৫৩ বছর ইমামতি করে পেলেন রাজকীয় বিদায়, কাঁদলেন মুসল্লিরা
- Update Time : ০৮:৩৭:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ মে ২০২২
- / 254
পাবনা প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে ইমামতি করেছেন হাফেজ মাওলানা আবু মুসা। আর তাই তো তাকে রাজকীয়ভাবে বিদায় জানিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের যশমন্তদুলিয়া গ্রামের মুসল্লিরা।
বুধবার (০৪ মে) বিকেলে শতাধিক মোটরসাইকেল, সিএনজি এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শুধু শোভযাত্রা নয়, তাকে ঘিরে পুরো গ্রামে কয়েক দিন ধরে নানা আয়োজন চলে।
বিদায় বেলায় গ্রামের মানুষ ভালোবেসে নগদ ৩ লাখ টাকার হাদিয়া তুলেছেন। প্রায় ২০ হাজার টাকা দিয়ে একাধিক টাকার মালা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় বাড়ি থেকে পাঞ্জাবি, পায়জামা, টুপি, জুতা ও আসবাবপত্রসহ নানা সামগ্রী দেওয়া হয়। ইমামের প্রতি এমন ভালোবাসার কারণে প্রশংসায় ভাসছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী জানায়, কিশোর বয়সে সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের সন্তান হাফেজ আবু মুসা পার্শ্ববর্তী উপজেলার যশমন্তদুলিয়া গ্রামের মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তখন মসজিদটি একেবারে জরাজীর্ণ ছিল। নামাজ আদায়ের উপযোগী ছিল না। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মসজিদের উন্নতি হতে থাকে। জরাজীর্ণ মসজিদটি বড় ও উন্নত করেছেন। পাশাপাশি তিনি অবহেলিত এই এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন মাদরাসা, ঈদগাহ ও গোরস্থান। এছাড়া আশপাশে আরও বেশ কয়েকটি মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইমামের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। পরে এলাকার মুরুব্বিসহ সর্বস্তরের মানুষ প্রিয় ইমামকে ধরে গাড়িতে তুলে দেন এবং শতাধিক মোটরসাইকেল, সিএনজিসহ ঘোড়ার গাড়িতে করে তার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসেন। এ সময় সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মসজিদের ইমাম ও খতিবের এমন রাজকীয় বিদায়ের ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনছুর আলম পিনচু বলেন, আমার ইউনিয়নে আজ পর্যন্ত এমন উদ্যোগ কেউ নেয়নি। এখন তো অনেক এলাকায় মসজিদের ইমাম নিয়োগ নিয়েও মানুষ বিরোধে জড়াচ্ছে। সেখানে একজন ইমামকে এভাবে বিদায় দেওয়া একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটা সারা দেশের মানুষের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি মইনউদ্দিন মাস্টার বলেন, মাওলানা আবু মুসা দীর্ঘ ৫৩ বছর মসজিদে ইমামতি ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমাদের সবার সঙ্গে মিশে ছিলেন। গ্রামবাসী তার পরামর্শ নিয়ে কাজকর্ম করতেন। তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবকের মতো। তাই তার বিদায় বেলায় সম্মানিত করার চেষ্টা করেছি।