টিকা মানেই রক্ষাকবচ নয়

  • Update Time : ১০:১২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
  • / 219
ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ:

গত ডিসেম্বরে কোভিডে আমি মাকে হারাই। তিনি বাইরে একদমই বের হতেন না। পরিবার ও ব্যবসার টুকিটাকি সব বাসায় বসেই সামলে নিতেন। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাননি। শুধু একদিন তার অসুস্থ ভাইটিকে দেখতে বাড়ির বাইরে পা রেখেছিলেন। দুঃখজনক হলো, আমার মায়ের পর তার সেই ভাইটিও কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মেয়ে ও একইসঙ্গে একজন ডাক্তার হওয়ায় অপরাধবোধ আমাকে এখনও আচ্ছন্ন করে আছে। আমি মাকে আর ক’টা দিন নিরাপদে রাখতে পারিনি, যখন কিনা হাতের নাগালেই ছিল ভ্যাকসিন।

আমি নিজেও গত বছর কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং মার্চে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিই। তারপরও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যাবতীয় নির্দেশনা মেনে চলছি। কেন? কারণ, আমি ভালো করেই জানি, কোনও উপসর্গ ছাড়াই আমি ভাইরাসের বাহক হতে পারি এবং আমার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

দেশে প্রথম কোভিড রোগী ধরা পড়ার ঠিক এক বছর পর আবার বাড়তে শুরু করেছে শনাক্তের হার। ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমরা প্রতিদিনই রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড দেখছি। কোভিডের আরেকটি ঢেউয়ের পরিষ্কার ইঙ্গিত থাকা সত্ত্বেও দেখা গেলো, নতুন সংক্রমণের তীব্রতার সঙ্গে তাল মেলানোর মতো এবারও প্রস্তুতি ছিল না আমাদের স্বাস্থ্য খাতের। সরকার সার্কিট ব্রেকার লকডাউন ঘোষণা করলো। সংক্রমণের চক্র ভেঙে দিতে এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

হুট করে সংক্রমণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে দ্বিধা, দানা বাঁধতে শুরু করেছে সন্দেহ। তাছাড়া, আমরা এটাও বলতে পারছি না, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভাইরাসের নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট দায়ী কিনা। উত্তরটা এখনও কারোর জানা নেই। তবে আমরা কিছু তথ্যে চোখ বোলাতে পারি।

  • দেশে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৫৩ লাখ ৭০ হাজার জন। শুনতে বেশি মনে হলেও এটি আমাদের জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং এরা মাত্র প্রথম ডোজটি নিয়েছেন। যেখানে দুটো ডোজই নিতে বলা হয়েছে।
  • টিকা মানেই চূড়ান্ত রক্ষাকবচ নয়।
  • পরিশেষে, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমরা সবাই বেশ উদাসীন।

টিকা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি কী করে সংক্রমণের চিত্র বদলে দিতে পারে; এমনকি কয়েকটি দেশে যে এমনটা ঘটেছে, সেটার বিস্তারিত এবার তুলে ধরা যাক।

টিকা যেভাবে কাজ করে

কোনও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা যে সাড়া দেয়, তার একটি মহড়া তৈরি করাই ভ্যাকসিনের কাজ। রোগবাহী জীবাণুর দুর্বল একটি অংশকে (অ্যান্টিজেন) জুড়ে দেওয়া হয় টিকায়। ওটাই আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় (ইমিউন সিস্টেম) উদ্দীপনা তৈরি করে তথা ট্রিগারের কাজ করে। এই ট্রিগারের ফলে শরীরে ওই অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে তৈরি হয় নিরাপত্তা কোষ, অ্যান্টিবডি ও কিছু স্মৃতি-কোষ (মেমোরি সেল)। কিছু টিকায় একাধিক ডোজ, বুস্টার ডোজ এসবের প্রয়োজন হয়। এতে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার মতো অ্যান্টিবডি ও মেমোরি সেল তৈরি হয়। শরীরও এতে করে রোগটির বিরুদ্ধে লড়তে নিজেকে তৈরি করে নেওয়ার মতো সময় পায়।

