ভার্চ্যুয়াল জীবনের রঙ্গিন ফাঁদ

  • Update Time : ০৫:১২:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১
  • / 224

আসিফ আহমেদ:

শিশুরা পবিত্রতার প্রতীক। শিশু বলতেই সারল্য, চাঞ্চল্য, নির্মল হাসি চোখে ভেসে আসে। খেলাধুলা, হই-হুল্লোড় আর ছুটাছুটিতে মাতিয়ে রাখে চারপাশ। সকলের কতশত আশা-আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু পরিবারের এই সদস্য। অবুঝ হলেও আদর, মমতা,ভালোবাসা বুঝতে দেরি হয় না। মিথ্যে বিয়ে বিয়ে খেলা, কাদামাটিতে পিচ্ছিল খাওয়া, দৌড়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়া, গাছের ডাল কেটে বন্দুক বানিয়ে চোর-পুলিশ খেলায় তাঁর আনন্দ। সদ্যশেখা অ,আ এঁকে দিতে চায় মাটি,দেয়াল সবখানে। পরিবার, পারিপার্শ্বিকতায় তৈরি হতে থাকে জীবনাচরণ।

শিশুরা খুব কৌতুহলী। আকাশের ওপারে কি আছে, পাখিদের বাসা কোথায় ইত্যাদি প্রশ্নে জেনে নিতে চায় পৃথিবীকে। কোন পছন্দের কার্টুন বা গল্পের চরিত্রে আবিষ্কার করতে চায় নিজেকে। আপন করে নিতে চায় কোন জীবনাদর্শ। তবে এতদিনেও শিশুদের জন্য আমরা হয়তো পারিনি নিজ ঐতিহ্যের কোন সুপারহিরোকে আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। যে চরিত্রকে শিশুরা চর্চা করবে নিজ কল্পনা জগতে। হতে চাইবে তার মতন। অথচ বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে রয়েছে অনেক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। কৃষকের ঘাম, শহীদের রক্ত, যুদ্ধ বিজয়ীদের পদচিহ্ন নিয়ে আমাদের আছে অতুলনীয় সমৃদ্ধ ইতিহাস। পলাশীর প্রান্তর বা নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা থেকে চাইলেই বেরিয়ে আসে কত বীরত্বকথা। আকর্ষণীয় শিশুতোষ গল্পে বা মজার কার্টুনে শিশুদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কিছু হয়তো না। অন্তত ‘বাঁটুল দ্য গ্রেইট’ এর বীরত্ব তুলনায় ঐতিহাসিক কিছু জানতো।

শিশু-কিশোররা বিনোদন প্রিয়। আনন্দঘন সময় পেতে চায়। হোক বাসায় কেরাম বা লুডু খেলা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া খুব উপভোগ করে। সভ্যতার দুর্নিবার যাত্রায় আমাদের জীবন ব্যস্ততাময়। ইচ্ছে হলেও ব্যস্তজীবনে বাবা-মায়েরা অনেকাংশে সময় দিতে পারেন না। তখন সন্তানদের প্রতি সচেতন দৃষ্টি দেয়া কষ্টসাধ্য হয়। আবার ধনী বাবা-মা সময় দিতে না পারার শূণ্যতা পূরণে ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন সুবিধাদি দিয়ে থাকেন। তাই প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে শিশু-কিশোরদের হাতে চলে আসে ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি। শুরু হয় ভার্চ্যুয়াল জীবন।

অনলাইন দুনিয়ায় বিশেষ মজার। এখানে থাকে উদার স্বাধীনতা। ধরাছোয়া না গেলেও পাওয়া যায় সব। ফেসবুক ,গেমস সিরিজসহ অন্যান্য স্ট্রিমিং করে সহজেই পার করা যায় সময়। যখনি ঘড়ির কাটা আস্তে ঘুরে এর সহজ সমাধান এখন নেট ব্রাউজিং বা গেমিং। হোক বাসায়, যানবাহন বা কর্মস্থলে। সুখ-দুঃখ, সকাল-বিকাল সার্বক্ষণিক যেন এক প্রিয়সঙ্গী।

অভিভাবকরা ডিভাইসগুলো পড়াশুনার বাইরের সময় ব্যবহারে দিলেও ক্রমে তা সন্তানদের পড়াশুনাকেই বাইরে রেখে দেয়। অবসর সময়টুকু দখল করে নেয় প্রযুক্তিসৃষ্ট বিনোদন। ধীরে ধীরে তৈরি করে নিচ্ছে নিজেদের বাস্তবতামুক্ত অনলাইন বিচ্ছিন্ন দুনিয়ায়। দিনশেষে পরিবারের সবাই কয়েকঘন্টা একসাথে হলেও প্রত্যেকের থাকে স্ব স্ব ডিভাইসসঙ্গীর দিকে মনোযোগ। পরিবারের সদস্যদের মিথষ্ক্রিয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে স্ক্রিন বা মনিটর। গতি বাড়ছে ইন্টারনেটের, সংযোগ কমছে নিজেদের।

সম্প্রতি পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেমস দুটি নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান আসক্তি বন্ধে গেমস দুটি নিষিদ্ধের পক্ষে দাবী উঠে এসেছে। কিন্তু নিষিদ্ধ করা যে কি স্থায়ী সমাধান তা নিয়ে সংশয় থাকে। পিতামাতারা কতটুকু জানেন সন্তান ফোন বা অন্যান্য ডিভাইস কি উদ্দেশ্যে বা কত সময় ব্যবহার করছে? বাস্তব জীবনে সন্তানের প্রতি সতর্কদৃষ্টি দিতে বলা হয় তারা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে। এখন অনলাইন হলো জীবনের নতুন মাত্রা। তাই বর্তমান প্রেক্ষিতে সেই খেয়াল রাখতে হবে তার অনলাইন জীবনেও। শুধু নির্দিষ্ট এ্যাপস নিষিদ্ধ হয়তো যথেষ্ট নয়। এ্যাপস নিষিদ্ধ করে দেখা যাবে কিছুদিন পরেই সমজাতীয় অন্যকোন গেমস এসে এর জায়গা দখল করবে।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা সক্রিয় ভূমিকা রাখে। শহর, শহরতলী কিবা মফস্বলেও হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। একইসাথে হারাচ্ছে স্থানীয়ভাবে আয়োজিত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতা। দলবেধে খেলাধুলায় যে একতাবোধ, শৃংখলাবোধের শিক্ষা লাভ করা যায় তা বলাবাহুল্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জয়-পরাজয় মেনে নেয়ার যে চারিত্রিক-মানসিক দৃঢ়তা তা তৈরি হচ্ছে না। সুস্থ বিনোদনের মূলধারা থেকে বঞ্চিত হয়ে ধাবিত হয়ে দীর্ঘসময় থাকছে অনলাইন দুনিয়ায়। সঙ্গতভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে শিশু-কিশোর বা তরুণদের।

জীবনে টিনেজ বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ বয়সে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। হতে চায় আত্মনির্ভর ও পেতে চায় স্বাধীনতা। নিজের পোষাক বা ফ্যাশন নিয়ে আত্মসচেতনতা থাকে এসময়ে। মনোযোগ পাওয়ার এক সুপ্ত ইচ্ছে গড়ে উঠে ভিতরে। হালের ধারায় অনুসরণ করে থাকে চলমান সব চর্চা। এই প্রবণতাকে পুঁজি ও উৎসাহিত করে টিকটক, লাইকি বা সমজাতীয় প্লাটফর্ম। তাই বিভিন্ন কন্টেন্টে পোস্ট হতে থাকে ভিডিও। তৈরি হতে থাকে ফলোয়ার বা অনুসারী। তাই কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এগুলো এতো জনপ্রিয়। শুধু কি তাই! এখানে নিজের উচ্চতা প্রমাণে ফ্যান-ফলোয়ারের (অনুসারী) সংখ্যা একটা গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড। তাই এসব নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা, কখনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা। তৈরি হয় গ্রুপিং,গ্রুপিং থেকে গ্যাং বা কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন তুচ্ছ কারণে হানাহানি সংঘটিত হয়।

অধিকন্তু, যাদের ফ্যান-ফলোয়ার বেশি তাদের সাথে ভিডিও করার আগ্রহ তৈরি হয় সকলের মাঝে। কেননা এতে রাতারাতি নিজেকে প্রচার করা যায়। এই লোভকে অনেক অসাধুরা ব্যবহার করেন ফাঁদ হিসেবে। যে রঙিন ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে অনেক তরুণী বা কিশোরী। ইদানীংকালে নারী পাচারের মতো ঘটনাও সামনে আসছে। এর পেছনে থাকে স্বল্প সময়ে খ্যাতি ও অর্থলিপ্সা।

যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যখন একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো তখন সংশয় প্রকাশ করতেন সমাজবিদরা। পরিবার প্রথা কি ভেঙ্গে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। পরিবারব্যবস্থা টিকে থাকলেও জিবনযাত্রার পরিবর্তনে কিছুটা দুর্বল হয়েছে পারিবারিক সচেতনতা।

একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান সভ্যতায় কোন প্রযুক্তি এখনও সন্তানের জন্য অভিভাবকের বিকল্প হতে পারে নি।

লেখক: সরকারি কর্মকর্তা ও লেখক।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ভার্চ্যুয়াল জীবনের রঙ্গিন ফাঁদ

Update Time : ০৫:১২:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই ২০২১

আসিফ আহমেদ:

শিশুরা পবিত্রতার প্রতীক। শিশু বলতেই সারল্য, চাঞ্চল্য, নির্মল হাসি চোখে ভেসে আসে। খেলাধুলা, হই-হুল্লোড় আর ছুটাছুটিতে মাতিয়ে রাখে চারপাশ। সকলের কতশত আশা-আনন্দের কেন্দ্রবিন্দু পরিবারের এই সদস্য। অবুঝ হলেও আদর, মমতা,ভালোবাসা বুঝতে দেরি হয় না। মিথ্যে বিয়ে বিয়ে খেলা, কাদামাটিতে পিচ্ছিল খাওয়া, দৌড়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়া, গাছের ডাল কেটে বন্দুক বানিয়ে চোর-পুলিশ খেলায় তাঁর আনন্দ। সদ্যশেখা অ,আ এঁকে দিতে চায় মাটি,দেয়াল সবখানে। পরিবার, পারিপার্শ্বিকতায় তৈরি হতে থাকে জীবনাচরণ।

শিশুরা খুব কৌতুহলী। আকাশের ওপারে কি আছে, পাখিদের বাসা কোথায় ইত্যাদি প্রশ্নে জেনে নিতে চায় পৃথিবীকে। কোন পছন্দের কার্টুন বা গল্পের চরিত্রে আবিষ্কার করতে চায় নিজেকে। আপন করে নিতে চায় কোন জীবনাদর্শ। তবে এতদিনেও শিশুদের জন্য আমরা হয়তো পারিনি নিজ ঐতিহ্যের কোন সুপারহিরোকে আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। যে চরিত্রকে শিশুরা চর্চা করবে নিজ কল্পনা জগতে। হতে চাইবে তার মতন। অথচ বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে রয়েছে অনেক অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। কৃষকের ঘাম, শহীদের রক্ত, যুদ্ধ বিজয়ীদের পদচিহ্ন নিয়ে আমাদের আছে অতুলনীয় সমৃদ্ধ ইতিহাস। পলাশীর প্রান্তর বা নারকেলবাড়িয়ার বাঁশের কেল্লা থেকে চাইলেই বেরিয়ে আসে কত বীরত্বকথা। আকর্ষণীয় শিশুতোষ গল্পে বা মজার কার্টুনে শিশুদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব কিছু হয়তো না। অন্তত ‘বাঁটুল দ্য গ্রেইট’ এর বীরত্ব তুলনায় ঐতিহাসিক কিছু জানতো।

শিশু-কিশোররা বিনোদন প্রিয়। আনন্দঘন সময় পেতে চায়। হোক বাসায় কেরাম বা লুডু খেলা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া খুব উপভোগ করে। সভ্যতার দুর্নিবার যাত্রায় আমাদের জীবন ব্যস্ততাময়। ইচ্ছে হলেও ব্যস্তজীবনে বাবা-মায়েরা অনেকাংশে সময় দিতে পারেন না। তখন সন্তানদের প্রতি সচেতন দৃষ্টি দেয়া কষ্টসাধ্য হয়। আবার ধনী বাবা-মা সময় দিতে না পারার শূণ্যতা পূরণে ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন সুবিধাদি দিয়ে থাকেন। তাই প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে শিশু-কিশোরদের হাতে চলে আসে ইন্টারনেট সংযোগসহ মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি। শুরু হয় ভার্চ্যুয়াল জীবন।

অনলাইন দুনিয়ায় বিশেষ মজার। এখানে থাকে উদার স্বাধীনতা। ধরাছোয়া না গেলেও পাওয়া যায় সব। ফেসবুক ,গেমস সিরিজসহ অন্যান্য স্ট্রিমিং করে সহজেই পার করা যায় সময়। যখনি ঘড়ির কাটা আস্তে ঘুরে এর সহজ সমাধান এখন নেট ব্রাউজিং বা গেমিং। হোক বাসায়, যানবাহন বা কর্মস্থলে। সুখ-দুঃখ, সকাল-বিকাল সার্বক্ষণিক যেন এক প্রিয়সঙ্গী।

অভিভাবকরা ডিভাইসগুলো পড়াশুনার বাইরের সময় ব্যবহারে দিলেও ক্রমে তা সন্তানদের পড়াশুনাকেই বাইরে রেখে দেয়। অবসর সময়টুকু দখল করে নেয় প্রযুক্তিসৃষ্ট বিনোদন। ধীরে ধীরে তৈরি করে নিচ্ছে নিজেদের বাস্তবতামুক্ত অনলাইন বিচ্ছিন্ন দুনিয়ায়। দিনশেষে পরিবারের সবাই কয়েকঘন্টা একসাথে হলেও প্রত্যেকের থাকে স্ব স্ব ডিভাইসসঙ্গীর দিকে মনোযোগ। পরিবারের সদস্যদের মিথষ্ক্রিয়ার মাঝে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে স্ক্রিন বা মনিটর। গতি বাড়ছে ইন্টারনেটের, সংযোগ কমছে নিজেদের।

