জঙ্গিবাদের বিস্তারকালে

  • Update Time : ১২:৪১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অগাস্ট ২০২১
  • / 265

দুলাল আচার্য:

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে নব্য জেএমবি। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে আফগান দখল যুদ্ধে তালেবানদের পক্ষে অংশ নিয়েছে বেশকিছু বাংলাদেশি জঙ্গিও। আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়কে জঙ্গিরা নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখতে পারে। বিষয়টিতে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নিরাপদ কৌশল নিতে হবে প্রশাসনকে। জেএমবি বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন যাতে দেশে বা দেশের বাইরে থেকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।

সময়টা ২০০১ থেকে ২০০৬। বাংলাদেশের ইতিহাসে অপরাজনীতির এক দুর্বিষহ অধ্যায়। পাঁচ বছর মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পর ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব নেন বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। লতিফুর রহমানের সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই জামায়াত-বিএনপি জোটকে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণের পরিবেশ তৈরি করে দেয়। সে সময় এই নিরপেক্ষ সরকারের রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট অপশাসন প্রত্যক্ষ করে দেশবাসী। বিশেষ করে ১ অক্টোবরের নির্বাচনের দিন থেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নামে সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর বর্বর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, লুটপাট, দখল এবং চাঁদাবাজির অভয়ারণ্য চলে সারা দেশে। প্রায় দেড় বছর অব্যাহত চলে এই বর্বরতা। তারপর নতুনরূপে আসে জঙ্গি আতঙ্ক।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াল দিন! এক দুঃসহ স্মৃতি!এদিন জঙ্গিদের বোমা হামলায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল বাংলাদেশ। বেলা গড়াতেই সারা দেশ থেকে আসতে থাকে বোমা হামলার খবর। একটি দুটি জেলা নয়, একেবারে ৬৩ জেলায়। ৫৩৪টি স্থানে।

খোদ, রাজধানীর ৩৪টি স্থানে। তাও একযোগে। ইতিহাসের পাতায় লেখা নজিরবিহীন এই ঘটনা আজও আতঙ্কিত করে দেশবাসীকে। এদিন হামলা চালানো হয় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বিভিন্ন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব ও সরকারি-আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। যা দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান ও জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার দৃষ্টান্ত। হামলার স্থানগুলোতে জেএমবির লিফলেটও পাওয়া যায়। লিফলেটগুলোতে বাংলাদেশে ‘আল্লাহর আইন’ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে বক্তব্য লেখা ছিল।

তাতে লেখা ছিল-
“দেশের কর্মরত বিচারকদের প্রতি একটি বিশেষ বার্তা পাঠালাম। দ্রুত দেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে হবে। নতুবা কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে জেএমবি।”

একমাত্র মুন্সীগঞ্জ জেলায় হয়নি বোমা হামলা। ঘটনায় সারা দেশে দু’জন নিহত ও ১০৪ জন আহত হন। এ হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাদের সক্রিয় উপস্থিতি জানান দেয়। ১৭ আগস্ট ঘটনার পর পরই সারা দেশে ১৫৯টি মামলা করা হয়। এরমধ্যে ডিএমপিতে হয়েছে ১৮টি মামলা, সিএমপিতে হয়েছে ৮, আরএমপিতে ৪, কেএমপিতে ৩, বিএমপিতে ১২,এসএমপিতে ১০, ঢাকা রেঞ্জে ২৩, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১, রাজশাহী রেঞ্জেহয়েছে ৭, খুলনা রেঞ্জে ২৩, বরিশাল রেঞ্জে হয়েছে ৭টিমামলা।

সিলেট রেঞ্জে হয়েছে ১৬, রংপুর রেঞ্জে ৮,ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬ ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি। যার মধ্যে ১৪৩টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বাকি ১৬টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়।

এই সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছেই এখন স্পষ্ট নয় এই ঘটনা। তবে ইতিহাসের প্রয়োজনেই ইতিহাসের এই সত্যটুকু বার বার উঠে আসার দরকার। ইতিহাস বলছে, বিএনপি-জামায়াতের শাসন-আমলে (২০০১-২০০৬) মন্ত্রী-এমপিদের মদদে সারা বাংলাদেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জঙ্গিরা।

