প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া সেজেছে অপরুপ রক্তিম সাজে

  • Update Time : ০৯:২০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১
  • / 446

 

মশিয়ার রহমান:

কৃষ্ণচূড়া “বৃক্ষ” জাতীয় উদ্ভিদ। যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia) . কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে।

সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১২ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশ অঞ্চল ব্যাপি ছড়ায়। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের রাজ্যে কৃষ্ণচূড়ার মতো এমন উজ্জ্বল রক্তিম বর্ণের ফুল বেশ দুর্লভ বটে। শীতের হিমেল সমীরণে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝড়ে যায়। বসন্তে- গ্রীষ্মে গাছগুলো আবার ভরে উঠে রক্তিম লাল কমলায়। বৈশাখ মাসের প্রচণ্ড গরমে যখন সবাই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখনই কৃষ্ণচূড়ার ডাল থোকা থোকা লাল- কমলাফুলে ভরে ওঠে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। শুধু গ্রীষ্মেই নয়, বর্ষায়ও কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে এই ফুল অপূর্ব মোহনীয় রূপে শোভা পায়। কৃষ্ণচূড়া ফুলে মুগ্ধ সৌন্দর্য পিপাসু, পথচারীসহ প্রমিক প্রেমিকারা। সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিয়ে ফুলে ফুলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে গাছগুলো।

মুগ্ধতা ছড়ানো ফুল গুলো যেন লাল রঙের আলপনায় সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতিকে। সেই সাথে গ্রীস্মের এ খর রুদ্র তাপে কৃষ্ণচূড়ার লাল চাঁদোয়ার যেন ঝালর বিছিয়েছে গ্রামের পথ প্রান্তরে। বিশুদ্ধ অক্সিজেনের পাশাপাশি এসব গাছ দিচ্ছে ক্লান্ত দেহে ছায়া আর মনে প্রশান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এই আগুন ঝরা দিনে যেন লাল বেনারসি পড়া নববধূর সাজে কারো অপেক্ষায় আছে কৃষ্ণচূড়া। কিন্তু প্রকৃতির মাঝে এ বিচিত্র জাতের সৌন্দর্য মেলে ধরা বৃক্ষটি উজাড়ের মিছিলে নীরবে নিভূতে লোকচক্ষুর অগোচরে বিলুপ্তির পথে।

যেসব গাছ এখনও কোন মতে আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো নাগরিক জীবনও কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও অতি লোভ আর নগর পরিকল্পকদের ভুলে হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রবীণরা জানান, শেষ বয়সে এসেও আকাশে লাল গালিচা বিছানো এ বৃক্ষ আমাদের মন রাঙিয়ে তোলে । গ্রামীণ মেঠো পথের ধূলা-বালির এই গ্রীষ্মের খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো। কৃষ্ণচূড়া নিয়েও রয়েছে কত গান ও কবিতা।

আশা ছিল, ভালোবাসা ছিল। আজ আশা নেই, ভালোবাসা নেই। এই সেই কৃষ্ণচূড়া – যার তলে দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখে কথা যেত হারিয়ে। কিশোর কুমারের সেই বিখ্যাত গান আজো অনেকের হৃদয়ে দোল দিয়ে যায়।

Please Share This Post in Your Social Media


প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া সেজেছে অপরুপ রক্তিম সাজে

Update Time : ০৯:২০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২১

 

মশিয়ার রহমান:

কৃষ্ণচূড়া “বৃক্ষ” জাতীয় উদ্ভিদ। যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia) . কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে।

সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত। কৃষ্ণচূড়া উদ্ভিদ উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১২ মিটার হলেও শাখা-পল্লবে এটি বেশ অঞ্চল ব্যাপি ছড়ায়। শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে গেলেও, নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। কৃষ্ণচূড়ার জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে।

কৃষ্ণচূড়া ফুলের রাজ্যে কৃষ্ণচূড়ার মতো এমন উজ্জ্বল রক্তিম বর্ণের ফুল বেশ দুর্লভ বটে। শীতের হিমেল সমীরণে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝড়ে যায়। বসন্তে- গ্রীষ্মে গাছগুলো আবার ভরে উঠে রক্তিম লাল কমলায়। বৈশাখ মাসের প্রচণ্ড গরমে যখন সবাই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখনই কৃষ্ণচূড়ার ডাল থোকা থোকা লাল- কমলাফুলে ভরে ওঠে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। শুধু গ্রীষ্মেই নয়, বর্ষায়ও কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে এই ফুল অপূর্ব মোহনীয় রূপে শোভা পায়। কৃষ্ণচূড়া ফুলে মুগ্ধ সৌন্দর্য পিপাসু, পথচারীসহ প্রমিক প্রেমিকারা। সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিয়ে ফুলে ফুলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে গাছগুলো।

মুগ্ধতা ছড়ানো ফুল গুলো যেন লাল রঙের আলপনায় সাজিয়ে রেখেছে প্রকৃতিকে। সেই সাথে গ্রীস্মের এ খর রুদ্র তাপে কৃষ্ণচূড়ার লাল চাঁদোয়ার যেন ঝালর বিছিয়েছে গ্রামের পথ প্রান্তরে। বিশুদ্ধ অক্সিজেনের পাশাপাশি এসব গাছ দিচ্ছে ক্লান্ত দেহে ছায়া আর মনে প্রশান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এই আগুন ঝরা দিনে যেন লাল বেনারসি পড়া নববধূর সাজে কারো অপেক্ষায় আছে কৃষ্ণচূড়া। কিন্তু প্রকৃতির মাঝে এ বিচিত্র জাতের সৌন্দর্য মেলে ধরা বৃক্ষটি উজাড়ের মিছিলে নীরবে নিভূতে লোকচক্ষুর অগোচরে বিলুপ্তির পথে।

যেসব গাছ এখনও কোন মতে আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেগুলো নাগরিক জীবনও কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা ও অতি লোভ আর নগর পরিকল্পকদের ভুলে হারিয়ে যাচ্ছে।

প্রবীণরা জানান, শেষ বয়সে এসেও আকাশে লাল গালিচা বিছানো এ বৃক্ষ আমাদের মন রাঙিয়ে তোলে । গ্রামীণ মেঠো পথের ধূলা-বালির এই গ্রীষ্মের খরতাপে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়ার গাছগুলো। কৃষ্ণচূড়া নিয়েও রয়েছে কত গান ও কবিতা।

আশা ছিল, ভালোবাসা ছিল। আজ আশা নেই, ভালোবাসা নেই। এই সেই কৃষ্ণচূড়া – যার তলে দাঁড়িয়ে হাতে হাত রেখে কথা যেত হারিয়ে। কিশোর কুমারের সেই বিখ্যাত গান আজো অনেকের হৃদয়ে দোল দিয়ে যায়।