লকডাউনের ‘ফাঁদে’ ফেলে ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে চাঁদা দাবি
- Update Time : ০৪:২৩:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২১
- / 189
ইউসুফ আলী চৌধুরী,রাজশাহী প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে চলছে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’।এই সুযোগে রাজশাহীতে লকডাউনের ফাঁদে ফেলে আব্দুল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে দুর্বৃত্তরা।
লকডাউনে দোকান খোলায় ওই প্রতারক চক্র পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে (১৫ এপ্রিল) রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানা পুলিশ ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে।ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহর ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে আটটার দিকে একটি মাইক্রোবাস তার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে একজন লোক নামেন। তিনি নিজেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। এ সময় আশেপাশের লোকজন ভয়ে পালিয়ে যান।
গাড়ি থেকে নেমে আসা ওই ব্যক্তি আব্দুল্লাহকে বলেন, ‘লকডাউনে দোকান খোলা কেন?’ তিনি আব্দুল্লাহকে আটক করেন। আব্দুল্লাহর বিকাশের ব্যবসা রয়েছে। তাঁর বাক্সে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল। টাকাসহ তিনি আব্দুল্লাহকে গাড়িতে তুলে রাজশাহী শহরের দিকে রওনা দেন।
খবর পেয়ে রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার পুলিশ গাড়িটি আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িতে তোলার পর ওই ব্যক্তি আব্দুল্লাহর কাছে আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। আত্মীয় স্বজনের কাছে টাকা চেয়ে ফোন করতে বলেন। এতে আব্দুল্লাহ বুঝতে পারেন যে, আটককারী ব্যক্তি ডিবি পুলিশ নন। প্রকৃতপক্ষে তিনি অপহরণকারী।
এদিকে আব্দুল আলীম (২৩) নামের এক যুবকও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁর বাড়িও একই গ্রামে। তার জড়িত থাকার বিষয়টি পরে স্থানীয় লোকজন বুঝেতে পেরেছিলেন। আলীমের বাবার নাম হোসেন আলী। রাতেই লোকজন আলীমের বাড়ি ঘেরাও করেন। তারা আলীমের বাবা হোসেন আলীকে ধরে চাপ দিতে থাকেন। হোসেন আলী তখন তার ছেলের কাছে ফোন করেন।
আব্দুল আলীম বিপদ বুঝতে পেরে অপহরণকারী আশিকের (৩০) কাছে ফোন করেন। তার ফোন পেয়ে অপহরণকারী ব্যক্তি আব্দুল্লাহকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেন। কিছু দূর এসে আশিক নিজেও গাড়ি থেকে নেমে যান। গাড়ি থেকে নেমে আব্দুল্লাহ তার এক আত্মীয়কে ফোন করে ঘটনার কথা বলেন। সেই আত্মীয় রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার পুলিশকে জানান।
পরে রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ মাইক্রোবাসটিকে আটক করে। গাড়িতে তখন শুধু চালক ছিলেন। তার নাম মাসুম হোসেন (৪০)। তার বাড়ি রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি এলাকায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে চালক লকডাউনের ফাঁদে ফেলে অপহরণের ঘটনা স্বীকার করেন।
কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি এসএম মাসুদ পারভেজ জানান, পালিয়ে যাওয়া আশিকের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। আরেক প্রতারক আলীমের ফোনে পেয়ে তিনি পথের মধ্যেই মাইক্রোবাস থেকে নেমে পালিয়ে গেছেন। তারা শুধু গাড়ির চালককে ধরতে পেরেছেন।
ওসি জানান, এ ঘটনায় আশিক, আব্দুল আলীম ও চালক মাসুম হোসেনসহ মোট চারজনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। রাতেই আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে অপহরণ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার অন্য একজন আসামির নাম জানা যায়নি। আশিককে ধরা গেলে তাঁর নামা জানা যাবে। গ্রেপ্তার চালককে শুক্রবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।