অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সম্পূর্ণ নগ্ন করে পুশব্যাক করছে গ্রিস!
- Update Time : ০২:১৮:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ জুলাই ২০২১
- / 191
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আর্ন্তজাতিক আইন, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে অভিবাসীদের পুশব্যাক ও নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে গ্রিস। আশ্রয়প্রার্থীদের উদ্ধারের নামে উল্টো নির্যাতনের মতো বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে দেশটি।
প্রতিনিয়ত গ্রিসের সরকারি বাহিনীর পোশাক পরিহিত ও সাদা পোশাকধারী কর্মকর্তাদের হাতে সহিংসতার শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। এর আগে অভিবাসীদের দুর্ব্যবহার ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে গ্রিসকে একটি ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ’ তদন্ত পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছিল মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এবার সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় ১২ জন শরণার্থীসহ ৪২জন অভিবাসীর একটি দলকে গ্রিস থেকে তুরস্কে পুশব্যাক করেছে গ্রিক কর্তৃপক্ষ। সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় এসব অভিবাসীকে তুরস্কের এদির্ন প্রদেশে পাওয়া গেছে।পরবর্তীতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে তুর্কি পুলিশ। অভিবাসীদের অভিযোগ, এই কাজ গ্রিক কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত করে থাকে।
নগ্ন অবস্থায় উদ্ধার হওয়া এসব অভিবাসীদের ছবিটি হৃদয় বিদারক। ১২ জন অভিবাসীর একটি দল মাটিতে বসে আছে, তাদের মধ্যে কিছু লোক মাথা নিচু করে আছে। আবার কয়েকজন তাদের বুকে হাত রেখে আছে, অনেকে ঘাস ছড়িয়ে দিয়ে তাদের যৌনাঙ্গ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। ছবিটি যখন তোলা হয় তখন প্রায় অন্ধকার এবং তাদের প্রত্যেকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় ছিল।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে স্থানীয় দৈনিক কুমহুরিয়াত জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনকে গ্রিক কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক মারধর করে পুশব্যাক করেছে। এছাড়া তুরস্কের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল এদির্ন থেকে আরো ৩০ জন অনিয়মিত অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদির্ন অঞ্চলের পুলিশের দায়িত্বে থাকা অভিবাসীদের অভিযোগ, গ্রিসে তাদেরকে খাবার ও পানীয় জল থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। তুরস্ক সরকার একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জোর দাবি করেছে, ‘এথেন্স অভিবাসীদের উপর ক্রমাগত তাদের অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
গ্রিসের এমন অমাননবিক অনুশীলনগুলি যদিও হতবাক করার মতো। তবে গ্রিসে এটি তুলনামূলকভাবে সাধারণ ঘটনা। এরকম অনেকগুলি ঘটনা গ্রিসে উপস্থিত মানবাধিকার সংস্থা এবং এনজিওগুলিতে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে ২০২০ সালের মার্চ মাসে, তুর্কি চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডের জন্য কাজ করা চিত্র সাংবাদিক বেলাল খালেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্বাস পরা যুবকদের ছবি পোস্ট করেছিলেন। সেটিও ছিল এর্দিন প্রদেশের উজুনকপ্রি শহরের কাছের ঘটনা। যাদেরকে গ্রিস থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। বেলাল ফরাসি দৈনিক লিবেরাসিও কে বলেন, ছবিতে থাকা অভিবাসীরা বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছিল, যেমন ‘আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, মরোক্কো’।
গণহারে কাপড় খুলে নেয়ার ঘটনা
সীমান্ত সহিংসতা নিরীক্ষণ নেটওয়ার্কের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও অভিবাসীদের এভাবে কাপড় খুলে নেয়ার ঘটনাকে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে রেকর্ড ৪৩% অভিবাসী জোর করে নগ্ন করার ঘটনা বর্ণনা করে সাক্ষ্য দিয়েছে। এছাড়া একই কারাগারে একসাথে ১২০ জন লোককে অবরুদ্ধ করে নগ্ন অবস্থায় রাখার ঘটনাও বর্ণনা করেছেন অভিবাসীরা।
প্রতিবেদনে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “সীমান্তের দক্ষিণে আলেকজান্দ্রপোলিতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তাকে এবং অন্য ব্যক্তিদের সাথে একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ভবনটির ভেতরে ৭০ থেকে ৮০ জন লোক দেখে একটি আটক কেন্দ্রের চেয়েও ভয়াবহ মনে হয়েছিল।
তিনি আরও জানান, সেখানে সিরিয়ান, মিশরীয়, পাকিস্তানি, আলজেরিয়ান এবং মরোক্কান বংশোদ্ভূত পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা সকলেই সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল।
গ্রিসের সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই অভিবাসীদের উলঙ্গ করে অমানবিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলেও অভিযোগ করেন অভিবাসীরা। কেবলমাত্র সীমান্ত অঞ্চলেই পুশব্যাক এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটে সেটি নয়।
তুরস্কে ফিরে আসা কিছু অভিবাসীর বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টি জানায়, গ্রিক ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ৭০০ কিলোমিটার অবধি অনেক অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছেন। কোন প্রকার আইনের আশ্রয় নেওয়ার সু্যোগ না দিয়ে তাদেরকে মূল ভূখন্ডের উত্তরাঞ্চল থেকে ইচ্ছামত আটক করা হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত তাদেরকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো হয়।
এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে ইউরোপীয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে (ফ্রন্টেক্স) গ্রিসে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