এরদোয়ান: দুই দশক ধরে তুরস্কে যার আধিপত্য

  • Update Time : ১০:৪০:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩
  • / 115

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

আগামী পাঁচ বছরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে চলা তুরস্কের নেতৃত্ব দেবেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

১৪ মে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটের আগে ধারণা করা হয়েছিল, এবারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন এরদোয়ান। ওই ভোটে বিজয়ী না হলেও ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ানই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন-৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।

তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারওলু পেয়েছিলেন ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট। কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গড়ায় এই নির্বাচন।

রোববার এই দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৯৭ শতাংশ ভোট গণনা শেষে এরদোয়ান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারওলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। এরদোয়ানকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

এরদোয়ানের উঠে আসা রক্ষণশীল রাজনৈতিক শিবির থেকে। গত শতকের বিশের দশকে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের হাত ধরে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আধুনিক তুরস্কের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই দেশে অনেকটা বিভাজন সৃষ্টিকারী নেতার ভাবমূর্তি নিয়ে এগোতে থাকেন এরদোয়ান।

পাঁচ বছর আগেই আতাতুর্কের ১৫ বছর দেশ শাসনের মেয়াদ পার করেন তিনি। হয়ে ওঠেন তুরস্কের সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক। এরদোয়ান ২০১৭ সালে প্রথম ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার গণভোট করে প্রেসিডেন্টের হাতে সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে নেন।

১৯৯৪ সালে প্রথম ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন এরদোয়ান। সে সময় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ইস্তাম্বুলে দেখা দেওয়া বিভিন্ন সংকট যেমন বায়ুদূষণ, বর্জ্য সংগ্রহ এবং বিশুদ্ধ পানির ঘাটতির মতো সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হন তিনি।

অবশ্য চার বছরের মাথায় বিতর্কিত একটি কবিতা আবৃত্তির জন্য আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে। এর মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে চার মাসের কারাদণ্ড হয় এরদোয়ানের।

এবার ভোটের আগে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তুরস্কে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা হয়। তা ছাড়া দেশটিতে বহুতল ভবন নির্মাণে ইমারত বিধিমালা না মানায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।

রাজনীতিতে এরদোয়ানের উঠে আসা গত শতকের সত্তরের দশকে ইস্তাম্বুলের বেইওগ্লু অঞ্চল থেকে। তার শৈশব কেটেছে শ্রমজীবী মানুষ অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের কাসিমপাসা এলাকায়। ১৯৭৬ সালে এরদোয়ান প্রথম ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির যুব শাখার বেইওগ্লু অঞ্চলের প্রধান নির্বাচিত হন।

ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির প্রধান ছিলেন নাজিমুদ্দিন এরবাকান। তিনি পরে ১৯৯৬–৯৭ মেয়াদে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নাজিমুদ্দিন এরবাকানকে এরদোয়ানের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

এ কে পার্টির শাসনের প্রথম দশকে তুরস্কে গণতান্ত্রিক সংস্কার ঘটে। তা করতে হয়েছিল দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া আকাঙ্ক্ষা থেকে। এ সময় দেশে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব কমতে থাকা এবং নারী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করার জন্য দেশ-বিদেশে উদারপন্থীদের প্রশংসা পান এরদোয়ান।

তবে পরের এক দশকে বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠায় এরদোয়ানের সমালোচনা হয়। অনেকের মতে, এরদোয়ান তুরস্কে বিভাজন বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে ১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এবং ২০১৬ সালের সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পর এটা বেশি ঘটেছে।

ওই সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার সময় অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন এরদোয়ান। এরপর তার সরকার তুরস্কে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে ঢোকায় এবং বহু মানুষকে চাকরিচ্যুত করে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


এরদোয়ান: দুই দশক ধরে তুরস্কে যার আধিপত্য

Update Time : ১০:৪০:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ মে ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

আগামী পাঁচ বছরও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে চলা তুরস্কের নেতৃত্ব দেবেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

