তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ
- Update Time : ০৩:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২১
- / 285
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ও বাড়িঘরে সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে ঢাবি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ পর্যন্ত সম্প্রীতির মিছিল কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
রোববার (১৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
আরোও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফেজ মাওলানা আবুল হোসেন মোল্লা, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এ্যাড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, ভাস্কর শিল্পী রাশা, সংগঠনের সহ-সভাপতি শাহীন মাতবর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, “সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্বজনীন দূর্গা পূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দোসর বিএনপি-জামাতের ক্যাডাররা।
কুমিল্লায় মন্দিরে কোরআন শরীফ রেখে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে বিএনপি-জামায়াত। ধর্মকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের মাধ্যমে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্যে। এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
সম্মিলিত ইসলামী জোটের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, “হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে গোপনে নাশকতার ছক কষেছিল স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসর বিএনপি-জামায়াত চক্র। দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বহির্বিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। বিএনপি-জামাত সেই সুযোগটাকে ইস্যু বানিয়ে আন্দোলনে নেমে সরকারের পতন ঘটানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এজন্য কুমিল্লা থেকে শুরু করে দেশব্যাপী বিশৃঙখলা শুরু করেছে বিএনপির-জামাতের ক্যাডাররা।
কুমিল্লায় মন্দিরে পরিকল্পিতভাবে কোরআন শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার মাধ্যমে বিএনপি-জামাতের প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামে মন্দিরে-বাড়িঘরে হামলা এবং সর্বশেষ ঢাকায় বায়তুল মোকাররমের সামনে পুলিশের ওপর হামলা-সব একই সূত্রে গাঁথা। এসব হামলার সাথে জড়িত বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।”
হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এ্যাড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, “গত বছর ভাস্কর্য ইস্যুতেও বিএনপি-জামাত ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেছিল। দেশের জনগণ তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি, অতীতের ন্যায় আবারও জনগণ বিএনপি-জামাতকে রাজপথে সমুচিত জবাব দিবে। বিগত ২০০১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ছয় শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল, আহত হয়েছিল ৩০ হাজারেরও বেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, ১২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছিল। সংঘবদ্ধভাবে হামলা, নির্যাতন, লুটতরাজে নিঃস্ব হয়েছিল লক্ষাধিক হিন্দু পরিবার।”
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষদাঁত উপড়ে ফেলবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: মুরাদ হাসানের বক্তব্যের সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তি একমত পোষণ করেছে। শুধুমাত্র স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিরাই বিরোধিতা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যারা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার দিকে ডাকে, সাম্প্রদায়িকতার জন্য যুদ্ধ করে, সংগ্রাম করে এবং জীবন উৎসর্গ করে তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৫১২৩।দেশবাসীর বিবেকের নিকট প্রশ্ন- বিএনপি জামাত কি সত্যিই ইসলামের চর্চা করে? এরা প্রকৃতপক্ষে আবু জেহেলের অনুসারী অভিশপ্ত গোষ্ঠী। কারণ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বিএনপি-জামাত ইসলাম ধর্মের লেবাশ লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ইসলাম পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে যাচ্ছে। এদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: মুরাদ হাসান এমপির বক্তব্যের সাথে একাত্মতা পোষণ করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তাঁর বক্তব্য শুনে যাদের জ্বলে তারা অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত অথবা স্বাধীনতা বিরোধীদের দোসর।
এদেশের সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ডা: মুরাদ হাসান এমপির বলিষ্ঠ উচ্চারণ নিতান্তই সাহসীকতার দাবিদার। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেছিলেন। একাত্তরে পরাজিত পাকিস্তানি অপশক্তি স্বাধীনতা বিরোধীরা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাহাত্তরের সংবিধানকে কেটে ছিঁড়ে ধ্বংস করে আবার বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলো। কোন নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেনি। একাত্তরে সকল ধর্মের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। সকল ধর্মের মানুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়, সকল ধর্মের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র ও ধর্ম দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ধর্মকে রাজনীতিতে নিয়ে আসলে সেই ধর্ম কলুষিত হয়। ধর্মকে পুঁজি করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলোর সংবিধান।