নওগাঁর রাণীনগরে জাল দলিলে জমি খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ
- Update Time : ০৬:০০:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৩
- / 208
রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগরে জাল দলিল ও ভূয়া তথ্য দিয়ে লাখ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৮ শতাংশ জমি খারিজ (নামজারি) করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। খারিজের পর ওই জমি জবর দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি রাণীনগর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জাল দলিলে এই খারিজটি আব্দুল কুদ্দুসের নামে নামজারি হয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে নানান প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। এমনকি ঘটনাটি নিয়ে জমির প্রকৃত মালিক ও দাবিদারের দু’পক্ষের মধ্যে চড়ম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় জমির ওয়ারিশ ও ক্রয়সূত্রে ৫ জন মালিক একযোগে আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে জাল দলিল দিয়ে ও তথ্য গোপন করে এবং ভূয়া তথ্য দিয়ে জমি খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চককুতুব মৌজায় সফেজান বিবি এবং মছিরন বিবির নামে ১৮৪, ১৪২, ১৪৩ নম্বর আরএস খতিয়ান প্রস্তুত আছে। ওই খতিয়ানের জমির ওয়ারিশ এবং দলিল মূলে জাছের আলী, আব্দুস সাত্তার, শাহাদ আলী সরদার, আহাদ আলী সরদার ও আজিজুল ইসলাম মালিক বলে দাবি করা হয়েছে। তারা সবাই দীর্ঘবছর যাবৎ ওই খতিয়ানের জমিগুলো ভোগ দখল করে আসছেন। এরই মধ্যে সম্প্রতি ওইসব সম্পত্তির খাজনা-খারিজের জন্য সংশ্লিষ্ট তহসিল অফিসে গেলে মালিকরা জানতে পারেন তাদের জমির মধ্যে থেকে প্রায় ৮ শতাংশ জমি চককুতুব গ্রামের ময়েন উদ্দীন মন্ডলের ছেলে আব্দুল কুদ্দুসের নামে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খারিজ (নামজারি) হয়।
এরপর আব্দুল কুদ্দুসের হওয়া খারিজের আবেদনের তথ্য সংগ্রহে নামে জমির প্রকৃত মালিকরা। একপর্যায়ে তারা আব্দুল কুদ্দুসের ভূমি অফিসে দাখিল করা রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের ১৯৮৮ সালের দলিল নম্বর ৬৮১৫ এবং ৬৩৬০ দলিল পান। এরপর কুদ্দুসের দাখিল করা দুই দলিলের জাবেদা কপি রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে তুলতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে জাল জালিয়াতির চিত্র।
অভিযোগকারী জাছের আলীসহ অন্যরা জানান, আমরা রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিস থেকে সম্প্রতি আব্দুল কুদ্দুসের ৬৮১৫ নম্বর দলিলের জাবেদা কপি (নকল) তুলে দেখি জাবেদার সাথে কুদ্দুসের দলিলের কোন মিল নেই। দলিলে দাতা, গ্রহীতা, মৌজা ও জমি কোন মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়া কুদ্দুসের ৬৩৬০ নম্বর দলিল রেজিষ্ট্রী অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, একটি চক্রের মাধ্যমে আব্দুল কুদ্দুস জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের জমির খতিয়ানের দুই মালিক সফেজান বিবি এবং মছিরন বিবিকে দাতা বানিয়ে এবং কুদ্দুস নিজে গ্রহীতা সেজে দুইটি জাল দলিল তৈরি করেছেন। সেই দুইটি জাল দলিল দিয়ে ও তথ্য গোপন করে আমাদের প্রায় ৮ শতাংশ জমি কুদ্দুস ভূমি অফিস থেকে খারিজ করে নিয়েছে। এ ঘটনায় আমরা ওই খারিজ বাতিলসহ কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
দলিল জাল-জালিয়াতি করে জমি খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। এ বিষয়ে বার বার তার বক্তব্য চাইলে তিনি কোন কথা বলেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, আবেদনের প্রক্ষিতে যাচাই বাছাই করে আব্দুল কুদ্দুসের নামে ৭.৯৪ শতাংশ জমি নামজারি করা হয়েছে। ভূলভ্রান্তি হতে পারে। তার দাখিল করা দলিল যে জাল সেটা আমাদের জানা ছিল না। ওই জমির মালিক দাবি করে ৫ জন ব্যক্তি খারিজ বাতিলের জন্য আবেদন এবং জাল দলিল দিয়ে খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে জালিয়াতি প্রমান হলে খারিজ বাতিলসহ আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।