ইফেকটিভ ইমিউনিটি ও স্ট্যারিলাইজিং ইমিউনিটি

ভ্যাকসিন গবেষকদের জন্য ঈদের চাঁদ হলো এমন এক ভ্যাকসিন যা ১০০ ভাগ কাজ করবে। এটাই হলো স্ট্যারিলাইজিং ইমিউনিটি। এমন ইমিউনিটি তৈরি হলে শরীরে ওই জীবাণু নিজের প্রতিরূপ তৈরি তো দূরের কথা, ঠিকমতো জেঁকে বসারই সুযোগ পায় না। এমন শক্তিশালী ভ্যাকসিন হাতে পাওয়া বেশ বিরল ঘটনা। তবে এমএমআর ও পোলিওর মতো কিছু রোগের টিকা আছে, যেগুলো ৯০ শতাংশেরও বেশি কার্যকর।

বেশিরভাগ টিকাই শরীরে ‘ইফেকটিভ ইমিউনিটি’ তৈরি করে। যাতে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে নিজের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পেলেও রোগটা মারাত্মক আকার ধারণ করে না।

তথাপি, এটা পরিষ্কার যে টিকা গ্রহীতারাও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের শরীরে উপসর্গ দেখা না-ও দিতে পারে এবং নিজেদের অজান্তে ভাইরাস ছড়াতেও পারেন।

এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর স্বীকৃত টিকাগুলোর কার্যকারিতা পরিমাপ করা হচ্ছে রোগের উপসর্গ কমাতে পারছে কিনা তার ওপর ভিত্তি করে, সংক্রমণ কমানোর সক্ষমতার ওপর নয়। আর তাই এক ডোজ টিকা পাওয়া ব্যক্তি কিংবা একবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা আবারও সংক্রমিত হতে পারেন ও নিজেদের মধ্যে কোনও লক্ষণ ছাড়াই ভাইরাস ছড়াতে পারেন। সংক্রমণ রোধে ফাইজার ও মডার্নার টিকা কতটা কার্যকর তা নিয়ে এখনও নতুন নতুন তথ্য হাতে আসছে।

কোভিডের বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড ও ‘ব্রেকথ্রু কেইস’

যিনি টিকার দুটো ডোজই পেয়েছেন তিনিই পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড। আর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর যেকোনও সময় আবার আক্রান্ত হলেই সেটাকে বলা হয় ‘ব্রেকথ্রু কেইস’।

এই দুই সপ্তাহের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হতে এ সময়টা প্রয়োজন। যেকোনও টিকার ক্ষেত্রে ব্রেকথ্রু কেইস প্রত্যাশিত একটি ঘটনা, বিশেষ করে যখন ভাইরাসটি বড় আকারে ছড়ায় ও নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে কোভিড-১৯-এর ব্রেকথ্রু কেইস কালেভদ্রে রিপোর্ট করা হচ্ছে। তবে তাদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, এগুলো মাইল্ড কেইস, টিকা নেওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না বা রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হচ্ছে না।

ব্লুমবার্গ অপিনিয়ন জার্নালে ইসরায়েলি গবেষকদের একটি আবিষ্কারের কথা ছাপা হয়েছে। আমাদের নাকের ছিদ্রের ভেতর ও শ্বাসনালীর ভেতর আইজি-এ নামের একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ভাইরাসের প্রবেশেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। টিকা প্রদানের পর পর শরীরে আইজি-জি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এটা বেশি পরিমাণে থাকলে আমরা কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকবো। তবে আইজি-জি যে আইজি-এ এর মতো শক্তিশালী নয়, সেটা নিয়ে কিন্তু এখন বেশ লেখালেখি হচ্ছে। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, এত খুঁটিনাটি বলে যাচ্ছি কেন? কারণ একটাই, আমরা এখনও তথ্য সংগ্রহ করে চলেছি এবং সামগ্রিক চিত্রটা এখনও অধরাই আছে।

ব্রেকথ্রু কেইস কেন হয়?

