টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী ডলির মামলা

  • Update Time : ০৩:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২
  • / 197

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজধানীর শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদি হয়ে শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় এ মামলা করেন। এ মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি।

শাহজাহানপুর থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-১৮। অভিযোগে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি বলেও জানান তিনি।

মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনে বাটার দোকানের সামনে পৌঁছা মাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তার স্বামীকে লক্ষ্য করে হামলা করে। তারা আমার স্বামী জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালায়।

এদিকে ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করেছেন। এছাড়া ইতিমধ্যে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছেন। এঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং রিকসা আরোহী সামিয়া আফনান প্রীতি (২২) নামে এক কলেজ ছাত্রী নিহত এবং গুলিতে আহত হন টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না (৩২)। তাকে উদ্ধার করে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ তিন জনকে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হলে রাত পৌনে ১১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুক্রবার ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারি ইনচার্জ (এএসআই) মো, আব্দুল খান গুলিতে দু’জন মারা যাবার বিষয়টি বাসসকে নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসি, পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ডলি তার স্ত্রী। এছাড়া নিহত রিকশা আরোহী সামিয়া আফনান প্রীতি বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অনার্সের ছাত্রী বলে জানা গেছে।

জাহিদুল ইসলাম টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মতিঝিল এজিবি কলোনি থেকে গাড়িতে করে বাগিচার বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে শাজাহানপুর আমতলা মসজিদ এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ দুর্বৃত্তরা তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এই গুলিতে গাড়ির ভেতর থাকা তারা দু’জন (টিপু ও মুন্না) ও রিকসা আরোহী ছাত্রী প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা তাদের তিন জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফনান প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিতে আহত মুন্নাকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, নিহত কলেজ ছাত্রী প্রীতির বান্ধবী সুমাইয়া জানান, প্রীতির বাসা শান্তিবাগ মগা হাজীর গলিতে। সুমাইয়ার বাসা তিলপাপাড়া। রাতে তারা দু’জন মিলে বাহিরে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে সুমাইয়া তাকে শাহজাহানপুরের রেলগেট থেকে রিসিভ করে তিলপাড়ায় তার বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। রিকশা যোগে যাওয়ার সময় হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান। কে বা কারা গুলি করেছে তা বলতে পারেননি তিনি।

শাহজানপুর থানা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা কাঁচাবাজার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তার বহনকারী গাড়িটি শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশ দিয়ে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী প্রীতি। তিনিও দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে আহত হন। এঘটনায় তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্বার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

নিহত শিক্ষার্থী প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, “আমার মেয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় রিকশায় করে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার শরীরে লাগে। সে রিকশায়ই লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।” তাদের বাসা শাহজাহানপুরের শান্তিবাগ এলাকায় বলে জানান তিনি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


টিপু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী ডলির মামলা

Update Time : ০৩:৫০:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজধানীর শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তের গুলিতে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদি হয়ে শুক্রবার সকালে শাহজাহানপুর থানায় এ মামলা করেন। এ মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি।

শাহজাহানপুর থানার ওসি মনির হোসেন মোল্লা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম টিপুর স্ত্রী সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-১৮। অভিযোগে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি বলেও জানান তিনি।

মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনে বাটার দোকানের সামনে পৌঁছা মাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা তার স্বামীকে লক্ষ্য করে হামলা করে। তারা আমার স্বামী জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে গুলি চালায়।

এদিকে ঘটনাস্থলে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজ করেছেন। এছাড়া ইতিমধ্যে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছেন। এঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং রিকসা আরোহী সামিয়া আফনান প্রীতি (২২) নামে এক কলেজ ছাত্রী নিহত এবং গুলিতে আহত হন টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না (৩২)। তাকে উদ্ধার করে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ তিন জনকে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হলে রাত পৌনে ১১টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজ ছাত্রী সামিয়া আফনান প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন।

শুক্রবার ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারি ইনচার্জ (এএসআই) মো, আব্দুল খান গুলিতে দু’জন মারা যাবার বিষয়টি বাসসকে নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসি, পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিহত জাহিদুল ইসলাম মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ডলি তার স্ত্রী। এছাড়া নিহত রিকশা আরোহী সামিয়া আফনান প্রীতি বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অনার্সের ছাত্রী বলে জানা গেছে।

জাহিদুল ইসলাম টিপুর গাড়িচালক মনির হোসেন মুন্না জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মতিঝিল এজিবি কলোনি থেকে গাড়িতে করে বাগিচার বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে শাজাহানপুর আমতলা মসজিদ এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ দুর্বৃত্তরা তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এই গুলিতে গাড়ির ভেতর থাকা তারা দু’জন (টিপু ও মুন্না) ও রিকসা আরোহী ছাত্রী প্রীতি গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা তাদের তিন জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও সামিয়া আফনান প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। গুলিতে আহত মুন্নাকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, নিহত কলেজ ছাত্রী প্রীতির বান্ধবী সুমাইয়া জানান, প্রীতির বাসা শান্তিবাগ মগা হাজীর গলিতে। সুমাইয়ার বাসা তিলপাপাড়া। রাতে তারা দু’জন মিলে বাহিরে ঘুরতে বের হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে সুমাইয়া তাকে শাহজাহানপুরের রেলগেট থেকে রিসিভ করে তিলপাড়ায় তার বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। রিকশা যোগে যাওয়ার সময় হঠাৎ গুলির শব্দ শুনতে পান। কে বা কারা গুলি করেছে তা বলতে পারেননি তিনি।

শাহজানপুর থানা সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু মাইক্রোবাসে করে শাহজাহানপুর আমতলা কাঁচাবাজার হয়ে বাসায় ফিরছিলেন। তার বহনকারী গাড়িটি শাহজাহানপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে জাহিদুল ও তার গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় জাহিদুলের গাড়ির পাশ দিয়ে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী প্রীতি। তিনিও দুর্বৃত্তদের ছোড়া গুলিতে আহত হন। এঘটনায় তিনজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্বার করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ও প্রীতিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

নিহত শিক্ষার্থী প্রীতির বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, “আমার মেয়ে শাহজাহানপুর এলাকায় রিকশায় করে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার শরীরে লাগে। সে রিকশায়ই লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।” তাদের বাসা শাহজাহানপুরের শান্তিবাগ এলাকায় বলে জানান তিনি।