সে সময় জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী আলমগীর কবির, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা ও শীষ মোহাম্মদসহ বিএনপির অনেক নেতার নাম সামনে চলে আসে। সে সময় বাংলাদেশের উত্তর জনপদে কার্যত সরকারের সমান্তরাল বাংলা ভাইয়ের প্রশাসন চলেছে এক বছর। ওই অঞ্চলে বাংলা ভাইয়ের হাতে চরমপন্থি শায়েস্তা করার নামে ২২ জনকে হত্যা, ১০জনকে গুম এবং কমপক্ষে ৫০০ জনকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার ঘটনাও ঘটে।

রাজশাহীতে বাদশা মিয়া নামে একজনকে গাছে ঝুলিয়ে মারার সংবাদও সে সময় পত্রপত্রিকায় এসেছে।

উল্লেখ্য, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৩১ বছরের সাজা হয়। তাই তরুণ প্রজন্মের জানা দরকার সেদিনের সেই ভয়াল ঘটনাটির ইতিবৃত্ত।

১৭ আগস্টের হামলার কিছুদিন পর আবার শুরু হয় ধারাবাহিক হামলা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের জেলা আদালতে বিচারকাজ চলাকালে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর সিলেটের দ্রুত বিচার আদালতের বিচারককে হত্যা করতে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। ১৫ নভেম্বর ঝালকাঠি শহরের অফিসার্স পাড়ায় জাজেস কোয়ার্টারের সামনে বিচারকদের বহনকারী মাইক্রোবাসে শক্তিশালী বোমা হামলা করে ঝালকাঠি জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহমেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাঁড়েকে হত্যা করে।

একই বছরের ৩০ নভেম্বর গাজীপুর ও চট্টগ্রাম আদালতে পৌনে একঘণ্টার ব্যবধানে আত্মঘাতী জেএমবি সদস্যরা গায়ে বোমা বেঁধে হামলা চালায়। এতে দুই জঙ্গি সদস্যসহ ৯জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলা আদালতে চায়ের ফ্লাস্কে করে বোমা হামলা করে ৭জনকে হত্যা ও অর্ধশত ব্যক্তিকে আহত করে জেএমবি।

জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রেপ্তার জঙ্গিদের জবানবন্দিতে পাওয়া যায়, ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি। শুরুতে তারা বাংলাদেশকে ছয়টি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দুই বছর দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে কর্মী সংগ্রহ করে সংগঠনটি। এরপর তারা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। ২০০০ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও ক্যাম্পে জেএমবির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এদের প্রথম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে ২০০১ সালে। ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর তারা সাতক্ষীরার একটি সিনেমা হলে বোমা হামলা করে। পরে দাওয়াত ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করে।

এভাবেই সারা দেশে তাদের কর্মী সংগ্রহ শুরু হয়। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় তাদের কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ২০০২ সালের পহেলা মে নাটোরের একটি সিনেমা হলে, একই বছরের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা করা হয়। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার এসব হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দেয় এবং দায় চাপায় তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও প্রগতিশীল কজন ব্যক্তির ওপর। অবশ্য জঙ্গিদের পরবর্তী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাসহ একটি বিশেষ ভবন পৃষ্ঠপোষকতা করত বলে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশে বোমা হামলার ভয়ংকর ঘটনা শুরু হয়েছিল তারও আগে থেকে। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর সমাবেশে এক বোমা হামলায় নিহত হন ১০ জন। একই বছর ৮ অক্টোবর খুলনার নিরালা এলাকায় অবস্থিত কাদিয়ানিদের মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে ৮জন নিহত হন। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলায় ৬জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন। ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১১ জন। ৩ জুন বোমা হামলায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় সকালের প্রার্থনার সময় নিহত হন ১০ জন; আহত ১৫ জন। সিলেটে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া নিহত হন গ্রেনেড হামলায়।

২০০৪ সালের ২১ মে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার পরিদর্শনে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত হন সে সময়ের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। অথচ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ করলে জঙ্গি উত্থান সম্ভব হতো না। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে।

সিরিজ বোমা হামলার মূল আসামিদের সাজা হলেও তাদের অনুসারী ও মদদদাতারা নানা নামে এখনও সক্রিয়। ‘নব্য জেএমবি’ নামে তারা এখন মাঠে। ২০১৬ সালের হলি আর্টিজানের হত্যাযজ্ঞ তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। প্রশাসনের সতর্কতার মধ্যেও থেমে নেই জঙ্গিদের গোপনে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ মার্চ ২০০৭ সালে যে শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করে তাদের সবারই কোনো না কোনোভাবে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইও অতীতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল।