টিকা নেওয়ার পরপরই কিন্তু একজন ব্যক্তি সংক্রমণের বেশ ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ, ওই সময় তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে অসম্পূর্ণ। রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতটা সাড়া দেবে সেটা নির্ভর করছে ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর। তাই পরিপূর্ণ ইমিউনিটি তৈরি হতে দুই সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। আরেকটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে যে, ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট স্ট্রেইন থেকে। ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ওই টিকা কার্যকর না-ও হতে পারে। এসব নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি লোক টিকা পাবে, ব্রেকথ্রু কেইস তত কমবে। অবশ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ব্রেকথ্রু কেইস আলোচনার ঊর্ধ্বে। কারণ, দেশে এখন পর্যন্ত ১০০ জনে মাত্র ৩ জন টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। এই ফাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া ভালো যে, টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও কিন্তু নিরাপদ নন। তাদেরও মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে ফাইজার ও মডার্নার টিকার তুলনা করবো কী করে?

পুরোপুরি ইমিউনাইজেশনের পর ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন ৯৪ শতাংশের বেশি কার্যকর। এই ক্ষেত্রে উপসর্গযুক্ত কোভিডের ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ৭৬ শতাংশ কার্যকর দেখা গেছে। এই ভ্যাকসিন আবার রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থা কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকানোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১০০ ভাগ কার্যকর। শুরু থেকেই নানান বিতর্কের মধ্যে দিয়ে গেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এর কার্যকারিতার হার নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অকার্যকর হওয়ায় ইউরোপের কিছু দেশ ও সাউথ আফ্রিকায় ভ্যাকসিনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে সুবিধা রয়েছে তার তুলনায় ঝুঁকিটা কম। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশের বিবেচনায় এটা বলাই যায়। এর সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা নেই। দামেও সস্তা। এ কারণে এটি দরিদ্র দেশগুলোর পছন্দের টিকা। এ ছাড়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ সপ্তাহের বিরতিতে এই টিকার দুই ডোজ নেওয়া হলে তা দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি তৈরি করে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে এই টিকার ৩ কোটি ডোজের জন্য বাংলাদেশ অগ্রিম টাকা দিয়েছিল। এ পর্যন্ত পেয়েছে ৭০ লাখ ডোজ। সরকারের পলিসিটা হলো, টিকার দ্বিতীয় ডোজ না দিয়ে আগে প্রথম ডোজ দিয়ে একটা বড় জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারের এই টিকাদান পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে।

তাই সরকার এখন জনসন অ্যান্ড জনসন-এর টিকার কথা ভাবছে। ওই টিকা ৬৬ শতাংশ কার্যকর এবং এটিও সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যায়। তবে ওটা সেপ্টেম্বরের আগে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

টিকাদান কার্যক্রমে সফলতার গল্প আছে?

এই টিকাদান কার্যক্রমে বলা যায় বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির ৫৫ দশমিক ৬০ ভাগ মানুষ পরিপূর্ণভাবে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এসেছে। দুই ডোজ করে ফাইজারের টিকা পেয়েছে তারা সবাই। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ৮৪ শতাংশই টিকা পেয়েছেন। আশঙ্কাজনক রোগী ও মৃত্যুর হার দারুণ গতিতে কমতে থাকায় জনগণের কাছে দেশটি এখন উন্মুক্ত।

নিচের চার্টটিতে বিভিন্ন দেশের পরিপূর্ণভাবে ভ্যাকসিন পাওয়া লোকের একটা তুলনাচিত্র দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এখনও এই ক্যাটাগরিতে পড়েনি।

চার্ট ১চার্ট ১

সূত্র: https://ourworldindata.org/covid-vaccinations?country=

এই চার্টে দেখানো হয়েছে মোট জনসংখ্যার তুলনায় সিঙ্গেল ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।

চার্ট ২চার্ট ২

সূত্র: https://ourworldindata.org/covid-vaccinations?country=

আর এতে দেখানো হয়েছে কোন দেশে কী পরিমাণ টিকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি সন্তোষজনক হলেও ১৬ কোটি মানুষের ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে আমাদের আরও ২১ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকার দরকার।

চার্ট ৩চার্ট ৩

সূত্র: https://ourworldindata.org/covid-vaccinations?country=

ইউকে স্ট্রেইন, সাউথ আফ্রিকান স্ট্রেইন, ধরন যাই হোক না কেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর আশঙ্কাজনক হার দেখে বোঝা যায়, আমরা এখন মারাত্মক কমিউনিটি সংক্রমণের মাঝামাঝি পর্যায়ে আছি।

