রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে মানবপাচার চক্রের পাঁচ সদস্য আটক

  • Update Time : ০৯:২৯:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১
  • / 159

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে মানবপাচার চক্রের পাঁচজন সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। এ সময় একজনের কাছ থেকে পাশের দেশ ভারতের একটি জাল আধারকার্ড জব্দ করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার র‌্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফারজানা হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন- মো. ফয়সাল, মো. সোহেল হোসেন, মোছা. ওবি ওরফে ডলির মা, মোছা. সেলিনা এবং মোছা. কল্পনা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু ভুক্তভোগী র‌্যাব-৩ এর সদর দপ্তরে অভিযোগ করেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভারতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট ছাড়া নারীদের পাচার করে আসছে। চক্রটি গত বছরের ২০ মে অভিযোগকারীর মেয়েকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই মেয়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এই অভিযোগের পর র‌্যাব-৩ অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর ভুক্তভোগীর দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গতকাল বুধবার রাতে একটি অভিযান চালায়।

অভিযানে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন মো. ফয়সাল, মো. সোহেল হোসেন, মোছা. ওবি ওরফে ডলির মা, মোছা. সেলিনা এবং মোছা. কল্পনা।

আটক ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, ওই চক্রের মূল হোতা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভারতে নারী পাচার করে আসছে। সোহেল, রুবি, সেলিনা ও কল্পনাসহ বিভিন্ন স্থানীয় দালালের মাধ্যমে তিনি নারীদের জোগাড় করে থাকেন। এ ছাড়া তিনি এবং তার সহযোগী নারী সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের ভারতে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে থাকেন।

তারপর নারীদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তার অসহায়ত্বের জায়গা চিহ্নিত করে। পরে ওই নারীদের অসহায়ত্ব ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ভারতে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করে।

র‌্যাব জানায়, ওই নারী ভারতে যেতে রাজি হলে তার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে কৌশলে নারীদের ডলির মার কাছে নিয়ে রাখে। ডলির মা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে মন ভোলানো কথাবার্তা বলে নারীদের সাথে সুসর্ম্পক গড়ে তোলে। নারীরা তাকে তার মাতৃস্থানীয় ভাবতে থাকে।

এরপর সোহেল নারীদের বাসযোগে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে বাংলাদেশি দালালদের কাছে হস্তান্তর করে। বাংলাদেশি দালাল সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে নারীদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। এরপর সুযোগমতো ভারতের দালাল মোটরসাইকেলে করে নদী পথে বা জঙ্গল পথে পায়ে হেটে সীমান্ত পার করে দেয়। এরপর নারীদের ট্রেনে করে ভারতের একটি এলাকায় আটক ফয়সালের ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরপর নারীদের ভারতের বিভিন্ন মধ্যম ও নিম্নমানের হোটেল মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ওই নারীদের জোর করে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কোন নারী অসামাজিক কাজে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। যেহেতু নারীদের পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে পাচার করা হয়, তাই ভারতে যাওয়ার পর তারা দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে মানবপাচার চক্রের পাঁচ সদস্য আটক

Update Time : ০৯:২৯:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে মানবপাচার চক্রের পাঁচজন সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব। এ সময় একজনের কাছ থেকে পাশের দেশ ভারতের একটি জাল আধারকার্ড জব্দ করা হয়।

আজ বৃহস্পতিবার র‌্যাব-৩ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফারজানা হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আটক ব্যক্তিরা হলেন- মো. ফয়সাল, মো. সোহেল হোসেন, মোছা. ওবি ওরফে ডলির মা, মোছা. সেলিনা এবং মোছা. কল্পনা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু ভুক্তভোগী র‌্যাব-৩ এর সদর দপ্তরে অভিযোগ করেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ভারতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে পাসপোর্ট ছাড়া নারীদের পাচার করে আসছে। চক্রটি গত বছরের ২০ মে অভিযোগকারীর মেয়েকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই মেয়ের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

এই অভিযোগের পর র‌্যাব-৩ অনুসন্ধান শুরু করে। এরপর ভুক্তভোগীর দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গতকাল বুধবার রাতে একটি অভিযান চালায়।

অভিযানে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন মো. ফয়সাল, মো. সোহেল হোসেন, মোছা. ওবি ওরফে ডলির মা, মোছা. সেলিনা এবং মোছা. কল্পনা।

আটক ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, ওই চক্রের মূল হোতা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভারতে নারী পাচার করে আসছে। সোহেল, রুবি, সেলিনা ও কল্পনাসহ বিভিন্ন স্থানীয় দালালের মাধ্যমে তিনি নারীদের জোগাড় করে থাকেন। এ ছাড়া তিনি এবং তার সহযোগী নারী সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের ভারতে যাওয়ার জন্য প্রলুব্ধ করে থাকেন।

তারপর নারীদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তার অসহায়ত্বের জায়গা চিহ্নিত করে। পরে ওই নারীদের অসহায়ত্ব ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাকে ভারতে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করে।

র‌্যাব জানায়, ওই নারী ভারতে যেতে রাজি হলে তার পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে কৌশলে নারীদের ডলির মার কাছে নিয়ে রাখে। ডলির মা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে মন ভোলানো কথাবার্তা বলে নারীদের সাথে সুসর্ম্পক গড়ে তোলে। নারীরা তাকে তার মাতৃস্থানীয় ভাবতে থাকে।

এরপর সোহেল নারীদের বাসযোগে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে বাংলাদেশি দালালদের কাছে হস্তান্তর করে। বাংলাদেশি দালাল সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে নারীদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। এরপর সুযোগমতো ভারতের দালাল মোটরসাইকেলে করে নদী পথে বা জঙ্গল পথে পায়ে হেটে সীমান্ত পার করে দেয়। এরপর নারীদের ট্রেনে করে ভারতের একটি এলাকায় আটক ফয়সালের ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এরপর নারীদের ভারতের বিভিন্ন মধ্যম ও নিম্নমানের হোটেল মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ওই নারীদের জোর করে অসামাজিক কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কোন নারী অসামাজিক কাজে অস্বীকৃতি জানালে তাকে শারীরিক মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। যেহেতু নারীদের পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধভাবে পাচার করা হয়, তাই ভারতে যাওয়ার পর তারা দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে।