সংকটের মাঝেও বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩ শতাংশ

  • Update Time : ০২:২৯:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / 19

ছাত্র-জনতা আন্দোলনে অস্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের অর্থনীতি। ইন্টারনেট বন্ধে ব্যাহত হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে সংকটের মধ্যে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছে দেশে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।

আঙ্কটাডের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ এলেও বাংলাদেশে বছর শেষে মোট বিদেশি বিনিয়োগ থাকার পরিমাণ বা স্থিতি কমে গেছে। ২০২২ সালেও আগের বছরের চেয়ে এফডিআই স্থিতি কমে যায়। এর মানে বাংলাদেশ থেকে গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ যেখানে জিডিপির দেড় শতাংশের কম, সেখানে মালদ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগ ১২ শতাংশের বেশি আর অর্থনৈতিক সংকট পাড়ি দিয়ে শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক বিনিয়োগও ২০ শতাংশের বেশি। যেখানে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা বিদেশি বিনিয়োগে এত এগিয়ে আছে, সেখানে বাংলাদেশ কেন পারছে না এটি বড় প্রশ্ন।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে আগামী ২০২৪-২৫ থেকে ২০২৬-২৭ পর্যন্ত অর্থবছরে ১১০টি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সঞ্চালনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেটে। এসব উদ্যোগের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশে এবং মধ্য মেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তা সত্ত্বেও ২০২৩ সালের হিসাব বলছে, বিদেশি বিনিয়োগ ২০২২ সালের তুলনায় আরও কমেছিল।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছে। আমদানি কমায় পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ কমেছে।

ডলারসংকটের কারণে আমদানিব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও সেই পথ অনুসরণ করে চলেছে। তার সুফলও মিলছে। আমদানিব্যয় কমছেই। আর তাতে বাণিজ্য ঘাটতিতে নিম্নমুখী প্রবণতা নিয়েই শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে পণ্য-বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ৪০ লাখ (৩.০৪ বিলিয়ন) ডলার।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

সংকটের মাঝেও বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে ১৩ শতাংশ

Update Time : ০২:২৯:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

ছাত্র-জনতা আন্দোলনে অস্থবির হয়ে পড়েছিল দেশের অর্থনীতি। ইন্টারনেট বন্ধে ব্যাহত হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে সংকটের মধ্যে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। জুলাই-আগস্ট সময়ে মোট ৬৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছে দেশে। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশে বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ৬০ কোটি ৯০ লাখ ডলার এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।

আঙ্কটাডের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ এলেও বাংলাদেশে বছর শেষে মোট বিদেশি বিনিয়োগ থাকার পরিমাণ বা স্থিতি কমে গেছে। ২০২২ সালেও আগের বছরের চেয়ে এফডিআই স্থিতি কমে যায়। এর মানে বাংলাদেশ থেকে গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ যেখানে জিডিপির দেড় শতাংশের কম, সেখানে মালদ্বীপে বিদেশি বিনিয়োগ ১২ শতাংশের বেশি আর অর্থনৈতিক সংকট পাড়ি দিয়ে শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক বিনিয়োগও ২০ শতাংশের বেশি। যেখানে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা বিদেশি বিনিয়োগে এত এগিয়ে আছে, সেখানে বাংলাদেশ কেন পারছে না এটি বড় প্রশ্ন।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে আগামী ২০২৪-২৫ থেকে ২০২৬-২৭ পর্যন্ত অর্থবছরে ১১০টি সংস্কার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পদ সঞ্চালনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেটে। এসব উদ্যোগের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশে এবং মধ্য মেয়াদে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তা সত্ত্বেও ২০২৩ সালের হিসাব বলছে, বিদেশি বিনিয়োগ ২০২২ সালের তুলনায় আরও কমেছিল।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শুরু হয়েছে। আমদানি কমায় পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ কমেছে।

ডলারসংকটের কারণে আমদানিব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও সেই পথ অনুসরণ করে চলেছে। তার সুফলও মিলছে। আমদানিব্যয় কমছেই। আর তাতে বাণিজ্য ঘাটতিতে নিম্নমুখী প্রবণতা নিয়েই শুরু হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর।

বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ জুলাই-আগস্ট সময়ে পণ্য-বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৯ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই দুই মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩০৪ কোটি ৪০ লাখ (৩.০৪ বিলিয়ন) ডলার।