নিউইয়র্কে হচ্ছে না ড. ইউনূস-মোদির বৈঠক

  • Update Time : ১১:৩৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 28

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে এই সাক্ষাৎ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা ছিল। তবে এ নিয়ে হতাশাজনক খবর প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস, লাইভ মিন্টসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

বিষয়টির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ড. ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। ইতোমধ্যে সরকারের প্রায় দেড় মাস কেটে গেছে। এই সময়ে পশ্চিমা বিশ্বসহ বেশিরভাগ দেশ ড. ইউনূসের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করলেও স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরতে পারছে না প্রতিবেশী দেশ ভারত। বাংলাদেশ নিয়ে একটি অস্বস্তি ও শঙ্কা কাজ করছে দিল্লির। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় তাদের ভাষায় ‘ইসলামপন্থী ও উগ্র ডানপন্থী শক্তি’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় ভুগছে প্রতিবেশী দেশটি।

এমন অবস্থার মধ্যে জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। তবে ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। এমন অবস্থার মধ্যে ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বৈঠক না হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে তা দূর করতে সাহায্য করবে এই আশায় ঢাকা এই বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহী। তারা বলেছেন, এ ধরনের বৈঠক ভারতের এজেন্ডার অংশ নয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে মোদির তিন দিনের সফর ব্যস্ত সময়সূচিতে কাটবে।

আগামী ২১ সেপ্টেম্বর তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন মোদি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতার পাশাপাশি চতুর্দেশীয় জোট ‘কোয়াড’-এর শীর্ষবৈঠক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়দের সভায় যোগ দেবেন বলে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ভারতীয় এক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে মোদি কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের সঙ্গে কোনো বৈঠক শিডিউলে নেই।’

ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আপাতত বৈঠক না করার বিষয়ে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এখন যদি ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদিকে সরাসরি বৈঠক করতে হয় তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপারেও আলোচনা করতে হবে। আর মোদি এখন হাসিনাকে নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। কারণ আলোচনা হলে সেখানে অবশ্যই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি উঠবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে কথা বললে ভারতকে এমন কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেটি তারা এখন আলোচনায় রাখতে চাইবে না।’

Please Share This Post in Your Social Media


নিউইয়র্কে হচ্ছে না ড. ইউনূস-মোদির বৈঠক

Update Time : ১১:৩৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে এই সাক্ষাৎ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা ছিল। তবে এ নিয়ে হতাশাজনক খবর প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস, লাইভ মিন্টসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

বিষয়টির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ড. ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। ইতোমধ্যে সরকারের প্রায় দেড় মাস কেটে গেছে। এই সময়ে পশ্চিমা বিশ্বসহ বেশিরভাগ দেশ ড. ইউনূসের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করলেও স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরতে পারছে না প্রতিবেশী দেশ ভারত। বাংলাদেশ নিয়ে একটি অস্বস্তি ও শঙ্কা কাজ করছে দিল্লির। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় তাদের ভাষায় ‘ইসলামপন্থী ও উগ্র ডানপন্থী শক্তি’ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে এমন আশঙ্কায় ভুগছে প্রতিবেশী দেশটি।

এমন অবস্থার মধ্যে জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। তবে ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। এমন অবস্থার মধ্যে ভারতের সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বৈঠক না হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতের সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে তা দূর করতে সাহায্য করবে এই আশায় ঢাকা এই বৈঠকের বিষয়ে আগ্রহী। তারা বলেছেন, এ ধরনের বৈঠক ভারতের এজেন্ডার অংশ নয়। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে মোদির তিন দিনের সফর ব্যস্ত সময়সূচিতে কাটবে।

আগামী ২১ সেপ্টেম্বর তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন মোদি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতার পাশাপাশি চতুর্দেশীয় জোট ‘কোয়াড’-এর শীর্ষবৈঠক এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও প্রবাসী ভারতীয়দের সভায় যোগ দেবেন বলে দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

ভারতীয় এক কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছেন, ‘নিউইয়র্কে সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে মোদি কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের সঙ্গে কোনো বৈঠক শিডিউলে নেই।’

ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আপাতত বৈঠক না করার বিষয়ে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এখন যদি ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদিকে সরাসরি বৈঠক করতে হয় তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপারেও আলোচনা করতে হবে। আর মোদি এখন হাসিনাকে নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। কারণ আলোচনা হলে সেখানে অবশ্যই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি উঠবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে কথা বললে ভারতকে এমন কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেটি তারা এখন আলোচনায় রাখতে চাইবে না।’