গ্রেপ্তার কয়েকজন জেএমবি সদস্য অতীতে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। তাছাড়া আল-কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়বা, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্টসহ পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক বহুদিনের। এখনও জঙ্গিরা নানাভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। একথা সত্য যে, বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই জেএমবির। তবে তারা বসে নেই। তারা এখন সাইবার স্পেসকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। কোভিড আসার পর মানুষ ঘরে বেশি থেকেছে, ফলে জঙ্গিরা অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা বেশি চালিয়েছে।

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে নব্য জেএমবি। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে আফগান দখল যুদ্ধে তালেবানদের পক্ষে অংশ নিয়েছে বেশকিছু বাংলাদেশি জঙ্গিও। আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়কে জঙ্গিরা নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখতে পারে। বিষয়টিতে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নিরাপদ কৌশল নিতে হবে প্রশাসনকে। জেএমবি বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন যাতে দেশে বা দেশের বাইরে থেকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ সুযোগ পেলে যেকোনো সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে তারা।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জেএমবির আগের মতো বড় ধরনের কোনো হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই। এই দাবি আপাত সত্য হলেও মনে রাখতে হবে, ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৪০টি হামলা পরিচালনা করে সংগঠনটি। নানা সময়ে তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, সদস্য ও সমর্থক সংগ্রহের কথা শোনা গেছে। সুতরাং তারা থেমে নেই। জঙ্গিরা যাতে আগের মতো শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি। সাইবার জগতেও তাদের গতিবিধিতে নিয়মিত নজরদারি করা দরকার। এই সত্যটি সামনে রেখেই আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


জঙ্গিবাদের বিস্তারকালে

Update Time : ১২:৪১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অগাস্ট ২০২১

দুলাল আচার্য:

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে নব্য জেএমবি। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে আফগান দখল যুদ্ধে তালেবানদের পক্ষে অংশ নিয়েছে বেশকিছু বাংলাদেশি জঙ্গিও। আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়কে জঙ্গিরা নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখতে পারে। বিষয়টিতে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নিরাপদ কৌশল নিতে হবে প্রশাসনকে। জেএমবি বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন যাতে দেশে বা দেশের বাইরে থেকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।

সময়টা ২০০১ থেকে ২০০৬। বাংলাদেশের ইতিহাসে অপরাজনীতির এক দুর্বিষহ অধ্যায়। পাঁচ বছর মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পর ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। দায়িত্ব নেন বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। লতিফুর রহমানের সরকার দায়িত্ব পাওয়ার পর পরই জামায়াত-বিএনপি জোটকে রাজনীতির মাঠ নিয়ন্ত্রণের পরিবেশ তৈরি করে দেয়। সে সময় এই নিরপেক্ষ সরকারের রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট অপশাসন প্রত্যক্ষ করে দেশবাসী। বিশেষ করে ১ অক্টোবরের নির্বাচনের দিন থেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নামে সংখ্যালঘু নির্যাতন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর বর্বর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, লুটপাট, দখল এবং চাঁদাবাজির অভয়ারণ্য চলে সারা দেশে। প্রায় দেড় বছর অব্যাহত চলে এই বর্বরতা। তারপর নতুনরূপে আসে জঙ্গি আতঙ্ক।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াল দিন! এক দুঃসহ স্মৃতি!এদিন জঙ্গিদের বোমা হামলায় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল বাংলাদেশ। বেলা গড়াতেই সারা দেশ থেকে আসতে থাকে বোমা হামলার খবর। একটি দুটি জেলা নয়, একেবারে ৬৩ জেলায়। ৫৩৪টি স্থানে।

খোদ, রাজধানীর ৩৪টি স্থানে। তাও একযোগে। ইতিহাসের পাতায় লেখা নজিরবিহীন এই ঘটনা আজও আতঙ্কিত করে দেশবাসীকে। এদিন হামলা চালানো হয় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বিভিন্ন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব ও সরকারি-আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। যা দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান ও জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার দৃষ্টান্ত। হামলার স্থানগুলোতে জেএমবির লিফলেটও পাওয়া যায়। লিফলেটগুলোতে বাংলাদেশে ‘আল্লাহর আইন’ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে বক্তব্য লেখা ছিল।

