর্ষণে গৃহবধূর বাচ্চা প্রসব, ২০ দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ

  • Update Time : ০৭:৫৬:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩
  • / 128

সোহাইবুল ইসলাম, সোহাগ-

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বক্সগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের (৫০) বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে নারী গত ০৪ নভেম্বর কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও তার সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুপুত্রের পিতৃ পরিচয় দাবি করে মামলা দায়ের করেন আয়েশা আক্তার খুকি (৩০)।

যার নং- সি.পি ৮৪২/২০২৩ইং। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটি থানায় এজাহারভুক্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নাঙ্গলকোট থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ওই ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মৃত মমতাজ মিয়ার ছেলে। মামলার ২০ দিনেও নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বর্তমানে চেয়ারম্যান ও তার লোকদের হুমকি ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ভূক্তভোগী ও তার পরিবার।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ ২০১৪ইং তারিখ আয়েশা আক্তার খুকি বিবাহ হয়। বিয়ের পর তার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যে স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর তার শাশুড়ী সাথে গত ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং তারিখ পারিবারিক বিষয়ে নিয়ে ঝগড়া হয় এবং আয়েশা আক্তারকে তার শাশুড়ী মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে মিমাংসার জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারী বক্সগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের নিকট বিচারের জন্য গেলে তার শাশুড়ীর জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় রাত ১১টা বেজে যাওয়ায় তার শাশুড়ী চেয়ারম্যানের অফিসের না যাওয়ায় সে বাড়িতে চলে আসলে চাইলে চেয়ারম্যান দরজা বন্ধ করে তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। এতে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যান জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে এবং অমানসিক নির্যাতন করে। পরের দিন সকালে আয়েশা আক্তার চলে আসতে চাইলে চেয়ারম্যান দীর্ঘ ১০ দিন আটকে রেখে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে ছেড়ে এবং বিষয়টি কাউকে যাতে না বলে বিভিন্ন হুমকি ধমকি সহ হত্যা গুম করার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে আয়েশা আক্তার অন্ত:সত্ত্বা হলে চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালে সে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ওষুধ সেবন করায়। এতে বাচ্চা নষ্ট না হওয়ায় এতে ক্ষপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান তার মারধরসহ তার পেটে লাথি মারলে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা করায়। ডাক্তারের কাছে চেয়ারম্যান তার কাছে মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। কাউকে যেন কিছু না বলে পুনরায় হুমকি দেয়। পরে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে চাইলে পরে আয়েশা আক্তার লোকজনের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে এবং চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে বরলে বলে তাকে বাড়িয়ে নিয়ে রৌশনা বেগম (৫২) এর ঘরে আটকে রাখে।

পরে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আয়েশা আক্তারকে গলায় ওড়না পেচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে এবং তাকে বেধড়ক মারধরসহ অমানসিক নির্যাতন করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এর পর গত ১৮ অক্টোবর আয়েশা আক্তারকে তার বাবার বাড়ি থেকে জোড়পূর্বক তুলে নিয়ে পুনরায় বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করে চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদসহ তার লোকজন। এ সময় আয়েশা আক্তারের শরীরে আগুণ দিয়ে দিলে তার চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাকে নাঙ্গলকোট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সেখানে চেয়ারম্যানের লোকদের ভয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। পরে গত ২১ অক্টোবর অজ্ঞাত এক মহিলার বাড়িতে তার ডেলিভারী করানো হলে তার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।

সন্তানের কথা শুনে চেয়ারম্যান গত ২৪ অক্টোবর দুপুরে নবজাতক সন্তানকে হত্যার জন্য কাপড়ে মুড়িয়ে ব্যাগের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলে। পরে বাচ্চার কান্নার শব্দ আয়েশা আক্তার তার বাচ্চাকে নিয়ে ফেনী হাসপাতালে পালিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। পরে জানতে পরে চেয়ারম্যান আয়েশা আক্তারকে বিভিন্ন হুমকি ধমকি প্রদান করে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আত্মগোপন করে আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, বক্সগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে ৪ নভেম্বর এক নারী কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে ধর্ষণ মামলা করেছে। আসামী গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কুমিল্লায় ইউপি চেয়ারম্যানের ধর্ষণে গৃহবধূর বাচ্চা প্রসব, ২০ দিনেও আটক করতে পারেনি পুলিশ