একটি দেশে সংক্রমণ কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরিমাপক ব্যবহার করেন। এরমধ্যে রয়েছে আশঙ্কাজনক রোগীর সংখ্যা, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতের সংখ্যা। এছাড়া সংক্রমণ ছড়ানোর হার ও পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড লোকের সংখ্যাও বিবেচনা করা হয়।

যেহেতু আমাদের দেশে এখন প্রতিনিয়ত সংক্রমণের রেকর্ড ভাঙছে, তাই আমরা এ মুহূর্তে কোভিডের হটস্পট। আমাদের সঙ্গে একের পর এক সীমান্তও বন্ধ হচ্ছে। আর তাই এখন লোকজনকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরে থাকতে হবে সব সময়। ঘরের ভেতর কিংবা বাইরে, সবখানেই লোকসমাগম থেকে দূরে থাকতে হবে।

মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে আমরা দিনে গড়ে ৩৫০ থেকে সাত হাজার আক্রান্তে পৌঁছে গেছি। আমরা তখনই কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারবো যখন দেখবো আমাদের আশপাশের সবাই টিকার আওতায় এসেছে ও সংক্রমণের হার কমছে।

তাছাড়া রোগটি এখনও তুলনামূলক নতুন। ভ্যাকসিনেশন ও ইমিউনিটি সংক্রান্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বড়জোর তিন মাসের পুরনো। আর তাই কোনও কিছু জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আরও অনেক তথ্যই বের হতে থাকবে। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব এবং নিজেদের নিরাপদ রাখতে আমাদের এখন এ দুটোকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে।

লেখক: অর্গানিকেয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। এমবিবিএস, এমবিএ এবং হেলথকেয়ার লিডারশিপে মাস্টার্স।

Please Share This Post in Your Social Media


টিকা মানেই রক্ষাকবচ নয়

Update Time : ১০:১২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
ডা. মালিহা মান্নান আহমেদ:

গত ডিসেম্বরে কোভিডে আমি মাকে হারাই। তিনি বাইরে একদমই বের হতেন না। পরিবার ও ব্যবসার টুকিটাকি সব বাসায় বসেই সামলে নিতেন। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানেও যাননি। শুধু একদিন তার অসুস্থ ভাইটিকে দেখতে বাড়ির বাইরে পা রেখেছিলেন। দুঃখজনক হলো, আমার মায়ের পর তার সেই ভাইটিও কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মেয়ে ও একইসঙ্গে একজন ডাক্তার হওয়ায় অপরাধবোধ আমাকে এখনও আচ্ছন্ন করে আছে। আমি মাকে আর ক’টা দিন নিরাপদে রাখতে পারিনি, যখন কিনা হাতের নাগালেই ছিল ভ্যাকসিন।

আমি নিজেও গত বছর কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম এবং মার্চে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিই। তারপরও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যাবতীয় নির্দেশনা মেনে চলছি। কেন? কারণ, আমি ভালো করেই জানি, কোনও উপসর্গ ছাড়াই আমি ভাইরাসের বাহক হতে পারি এবং আমার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

দেশে প্রথম কোভিড রোগী ধরা পড়ার ঠিক এক বছর পর আবার বাড়তে শুরু করেছে শনাক্তের হার। ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমরা প্রতিদিনই রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড দেখছি। কোভিডের আরেকটি ঢেউয়ের পরিষ্কার ইঙ্গিত থাকা সত্ত্বেও দেখা গেলো, নতুন সংক্রমণের তীব্রতার সঙ্গে তাল মেলানোর মতো এবারও প্রস্তুতি ছিল না আমাদের স্বাস্থ্য খাতের। সরকার সার্কিট ব্রেকার লকডাউন ঘোষণা করলো। সংক্রমণের চক্র ভেঙে দিতে এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

হুট করে সংক্রমণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে দ্বিধা, দানা বাঁধতে শুরু করেছে সন্দেহ। তাছাড়া, আমরা এটাও বলতে পারছি না, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ভাইরাসের নতুন কোনও ভ্যারিয়েন্ট দায়ী কিনা। উত্তরটা এখনও কারোর জানা নেই। তবে আমরা কিছু তথ্যে চোখ বোলাতে পারি।