তাতে লেখা ছিল-
“দেশের কর্মরত বিচারকদের প্রতি একটি বিশেষ বার্তা পাঠালাম। দ্রুত দেশে ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে হবে। নতুবা কঠিন পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে জেএমবি।”

একমাত্র মুন্সীগঞ্জ জেলায় হয়নি বোমা হামলা। ঘটনায় সারা দেশে দু’জন নিহত ও ১০৪ জন আহত হন। এ হামলার মধ্য দিয়ে জঙ্গি সংগঠন জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) তাদের সক্রিয় উপস্থিতি জানান দেয়। ১৭ আগস্ট ঘটনার পর পরই সারা দেশে ১৫৯টি মামলা করা হয়। এরমধ্যে ডিএমপিতে হয়েছে ১৮টি মামলা, সিএমপিতে হয়েছে ৮, আরএমপিতে ৪, কেএমপিতে ৩, বিএমপিতে ১২,এসএমপিতে ১০, ঢাকা রেঞ্জে ২৩, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১, রাজশাহী রেঞ্জেহয়েছে ৭, খুলনা রেঞ্জে ২৩, বরিশাল রেঞ্জে হয়েছে ৭টিমামলা।

সিলেট রেঞ্জে হয়েছে ১৬, রংপুর রেঞ্জে ৮,ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬ ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি। যার মধ্যে ১৪৩টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বাকি ১৬টি মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়।

এই সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর পূর্ণ হলো আজ। বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছেই এখন স্পষ্ট নয় এই ঘটনা। তবে ইতিহাসের প্রয়োজনেই ইতিহাসের এই সত্যটুকু বার বার উঠে আসার দরকার। ইতিহাস বলছে, বিএনপি-জামায়াতের শাসন-আমলে (২০০১-২০০৬) মন্ত্রী-এমপিদের মদদে সারা বাংলাদেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জঙ্গিরা।

সে সময় জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী আলমগীর কবির, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফা ও শীষ মোহাম্মদসহ বিএনপির অনেক নেতার নাম সামনে চলে আসে। সে সময় বাংলাদেশের উত্তর জনপদে কার্যত সরকারের সমান্তরাল বাংলা ভাইয়ের প্রশাসন চলেছে এক বছর। ওই অঞ্চলে বাংলা ভাইয়ের হাতে চরমপন্থি শায়েস্তা করার নামে ২২ জনকে হত্যা, ১০জনকে গুম এবং কমপক্ষে ৫০০ জনকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়ার ঘটনাও ঘটে।

রাজশাহীতে বাদশা মিয়া নামে একজনকে গাছে ঝুলিয়ে মারার সংবাদও সে সময় পত্রপত্রিকায় এসেছে।

উল্লেখ্য, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৩১ বছরের সাজা হয়। তাই তরুণ প্রজন্মের জানা দরকার সেদিনের সেই ভয়াল ঘটনাটির ইতিবৃত্ত।

১৭ আগস্টের হামলার কিছুদিন পর আবার শুরু হয় ধারাবাহিক হামলা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালের ৩ অক্টোবর চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও চট্টগ্রামের জেলা আদালতে বিচারকাজ চলাকালে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর সিলেটের দ্রুত বিচার আদালতের বিচারককে হত্যা করতে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। ১৫ নভেম্বর ঝালকাঠি শহরের অফিসার্স পাড়ায় জাজেস কোয়ার্টারের সামনে বিচারকদের বহনকারী মাইক্রোবাসে শক্তিশালী বোমা হামলা করে ঝালকাঠি জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সোহেল আহমেদ চৌধুরী ও জগন্নাথ পাঁড়েকে হত্যা করে।

একই বছরের ৩০ নভেম্বর গাজীপুর ও চট্টগ্রাম আদালতে পৌনে একঘণ্টার ব্যবধানে আত্মঘাতী জেএমবি সদস্যরা গায়ে বোমা বেঁধে হামলা চালায়। এতে দুই জঙ্গি সদস্যসহ ৯জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলা আদালতে চায়ের ফ্লাস্কে করে বোমা হামলা করে ৭জনকে হত্যা ও অর্ধশত ব্যক্তিকে আহত করে জেএমবি।