সম্প্রতি পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেমস দুটি নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান আসক্তি বন্ধে গেমস দুটি নিষিদ্ধের পক্ষে দাবী উঠে এসেছে। কিন্তু নিষিদ্ধ করা যে কি স্থায়ী সমাধান তা নিয়ে সংশয় থাকে। পিতামাতারা কতটুকু জানেন সন্তান ফোন বা অন্যান্য ডিভাইস কি উদ্দেশ্যে বা কত সময় ব্যবহার করছে? বাস্তব জীবনে সন্তানের প্রতি সতর্কদৃষ্টি দিতে বলা হয় তারা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে। এখন অনলাইন হলো জীবনের নতুন মাত্রা। তাই বর্তমান প্রেক্ষিতে সেই খেয়াল রাখতে হবে তার অনলাইন জীবনেও। শুধু নির্দিষ্ট এ্যাপস নিষিদ্ধ হয়তো যথেষ্ট নয়। এ্যাপস নিষিদ্ধ করে দেখা যাবে কিছুদিন পরেই সমজাতীয় অন্যকোন গেমস এসে এর জায়গা দখল করবে।

শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা সক্রিয় ভূমিকা রাখে। শহর, শহরতলী কিবা মফস্বলেও হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। একইসাথে হারাচ্ছে স্থানীয়ভাবে আয়োজিত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট বা প্রতিযোগিতা। দলবেধে খেলাধুলায় যে একতাবোধ, শৃংখলাবোধের শিক্ষা লাভ করা যায় তা বলাবাহুল্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জয়-পরাজয় মেনে নেয়ার যে চারিত্রিক-মানসিক দৃঢ়তা তা তৈরি হচ্ছে না। সুস্থ বিনোদনের মূলধারা থেকে বঞ্চিত হয়ে ধাবিত হয়ে দীর্ঘসময় থাকছে অনলাইন দুনিয়ায়। সঙ্গতভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে শিশু-কিশোর বা তরুণদের।

জীবনে টিনেজ বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ বয়সে কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। হতে চায় আত্মনির্ভর ও পেতে চায় স্বাধীনতা। নিজের পোষাক বা ফ্যাশন নিয়ে আত্মসচেতনতা থাকে এসময়ে। মনোযোগ পাওয়ার এক সুপ্ত ইচ্ছে গড়ে উঠে ভিতরে। হালের ধারায় অনুসরণ করে থাকে চলমান সব চর্চা। এই প্রবণতাকে পুঁজি ও উৎসাহিত করে টিকটক, লাইকি বা সমজাতীয় প্লাটফর্ম। তাই বিভিন্ন কন্টেন্টে পোস্ট হতে থাকে ভিডিও। তৈরি হতে থাকে ফলোয়ার বা অনুসারী। তাই কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এগুলো এতো জনপ্রিয়। শুধু কি তাই! এখানে নিজের উচ্চতা প্রমাণে ফ্যান-ফলোয়ারের (অনুসারী) সংখ্যা একটা গুরুত্বপূর্ণ মানদন্ড। তাই এসব নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা, কখনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা। তৈরি হয় গ্রুপিং,গ্রুপিং থেকে গ্যাং বা কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন তুচ্ছ কারণে হানাহানি সংঘটিত হয়।

অধিকন্তু, যাদের ফ্যান-ফলোয়ার বেশি তাদের সাথে ভিডিও করার আগ্রহ তৈরি হয় সকলের মাঝে। কেননা এতে রাতারাতি নিজেকে প্রচার করা যায়। এই লোভকে অনেক অসাধুরা ব্যবহার করেন ফাঁদ হিসেবে। যে রঙিন ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে অনেক তরুণী বা কিশোরী। ইদানীংকালে নারী পাচারের মতো ঘটনাও সামনে আসছে। এর পেছনে থাকে স্বল্প সময়ে খ্যাতি ও অর্থলিপ্সা।

যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যখন একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিলো তখন সংশয় প্রকাশ করতেন সমাজবিদরা। পরিবার প্রথা কি ভেঙ্গে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। পরিবারব্যবস্থা টিকে থাকলেও জিবনযাত্রার পরিবর্তনে কিছুটা দুর্বল হয়েছে পারিবারিক সচেতনতা।

একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান সভ্যতায় কোন প্রযুক্তি এখনও সন্তানের জন্য অভিভাবকের বিকল্প হতে পারে নি।

লেখক: সরকারি কর্মকর্তা ও লেখক।