অবহেলিত রংপুরের উন্নয়নে ছাত্র-জনতার ৫ দফা দাবি

  • Update Time : ০৭:১৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / 30

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি 

বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত থাকা দেশের উত্তর জনপদের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে রংপুর বিভাগ থেকে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে রংপুর বিভাগের ছাত্র জনতা।

শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে ঢাকায় অবস্থানরত রংপুর বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। 

ছাত্র-জনতার দেয়া দাবিগুলো হলো- তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন; জাতীয় বাজেটে ন্যায্য বরাদ্দ; বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ সহ গ্যাস সংযোগ প্রদান; বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পায়ন; একজন উপদেষ্টা নিয়োগ করা।

মুখপাত্র হিসেবে ঢাবি শিক্ষার্থী মিফতাহুল মারুফ আনুষ্ঠানিকভাবে দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দাবিগুলোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, নিজেদের প্রতিনিধি না হলে এ দাবিগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আবু সাইদের রক্তে ভেজা ভূমি থেকে অবশ্যই এই সরকারে প্রতিনিধি থাকতে হবে। সেখানে তিনি প্রস্তাবনা আকারে সরকারের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, ছাত্রনেতা ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, কবি ও সাহিত্যক আব্দুল হাই শিকদার, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ড. আতিক মুজাহিদসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে। 

মারুফ বলেন, দরকার পরলে আমরা আলোচনা করে আরও কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা করতে পারি। মুল কথা হল আমাদের বঞ্চনা থেকে মুক্তি দরকার, প্রকৃত উন্নয়ন দরকার। আর তা আমাদের নিজেদের মানুষই কেবল করতে পারবে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবহেলিত রংপুর বিভাগ থেকে কোনো উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন অনেকে বলতে পারেন আমরা স্বার্থ খুঁজছি। আমি বলতে চাই, আমরা যদি স্বার্থের দিকে তাকাতাম তাহলে কোন বিভাগ থেকে কতজন উপদেষ্টা হয়েছে সেটার লিস্ট দেখাতে আসতাম। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই অবহেলিত  উত্তরবঙ্গের মাটি ও মানুষের যুগ যুগ ধরে চলে আসা সমস্যাকে ঘুচতে হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ দরকার।

তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে বেড়ে উঠা ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া অনেক যোগ্য তরুণ-প্রবীণ রয়েছেন যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যথাযোগ্যভাবে দক্ষতার সাথে গিয়ে নিতে সক্ষম। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবি সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের এই কর্মসূচি আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করবে এবং আরও বেশি প্রতিবাদী আকার ধারণ করবে। 

ঢাবি শিক্ষার্থী গালিব আহমেদ শিশির বলেন, আমরা সবসময়ই দেখে এসেছি ১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রংপুরবাসী শুধু রক্ত দিয়েই এসেছে কিন্তু এরপরেও তারা সবসময়ই অবহেলিত রয়েছে। রংপুর বিভাগের বার্ষিক বাজেটেও উন্নয়ন খাতে কোন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাজেট ছিলো মাত্র ১ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলিতেও আমাদের বিভাগের কেউ নেই যিনি আমাদের পক্ষ থেকে কথা বলবেন। তাছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শুনে আসলেও সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই, বর্তমান সরকারের কাছে আমরা আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। 

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ আলম বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা রংপুরবাসী বন্যার সম্মুখীন হয়ে আসছি৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদের কোন দাবি মেনে নেয়নি। এমনকি আমাদের বিভাগের উন্নয়নে বাজেটও প্রদান করেনি। আমরা বৃহত্তর রংপুর থেকে তরুণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোগ্য ও নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন নেতাদের দেখতে চাই এবং অতিদ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানাই। 

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)-এর লেকচারার রাজিব মণ্ডলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ড. আতিক মুজাহিদ, এডভোকেট মেহেদি হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবিদ হোসেন রাফি, রংপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

অবহেলিত রংপুরের উন্নয়নে ছাত্র-জনতার ৫ দফা দাবি

Update Time : ০৭:১৪:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি 

বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত থাকা দেশের উত্তর জনপদের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে রংপুর বিভাগ থেকে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে রংপুর বিভাগের ছাত্র জনতা।

শনিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়। মানববন্ধনে ঢাকায় অবস্থানরত রংপুর বিভাগের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। 

ছাত্র-জনতার দেয়া দাবিগুলো হলো- তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন; জাতীয় বাজেটে ন্যায্য বরাদ্দ; বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ সহ গ্যাস সংযোগ প্রদান; বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পায়ন; একজন উপদেষ্টা নিয়োগ করা।

মুখপাত্র হিসেবে ঢাবি শিক্ষার্থী মিফতাহুল মারুফ আনুষ্ঠানিকভাবে দাবিগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দাবিগুলোর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেন, নিজেদের প্রতিনিধি না হলে এ দাবিগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আবু সাইদের রক্তে ভেজা ভূমি থেকে অবশ্যই এই সরকারে প্রতিনিধি থাকতে হবে। সেখানে তিনি প্রস্তাবনা আকারে সরকারের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, ছাত্রনেতা ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, কবি ও সাহিত্যক আব্দুল হাই শিকদার, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ড. আতিক মুজাহিদসহ আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে। 

মারুফ বলেন, দরকার পরলে আমরা আলোচনা করে আরও কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা করতে পারি। মুল কথা হল আমাদের বঞ্চনা থেকে মুক্তি দরকার, প্রকৃত উন্নয়ন দরকার। আর তা আমাদের নিজেদের মানুষই কেবল করতে পারবে।

ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা থেকে উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অবহেলিত রংপুর বিভাগ থেকে কোনো উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এখন অনেকে বলতে পারেন আমরা স্বার্থ খুঁজছি। আমি বলতে চাই, আমরা যদি স্বার্থের দিকে তাকাতাম তাহলে কোন বিভাগ থেকে কতজন উপদেষ্টা হয়েছে সেটার লিস্ট দেখাতে আসতাম। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই অবহেলিত  উত্তরবঙ্গের মাটি ও মানুষের যুগ যুগ ধরে চলে আসা সমস্যাকে ঘুচতে হলে উত্তরবঙ্গের মানুষ দরকার।

তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গ থেকে বেড়ে উঠা ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া অনেক যোগ্য তরুণ-প্রবীণ রয়েছেন যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যথাযোগ্যভাবে দক্ষতার সাথে গিয়ে নিতে সক্ষম। তাই আমাদের যৌক্তিক দাবি সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় আমাদের এই কর্মসূচি আরও বৃহত্তর আকার ধারণ করবে এবং আরও বেশি প্রতিবাদী আকার ধারণ করবে। 

ঢাবি শিক্ষার্থী গালিব আহমেদ শিশির বলেন, আমরা সবসময়ই দেখে এসেছি ১৯৭১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রংপুরবাসী শুধু রক্ত দিয়েই এসেছে কিন্তু এরপরেও তারা সবসময়ই অবহেলিত রয়েছে। রংপুর বিভাগের বার্ষিক বাজেটেও উন্নয়ন খাতে কোন অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তাছাড়া, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাজেট ছিলো মাত্র ১ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলিতেও আমাদের বিভাগের কেউ নেই যিনি আমাদের পক্ষ থেকে কথা বলবেন। তাছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে আমরা তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শুনে আসলেও সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই, বর্তমান সরকারের কাছে আমরা আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। 

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদ আলম বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা রংপুরবাসী বন্যার সম্মুখীন হয়ে আসছি৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছি কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাদের কোন দাবি মেনে নেয়নি। এমনকি আমাদের বিভাগের উন্নয়নে বাজেটও প্রদান করেনি। আমরা বৃহত্তর রংপুর থেকে তরুণ শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সম্মুখ সারির যোগ্য ও নেতৃত্ব গুণসম্পন্ন নেতাদের দেখতে চাই এবং অতিদ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানাই। 

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)-এর লেকচারার রাজিব মণ্ডলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ড. আতিক মুজাহিদ, এডভোকেট মেহেদি হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবিদ হোসেন রাফি, রংপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।