  • দেশে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৫৩ লাখ ৭০ হাজার জন। শুনতে বেশি মনে হলেও এটি আমাদের জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং এরা মাত্র প্রথম ডোজটি নিয়েছেন। যেখানে দুটো ডোজই নিতে বলা হয়েছে।
  • টিকা মানেই চূড়ান্ত রক্ষাকবচ নয়।
  • পরিশেষে, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আমরা সবাই বেশ উদাসীন।

টিকা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি কী করে সংক্রমণের চিত্র বদলে দিতে পারে; এমনকি কয়েকটি দেশে যে এমনটা ঘটেছে, সেটার বিস্তারিত এবার তুলে ধরা যাক।

টিকা যেভাবে কাজ করে

কোনও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা যে সাড়া দেয়, তার একটি মহড়া তৈরি করাই ভ্যাকসিনের কাজ। রোগবাহী জীবাণুর দুর্বল একটি অংশকে (অ্যান্টিজেন) জুড়ে দেওয়া হয় টিকায়। ওটাই আমাদের রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থায় (ইমিউন সিস্টেম) উদ্দীপনা তৈরি করে তথা ট্রিগারের কাজ করে। এই ট্রিগারের ফলে শরীরে ওই অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে তৈরি হয় নিরাপত্তা কোষ, অ্যান্টিবডি ও কিছু স্মৃতি-কোষ (মেমোরি সেল)। কিছু টিকায় একাধিক ডোজ, বুস্টার ডোজ এসবের প্রয়োজন হয়। এতে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার মতো অ্যান্টিবডি ও মেমোরি সেল তৈরি হয়। শরীরও এতে করে রোগটির বিরুদ্ধে লড়তে নিজেকে তৈরি করে নেওয়ার মতো সময় পায়।

ইফেকটিভ ইমিউনিটি ও স্ট্যারিলাইজিং ইমিউনিটি

ভ্যাকসিন গবেষকদের জন্য ঈদের চাঁদ হলো এমন এক ভ্যাকসিন যা ১০০ ভাগ কাজ করবে। এটাই হলো স্ট্যারিলাইজিং ইমিউনিটি। এমন ইমিউনিটি তৈরি হলে শরীরে ওই জীবাণু নিজের প্রতিরূপ তৈরি তো দূরের কথা, ঠিকমতো জেঁকে বসারই সুযোগ পায় না। এমন শক্তিশালী ভ্যাকসিন হাতে পাওয়া বেশ বিরল ঘটনা। তবে এমএমআর ও পোলিওর মতো কিছু রোগের টিকা আছে, যেগুলো ৯০ শতাংশেরও বেশি কার্যকর।

বেশিরভাগ টিকাই শরীরে ‘ইফেকটিভ ইমিউনিটি’ তৈরি করে। যাতে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে নিজের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ পেলেও রোগটা মারাত্মক আকার ধারণ করে না।

তথাপি, এটা পরিষ্কার যে টিকা গ্রহীতারাও ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের শরীরে উপসর্গ দেখা না-ও দিতে পারে এবং নিজেদের অজান্তে ভাইরাস ছড়াতেও পারেন।

এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এর স্বীকৃত টিকাগুলোর কার্যকারিতা পরিমাপ করা হচ্ছে রোগের উপসর্গ কমাতে পারছে কিনা তার ওপর ভিত্তি করে, সংক্রমণ কমানোর সক্ষমতার ওপর নয়। আর তাই এক ডোজ টিকা পাওয়া ব্যক্তি কিংবা একবার কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিরা আবারও সংক্রমিত হতে পারেন ও নিজেদের মধ্যে কোনও লক্ষণ ছাড়াই ভাইরাস ছড়াতে পারেন। সংক্রমণ রোধে ফাইজার ও মডার্নার টিকা কতটা কার্যকর তা নিয়ে এখনও নতুন নতুন তথ্য হাতে আসছে।

কোভিডের বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড ও ‘ব্রেকথ্রু কেইস’

যিনি টিকার দুটো ডোজই পেয়েছেন তিনিই পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড। আর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর যেকোনও সময় আবার আক্রান্ত হলেই সেটাকে বলা হয় ‘ব্রেকথ্রু কেইস’।

এই দুই সপ্তাহের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হতে এ সময়টা প্রয়োজন। যেকোনও টিকার ক্ষেত্রে ব্রেকথ্রু কেইস প্রত্যাশিত একটি ঘটনা, বিশেষ করে যখন ভাইরাসটি বড় আকারে ছড়ায় ও নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে কোভিড-১৯-এর ব্রেকথ্রু কেইস কালেভদ্রে রিপোর্ট করা হচ্ছে। তবে তাদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, এগুলো মাইল্ড কেইস, টিকা নেওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না বা রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হচ্ছে না।

ব্লুমবার্গ অপিনিয়ন জার্নালে ইসরায়েলি গবেষকদের একটি আবিষ্কারের কথা ছাপা হয়েছে। আমাদের নাকের ছিদ্রের ভেতর ও শ্বাসনালীর ভেতর আইজি-এ নামের একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা ভাইরাসের প্রবেশেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। টিকা প্রদানের পর পর শরীরে আইজি-জি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এটা বেশি পরিমাণে থাকলে আমরা কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদ থাকবো। তবে আইজি-জি যে আইজি-এ এর মতো শক্তিশালী নয়, সেটা নিয়ে কিন্তু এখন বেশ লেখালেখি হচ্ছে। এখন প্রশ্ন করতে পারেন, এত খুঁটিনাটি বলে যাচ্ছি কেন? কারণ একটাই, আমরা এখনও তথ্য সংগ্রহ করে চলেছি এবং সামগ্রিক চিত্রটা এখনও অধরাই আছে।

ব্রেকথ্রু কেইস কেন হয়?

টিকা নেওয়ার পরপরই কিন্তু একজন ব্যক্তি সংক্রমণের বেশ ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ, ওই সময় তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে অসম্পূর্ণ। রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতটা সাড়া দেবে সেটা নির্ভর করছে ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর। তাই পরিপূর্ণ ইমিউনিটি তৈরি হতে দুই সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে। আরেকটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে যে, ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট স্ট্রেইন থেকে। ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে ওই টিকা কার্যকর না-ও হতে পারে। এসব নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি লোক টিকা পাবে, ব্রেকথ্রু কেইস তত কমবে। অবশ্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ব্রেকথ্রু কেইস আলোচনার ঊর্ধ্বে। কারণ, দেশে এখন পর্যন্ত ১০০ জনে মাত্র ৩ জন টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে। এই ফাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া ভালো যে, টিকা নেওয়া ব্যক্তিরাও কিন্তু নিরাপদ নন। তাদেরও মাস্ক পরতে হবে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে ফাইজার ও মডার্নার টিকার তুলনা করবো কী করে?

পুরোপুরি ইমিউনাইজেশনের পর ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন ৯৪ শতাংশের বেশি কার্যকর। এই ক্ষেত্রে উপসর্গযুক্ত কোভিডের ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ৭৬ শতাংশ কার্যকর দেখা গেছে। এই ভ্যাকসিন আবার রোগীর আশঙ্কাজনক অবস্থা কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকানোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১০০ ভাগ কার্যকর। শুরু থেকেই নানান বিতর্কের মধ্যে দিয়ে গেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। এর কার্যকারিতার হার নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। রক্ত জমাট বাঁধা কিংবা প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অকার্যকর হওয়ায় ইউরোপের কিছু দেশ ও সাউথ আফ্রিকায় ভ্যাকসিনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে সুবিধা রয়েছে তার তুলনায় ঝুঁকিটা কম। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশের বিবেচনায় এটা বলাই যায়। এর সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় জটিলতা নেই। দামেও সস্তা। এ কারণে এটি দরিদ্র দেশগুলোর পছন্দের টিকা। এ ছাড়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ সপ্তাহের বিরতিতে এই টিকার দুই ডোজ নেওয়া হলে তা দীর্ঘমেয়াদি ইমিউনিটি তৈরি করে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে এই টিকার ৩ কোটি ডোজের জন্য বাংলাদেশ অগ্রিম টাকা দিয়েছিল। এ পর্যন্ত পেয়েছে ৭০ লাখ ডোজ। সরকারের পলিসিটা হলো, টিকার দ্বিতীয় ডোজ না দিয়ে আগে প্রথম ডোজ দিয়ে একটা বড় জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু ভ্যাকসিন রফতানিতে ভারতের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারের এই টিকাদান পরিকল্পনা ব্যাহত হতে পারে।

তাই সরকার এখন জনসন অ্যান্ড জনসন-এর টিকার কথা ভাবছে। ওই টিকা ৬৬ শতাংশ কার্যকর এবং এটিও সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যায়। তবে ওটা সেপ্টেম্বরের আগে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

টিকাদান কার্যক্রমে সফলতার গল্প আছে?