জেএমবির বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রেপ্তার জঙ্গিদের জবানবন্দিতে পাওয়া যায়, ১৯৯৮ সালে গঠিত হয় জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি। শুরুতে তারা বাংলাদেশকে ছয়টি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দুই বছর দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে কর্মী সংগ্রহ করে সংগঠনটি। এরপর তারা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। ২০০০ সালে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও ক্যাম্পে জেএমবির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এদের প্রথম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে ২০০১ সালে। ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর তারা সাতক্ষীরার একটি সিনেমা হলে বোমা হামলা করে। পরে দাওয়াত ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা শুরু করে।

এভাবেই সারা দেশে তাদের কর্মী সংগ্রহ শুরু হয়। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় তাদের কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ২০০২ সালের পহেলা মে নাটোরের একটি সিনেমা হলে, একই বছরের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা করা হয়। তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার এসব হামলার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ নাকচ করে দেয় এবং দায় চাপায় তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও প্রগতিশীল কজন ব্যক্তির ওপর। অবশ্য জঙ্গিদের পরবর্তী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাসহ একটি বিশেষ ভবন পৃষ্ঠপোষকতা করত বলে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশে বোমা হামলার ভয়ংকর ঘটনা শুরু হয়েছিল তারও আগে থেকে। ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরের টাউন হল মাঠে উদীচীর সমাবেশে এক বোমা হামলায় নিহত হন ১০ জন। একই বছর ৮ অক্টোবর খুলনার নিরালা এলাকায় অবস্থিত কাদিয়ানিদের মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে ৮জন নিহত হন। ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলায় ৬জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হন। ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১১ জন। ৩ জুন বোমা হামলায় গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর গির্জায় সকালের প্রার্থনার সময় নিহত হন ১০ জন; আহত ১৫ জন। সিলেটে একাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া নিহত হন গ্রেনেড হামলায়।

২০০৪ সালের ২১ মে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার পরিদর্শনে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত হন সে সময়ের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। অথচ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ করলে জঙ্গি উত্থান সম্ভব হতো না। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ করে।

সিরিজ বোমা হামলার মূল আসামিদের সাজা হলেও তাদের অনুসারী ও মদদদাতারা নানা নামে এখনও সক্রিয়। ‘নব্য জেএমবি’ নামে তারা এখন মাঠে। ২০১৬ সালের হলি আর্টিজানের হত্যাযজ্ঞ তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। প্রশাসনের সতর্কতার মধ্যেও থেমে নেই জঙ্গিদের গোপনে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ মার্চ ২০০৭ সালে যে শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করে তাদের সবারই কোনো না কোনোভাবে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইও অতীতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল।

গ্রেপ্তার কয়েকজন জেএমবি সদস্য অতীতে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। তাছাড়া আল-কায়েদা, লস্কর-ই-তৈয়বা, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্টসহ পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সম্পর্ক বহুদিনের। এখনও জঙ্গিরা নানাভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। একথা সত্য যে, বড় ধরনের হামলার সক্ষমতা নেই জেএমবির। তবে তারা বসে নেই। তারা এখন সাইবার স্পেসকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। কোভিড আসার পর মানুষ ঘরে বেশি থেকেছে, ফলে জঙ্গিরা অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা বেশি চালিয়েছে।

আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করতে পারে নব্য জেএমবি। জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে আফগান দখল যুদ্ধে তালেবানদের পক্ষে অংশ নিয়েছে বেশকিছু বাংলাদেশি জঙ্গিও। আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়কে জঙ্গিরা নিজেদের বিজয় হিসেবে দেখতে পারে। বিষয়টিতে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নিরাপদ কৌশল নিতে হবে প্রশাসনকে। জেএমবি বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠন যাতে দেশে বা দেশের বাইরে থেকে কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ সুযোগ পেলে যেকোনো সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে তারা।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জেএমবির আগের মতো বড় ধরনের কোনো হামলা চালানোর সক্ষমতা নেই। এই দাবি আপাত সত্য হলেও মনে রাখতে হবে, ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৪০টি হামলা পরিচালনা করে সংগঠনটি। নানা সময়ে তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, সদস্য ও সমর্থক সংগ্রহের কথা শোনা গেছে। সুতরাং তারা থেমে নেই। জঙ্গিরা যাতে আগের মতো শক্তি সঞ্চয় করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা জরুরি। সাইবার জগতেও তাদের গতিবিধিতে নিয়মিত নজরদারি করা দরকার। এই সত্যটি সামনে রেখেই আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক