“দেশকে স্বনির্ভর করতে প্রয়োজন সুশিক্ষা”

  • আপডেটের সময়: ০৬:২৭:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • / 420

নোট, গাইড, কোচিং ও প্রাইভেট নির্ভর প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতিতে আমরা কতটুকু সুশিক্ষা অর্জন করতে পারছি তা আমার বোধগম্য নয়! একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শুধু দিক নির্দেশনা দিবেন, আর সেই দিক নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা আপন চেষ্টায় শিক্ষা গ্রহণ করবে এমনটাই কাম্য। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যথাযথ জ্ঞানার্জন করছি? আমি বলবো ‘না’। কারণ শিক্ষার যথাযথ অর্থ আমরা বেশির ভাগই বুঝি না, আমরা যা বুঝি- ‘নির্ধারিত বইয়ের সিলেবাস অনুযায়ী পড়া মুখস্থ করা এবং শিক্ষকের কাছ থেকে সর্টকাট পদ্ধতিতে সহজে জেনে নেওয়া যেন পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া যায়।’ এখন শিক্ষার্থীরা নিজে কোন চেষ্টা ছাড়াই কতিপয় শিক্ষকের মস্তিষ্কে সংরক্ষিত জানা বা জ্ঞান সরাসরি তাদের মস্তিষ্কে ঢুকাচ্ছে, এতে ভালো ফলাফলও হচ্ছে, কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে সেই শিক্ষাকে কতটুকু কাজে লাগাতে পারছে? তা সত্যিকারার্থে ‘সুশিক্ষা’ কিনা এই ব্যাপারে আমরা কতটুকু ভাবছি? দেখা যায় এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ৯০% প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় অর্থাৎ ফেল করে। অন্যদিকে অধিকাংশ শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না করে অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের ক্ষুধা রেখে প্রাইভেট বা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করেন। এটা চরম অসততা ও দুর্নীতি।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অপপ্রয়োগে শিক্ষার্থীরা রেডিমেইড(প্রস্তুতকৃত) শিক্ষা গ্রহণ করছে কিন্তু সুশিক্ষা গ্রহণ করছে না, এর জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী ক্লাসে না পড়িয়ে বা ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকদের কোচিং ও প্রাইভেট ব্যবসা। এরা এদের নিজ সংরক্ষিত জানা বা জ্ঞানকে শর্টকাট করে খুব সহজেই শিক্ষার্থীদেরকে গলাধঃকরণ করাচ্ছে! শিক্ষার্থী যেখানে বুঝতে পারছে না, সেখানে নিজে চেষ্টা না করে, চেষ্টা করতে করতে বার বার ব্যর্থ না হয়ে, মাথায় জট না পাকিয়ে এবং পাকানো জটকে খোলার চেষ্টা না করেই অর্থের বিনিময়ে সরাসরি নোট, গাইড বা সিটের মাধ্যমে গলাধঃকরণ করছে। ব্যাপারটা হলো শিশু নিজে না চিবিয়ে অন্যজনের চিবানো খাবার সরাসরি শর্টকাটে গলাধঃকরণ করছে। এতে শিশুর পেট ভরবে এবং ত্যাগও করবে অর্থাৎ ফলাফল ঠিকঠাক হতেও পারে কিন্তু চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টার মাধ্যমে যেকোনো খাবার খাওয়ার ব্যবহারিক জানাটা শিশুর হলো না, এতে মস্তিষ্কের জটও খুললো না, এটা ‘সুশিক্ষা’ নয়, অপরদিকে ব্যবহারিক জানাটাই “সুশিক্ষা”, জট খোলানোর চেষ্টাই প্রকৃত জ্ঞানদান।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যতদিন না শিক্ষার্থীগণ এরকম সুশিক্ষা গ্রহণ করবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা সুশিক্ষিত বাংলাদেশি হতে পারবো না, দেশ স্বনির্ভর হবে না। সুশিক্ষার মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে, এই সুশিক্ষার অর্থটা সবাইকে জানান দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে যথাযথ নজর দেওয়া সকল সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।

ট্যাগ :

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন


“দেশকে স্বনির্ভর করতে প্রয়োজন সুশিক্ষা”

আপডেটের সময়: ০৬:২৭:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

নোট, গাইড, কোচিং ও প্রাইভেট নির্ভর প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতিতে আমরা কতটুকু সুশিক্ষা অর্জন করতে পারছি তা আমার বোধগম্য নয়! একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শুধু দিক নির্দেশনা দিবেন, আর সেই দিক নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা আপন চেষ্টায় শিক্ষা গ্রহণ করবে এমনটাই কাম্য। কিন্তু আমরা কি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যথাযথ জ্ঞানার্জন করছি? আমি বলবো ‘না’। কারণ শিক্ষার যথাযথ অর্থ আমরা বেশির ভাগই বুঝি না, আমরা যা বুঝি- ‘নির্ধারিত বইয়ের সিলেবাস অনুযায়ী পড়া মুখস্থ করা এবং শিক্ষকের কাছ থেকে সর্টকাট পদ্ধতিতে সহজে জেনে নেওয়া যেন পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া যায়।’ এখন শিক্ষার্থীরা নিজে কোন চেষ্টা ছাড়াই কতিপয় শিক্ষকের মস্তিষ্কে সংরক্ষিত জানা বা জ্ঞান সরাসরি তাদের মস্তিষ্কে ঢুকাচ্ছে, এতে ভালো ফলাফলও হচ্ছে, কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে সেই শিক্ষাকে কতটুকু কাজে লাগাতে পারছে? তা সত্যিকারার্থে ‘সুশিক্ষা’ কিনা এই ব্যাপারে আমরা কতটুকু ভাবছি? দেখা যায় এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ৯০% প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় অর্থাৎ ফেল করে। অন্যদিকে অধিকাংশ শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না করে অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের ক্ষুধা রেখে প্রাইভেট বা কোচিংয়ে যেতে বাধ্য করেন। এটা চরম অসততা ও দুর্নীতি।

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার অপপ্রয়োগে শিক্ষার্থীরা রেডিমেইড(প্রস্তুতকৃত) শিক্ষা গ্রহণ করছে কিন্তু সুশিক্ষা গ্রহণ করছে না, এর জন্য সবচেয়ে বড় দায়ী ক্লাসে না পড়িয়ে বা ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকদের কোচিং ও প্রাইভেট ব্যবসা। এরা এদের নিজ সংরক্ষিত জানা বা জ্ঞানকে শর্টকাট করে খুব সহজেই শিক্ষার্থীদেরকে গলাধঃকরণ করাচ্ছে! শিক্ষার্থী যেখানে বুঝতে পারছে না, সেখানে নিজে চেষ্টা না করে, চেষ্টা করতে করতে বার বার ব্যর্থ না হয়ে, মাথায় জট না পাকিয়ে এবং পাকানো জটকে খোলার চেষ্টা না করেই অর্থের বিনিময়ে সরাসরি নোট, গাইড বা সিটের মাধ্যমে গলাধঃকরণ করছে। ব্যাপারটা হলো শিশু নিজে না চিবিয়ে অন্যজনের চিবানো খাবার সরাসরি শর্টকাটে গলাধঃকরণ করছে। এতে শিশুর পেট ভরবে এবং ত্যাগও করবে অর্থাৎ ফলাফল ঠিকঠাক হতেও পারে কিন্তু চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টার মাধ্যমে যেকোনো খাবার খাওয়ার ব্যবহারিক জানাটা শিশুর হলো না, এতে মস্তিষ্কের জটও খুললো না, এটা ‘সুশিক্ষা’ নয়, অপরদিকে ব্যবহারিক জানাটাই “সুশিক্ষা”, জট খোলানোর চেষ্টাই প্রকৃত জ্ঞানদান।

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় যতদিন না শিক্ষার্থীগণ এরকম সুশিক্ষা গ্রহণ করবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা সুশিক্ষিত বাংলাদেশি হতে পারবো না, দেশ স্বনির্ভর হবে না। সুশিক্ষার মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে, এই সুশিক্ষার অর্থটা সবাইকে জানান দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে যথাযথ নজর দেওয়া সকল সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষের নৈতিক দায়িত্ব।