Update Time : ০৭:৫৬:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

সোহাইবুল ইসলাম, সোহাগ-

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বক্সগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের (৫০) বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে নারী গত ০৪ নভেম্বর কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও তার সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুপুত্রের পিতৃ পরিচয় দাবি করে মামলা দায়ের করেন আয়েশা আক্তার খুকি (৩০)।

যার নং- সি.পি ৮৪২/২০২৩ইং। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলাটি থানায় এজাহারভুক্ত করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে নাঙ্গলকোট থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ওই ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মৃত মমতাজ মিয়ার ছেলে। মামলার ২০ দিনেও নাঙ্গলকোট থানা পুলিশ চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বর্তমানে চেয়ারম্যান ও তার লোকদের হুমকি ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ভূক্তভোগী ও তার পরিবার।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ ২০১৪ইং তারিখ আয়েশা আক্তার খুকি বিবাহ হয়। বিয়ের পর তার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যে স্বামী বিদেশ চলে যাওয়ার পর তার শাশুড়ী সাথে গত ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ইং তারিখ পারিবারিক বিষয়ে নিয়ে ঝগড়া হয় এবং আয়েশা আক্তারকে তার শাশুড়ী মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরে মিমাংসার জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারী বক্সগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদের নিকট বিচারের জন্য গেলে তার শাশুড়ীর জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় রাত ১১টা বেজে যাওয়ায় তার শাশুড়ী চেয়ারম্যানের অফিসের না যাওয়ায় সে বাড়িতে চলে আসলে চাইলে চেয়ারম্যান দরজা বন্ধ করে তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে হাত দেয়। এতে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে চেয়ারম্যান জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে এবং অমানসিক নির্যাতন করে। পরের দিন সকালে আয়েশা আক্তার চলে আসতে চাইলে চেয়ারম্যান দীর্ঘ ১০ দিন আটকে রেখে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে ছেড়ে এবং বিষয়টি কাউকে যাতে না বলে বিভিন্ন হুমকি ধমকি সহ হত্যা গুম করার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে আয়েশা আক্তার অন্ত:সত্ত্বা হলে চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানালে সে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ওষুধ সেবন করায়। এতে বাচ্চা নষ্ট না হওয়ায় এতে ক্ষপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান তার মারধরসহ তার পেটে লাথি মারলে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা করায়। ডাক্তারের কাছে চেয়ারম্যান তার কাছে মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। কাউকে যেন কিছু না বলে পুনরায় হুমকি দেয়। পরে এলাকাবাসী বিষয়টি জানতে চাইলে পরে আয়েশা আক্তার লোকজনের কাছে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে এবং চেয়ারম্যান তাকে বিয়ে বরলে বলে তাকে বাড়িয়ে নিয়ে রৌশনা বেগম (৫২) এর ঘরে আটকে রাখে।

পরে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে আয়েশা আক্তারকে গলায় ওড়না পেচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে এবং তাকে বেধড়ক মারধরসহ অমানসিক নির্যাতন করে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এর পর গত ১৮ অক্টোবর আয়েশা আক্তারকে তার বাবার বাড়ি থেকে জোড়পূর্বক তুলে নিয়ে পুনরায় বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা করে চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদসহ তার লোকজন। এ সময় আয়েশা আক্তারের শরীরে আগুণ দিয়ে দিলে তার চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তাকে নাঙ্গলকোট হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সেখানে চেয়ারম্যানের লোকদের ভয়ে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়নি। পরে গত ২১ অক্টোবর অজ্ঞাত এক মহিলার বাড়িতে তার ডেলিভারী করানো হলে তার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।

সন্তানের কথা শুনে চেয়ারম্যান গত ২৪ অক্টোবর দুপুরে নবজাতক সন্তানকে হত্যার জন্য কাপড়ে মুড়িয়ে ব্যাগের ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলে। পরে বাচ্চার কান্নার শব্দ আয়েশা আক্তার তার বাচ্চাকে নিয়ে ফেনী হাসপাতালে পালিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে। পরে জানতে পরে চেয়ারম্যান আয়েশা আক্তারকে বিভিন্ন হুমকি ধমকি প্রদান করে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আত্মগোপন করে আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, বক্সগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে ৪ নভেম্বর এক নারী কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতে ধর্ষণ মামলা করেছে। আসামী গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।