এই টিকাদান কার্যক্রমে বলা যায় বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির ৫৫ দশমিক ৬০ ভাগ মানুষ পরিপূর্ণভাবে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এসেছে। দুই ডোজ করে ফাইজারের টিকা পেয়েছে তারা সবাই। ৭০ বছরের বেশি বয়সী ৮৪ শতাংশই টিকা পেয়েছেন। আশঙ্কাজনক রোগী ও মৃত্যুর হার দারুণ গতিতে কমতে থাকায় জনগণের কাছে দেশটি এখন উন্মুক্ত।

নিচের চার্টটিতে বিভিন্ন দেশের পরিপূর্ণভাবে ভ্যাকসিন পাওয়া লোকের একটা তুলনাচিত্র দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এখনও এই ক্যাটাগরিতে পড়েনি।

চার্ট ১চার্ট ১

সূত্র: https://ourworldindata.org/covid-vaccinations?country=

এই চার্টে দেখানো হয়েছে মোট জনসংখ্যার তুলনায় সিঙ্গেল ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের শতাংশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ।

চার্ট ২চার্ট ২

সূত্র: https://ourworldindata.org/covid-vaccinations?country=

আর এতে দেখানো হয়েছে কোন দেশে কী পরিমাণ টিকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি সন্তোষজনক হলেও ১৬ কোটি মানুষের ৭০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনতে আমাদের আরও ২১ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকার দরকার।

চার্ট ৩চার্ট ৩

সূত্র: https://ourworldindata.org/covid-vaccinations?country=

ইউকে স্ট্রেইন, সাউথ আফ্রিকান স্ট্রেইন, ধরন যাই হোক না কেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর আশঙ্কাজনক হার দেখে বোঝা যায়, আমরা এখন মারাত্মক কমিউনিটি সংক্রমণের মাঝামাঝি পর্যায়ে আছি।

একটি দেশে সংক্রমণ কোন পর্যায়ে আছে তা নির্ধারণ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু পরিমাপক ব্যবহার করেন। এরমধ্যে রয়েছে আশঙ্কাজনক রোগীর সংখ্যা, হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতের সংখ্যা। এছাড়া সংক্রমণ ছড়ানোর হার ও পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড লোকের সংখ্যাও বিবেচনা করা হয়।

যেহেতু আমাদের দেশে এখন প্রতিনিয়ত সংক্রমণের রেকর্ড ভাঙছে, তাই আমরা এ মুহূর্তে কোভিডের হটস্পট। আমাদের সঙ্গে একের পর এক সীমান্তও বন্ধ হচ্ছে। আর তাই এখন লোকজনকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মাস্ক পরে থাকতে হবে সব সময়। ঘরের ভেতর কিংবা বাইরে, সবখানেই লোকসমাগম থেকে দূরে থাকতে হবে।

মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে আমরা দিনে গড়ে ৩৫০ থেকে সাত হাজার আক্রান্তে পৌঁছে গেছি। আমরা তখনই কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারবো যখন দেখবো আমাদের আশপাশের সবাই টিকার আওতায় এসেছে ও সংক্রমণের হার কমছে।

তাছাড়া রোগটি এখনও তুলনামূলক নতুন। ভ্যাকসিনেশন ও ইমিউনিটি সংক্রান্ত যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো বড়জোর তিন মাসের পুরনো। আর তাই কোনও কিছু জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আরও অনেক তথ্যই বের হতে থাকবে। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব এবং নিজেদের নিরাপদ রাখতে আমাদের এখন এ দুটোকেই আঁকড়ে ধরে রাখতে হবে।

লেখক: অর্গানিকেয়ার-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। এমবিবিএস, এমবিএ এবং হেলথকেয়ার লিডারশিপে মাস্টার্স।