১৪ মে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফা ভোটের আগে ধারণা করা হয়েছিল, এবারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন এরদোয়ান। ওই ভোটে বিজয়ী না হলেও ৬৯ বছর বয়সী এরদোয়ানই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন-৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।

তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারওলু পেয়েছিলেন ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ ভোট। কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় গড়ায় এই নির্বাচন।

রোববার এই দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৯৭ শতাংশ ভোট গণনা শেষে এরদোয়ান পেয়েছেন ৫২ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারওলু পেয়েছেন ৪৭ দশমিক ৯ শতাংশ ভোট। এরদোয়ানকে নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

এরদোয়ানের উঠে আসা রক্ষণশীল রাজনৈতিক শিবির থেকে। গত শতকের বিশের দশকে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের হাত ধরে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আধুনিক তুরস্কের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেই দেশে অনেকটা বিভাজন সৃষ্টিকারী নেতার ভাবমূর্তি নিয়ে এগোতে থাকেন এরদোয়ান।

পাঁচ বছর আগেই আতাতুর্কের ১৫ বছর দেশ শাসনের মেয়াদ পার করেন তিনি। হয়ে ওঠেন তুরস্কের সবচেয়ে বেশি সময়ের শাসক। এরদোয়ান ২০১৭ সালে প্রথম ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার গণভোট করে প্রেসিডেন্টের হাতে সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে নেন।

১৯৯৪ সালে প্রথম ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন এরদোয়ান। সে সময় দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ইস্তাম্বুলে দেখা দেওয়া বিভিন্ন সংকট যেমন বায়ুদূষণ, বর্জ্য সংগ্রহ এবং বিশুদ্ধ পানির ঘাটতির মতো সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হন তিনি।

অবশ্য চার বছরের মাথায় বিতর্কিত একটি কবিতা আবৃত্তির জন্য আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে। এর মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে চার মাসের কারাদণ্ড হয় এরদোয়ানের।

এবার ভোটের আগে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তুরস্কে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা হয়। তা ছাড়া দেশটিতে বহুতল ভবন নির্মাণে ইমারত বিধিমালা না মানায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।

রাজনীতিতে এরদোয়ানের উঠে আসা গত শতকের সত্তরের দশকে ইস্তাম্বুলের বেইওগ্লু অঞ্চল থেকে। তার শৈশব কেটেছে শ্রমজীবী মানুষ অধ্যুষিত ওই অঞ্চলের কাসিমপাসা এলাকায়। ১৯৭৬ সালে এরদোয়ান প্রথম ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির যুব শাখার বেইওগ্লু অঞ্চলের প্রধান নির্বাচিত হন।

ন্যাশনাল স্যালভেশন পার্টির প্রধান ছিলেন নাজিমুদ্দিন এরবাকান। তিনি পরে ১৯৯৬–৯৭ মেয়াদে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নাজিমুদ্দিন এরবাকানকে এরদোয়ানের রাজনৈতিক গুরু হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

এ কে পার্টির শাসনের প্রথম দশকে তুরস্কে গণতান্ত্রিক সংস্কার ঘটে। তা করতে হয়েছিল দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া আকাঙ্ক্ষা থেকে। এ সময় দেশে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব কমতে থাকা এবং নারী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষায় কাজ করার জন্য দেশ-বিদেশে উদারপন্থীদের প্রশংসা পান এরদোয়ান।

তবে পরের এক দশকে বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠায় এরদোয়ানের সমালোচনা হয়। অনেকের মতে, এরদোয়ান তুরস্কে বিভাজন বাড়িয়েছেন। বিশেষ করে ১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ এবং ২০১৬ সালের সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার পর এটা বেশি ঘটেছে।

ওই সেনা অভ্যুত্থানচেষ্টার সময় অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন এরদোয়ান। এরপর তার সরকার তুরস্কে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে ঢোকায় এবং বহু মানুষকে চাকরিচ্যুত করে।