ঢাবিতে ক্যান্টিনের খাবারে ১৪ রকম প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান

  • Update Time : ০৪:৩১:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪
  • / 68

জাননাহ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকার বিভিন্ন ক্যান্টিনের খাবারে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাইসহ ১৪ ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। হল ক্যান্টিন বাদে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ ৫টি ক্যান্টিনের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনী জার্নাল ‘উইলি জার্নালে’ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

গবেষক দল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনের বাইরে পাঁচটি ক্যান্টিন থেকে আলুর ভর্তা ও মুরগির মাংসের নমুনা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে চারটি ক্যান্টিনের খাবারে উচ্চমাত্রার ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান তারা। 

গবেষণায় দেখা যায়, মুরগির মাংস ও আলুর ভর্তায় পাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলো অধিকাংশই ওষুধ প্রতিরোধী। মুরগির মাংসের চাইতেই আলুর ভর্তায় ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি। গবেষণায় এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মানুষের জীবনের জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়, হলের দোকানে বা ক্যান্টিনে মুরগির মাংস সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিক্রি হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ক্যান্টিনের রান্না করা মুরগির মাংসে ক্লোস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়া আছে। এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বুঝায়, মাংস রান্না করার সময় তা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয় না।

এছাড়া গবেষণায় মুরগির মাংস ও আলুর ভর্তায় ১৪ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই। 
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলেছে, ই-কোলাই প্রায় সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এই ব্যাকটেরিয়া এতটাই শক্তিশালী যা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।

দুই ধরনের খাবারেই ‘প্রোটিয়াস’ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। কিডনিতে পাথর জমাতে এই ব্যাকটেরিয়া কাজ করে। এছাড়াও, ক্লেবসিয়েলা, সালমোনেলা, ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ার সন্ধানও পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও কলেরার মতো রোগের জন্ম দিতে পারে। প্রতিদিন ক্যান্টিনে খাবারের মাধ্যমে এমন আরও ৯ ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আলিম বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনের ক্যাফে, সায়েন্স লাইব্রেরির পাশের ক্যাফেসহ হলের বাইরে যে ক্যাফেটেরিয়াগুলো আছে, সেগুলোর খাবারের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এই গবেষণার দুই পদের খাবারে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি যা মানুষের প্রাণ নাশের মতোই শক্তিশালী।  

তিনি বলেন, হলের খাবার যেহেতু রান্না করার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা খেয়ে থাকে তাই ঐ খাবারে বাইরের ক্যাফে থেকে তুলনামূলক ক্ষতি কম হয়। বাইরে ক্যাফেগুলোতে খাবার রেখে দেওয়া হয় ফলে দীর্ঘ সময় সেটি বাইরে অবস্থান করে এবং এতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এই খাবার খাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।  

এ প্রসঙ্গে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হলের ক্যান্টিন মনিটরিংয়ের জন্য শিক্ষকদের একটি কমিটি করে দিয়েছি। একই সঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষ থেকে একজন করে পাঁচ জন শিক্ষার্থী ক্যান্টিন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবে। প্রতি মাসে এই পাঁচ জন পরিবর্তন করে নতুন পাঁচ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এভাবেই হলের খাবারের মান নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা করেছি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঢাবিতে ক্যান্টিনের খাবারে ১৪ রকম প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান

Update Time : ০৪:৩১:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

জাননাহ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকার বিভিন্ন ক্যান্টিনের খাবারে প্রাণঘাতী ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাইসহ ১৪ ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পাওয়া গেছে। হল ক্যান্টিন বাদে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ ৫টি ক্যান্টিনের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনী জার্নাল ‘উইলি জার্নালে’ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

গবেষক দল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনের বাইরে পাঁচটি ক্যান্টিন থেকে আলুর ভর্তা ও মুরগির মাংসের নমুনা সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে চারটি ক্যান্টিনের খাবারে উচ্চমাত্রার ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পান তারা। 

গবেষণায় দেখা যায়, মুরগির মাংস ও আলুর ভর্তায় পাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলো অধিকাংশই ওষুধ প্রতিরোধী। মুরগির মাংসের চাইতেই আলুর ভর্তায় ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি। গবেষণায় এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মানুষের জীবনের জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা যায়, হলের দোকানে বা ক্যান্টিনে মুরগির মাংস সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিক্রি হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ক্যান্টিনের রান্না করা মুরগির মাংসে ক্লোস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়া আছে। এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বুঝায়, মাংস রান্না করার সময় তা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয় না।

এছাড়া গবেষণায় মুরগির মাংস ও আলুর ভর্তায় ১৪ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই। 
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলেছে, ই-কোলাই প্রায় সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এই ব্যাকটেরিয়া এতটাই শক্তিশালী যা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।

দুই ধরনের খাবারেই ‘প্রোটিয়াস’ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। কিডনিতে পাথর জমাতে এই ব্যাকটেরিয়া কাজ করে। এছাড়াও, ক্লেবসিয়েলা, সালমোনেলা, ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ার সন্ধানও পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও কলেরার মতো রোগের জন্ম দিতে পারে। প্রতিদিন ক্যান্টিনে খাবারের মাধ্যমে এমন আরও ৯ ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আলিম বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনের ক্যাফে, সায়েন্স লাইব্রেরির পাশের ক্যাফেসহ হলের বাইরে যে ক্যাফেটেরিয়াগুলো আছে, সেগুলোর খাবারের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। এই গবেষণার দুই পদের খাবারে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি যা মানুষের প্রাণ নাশের মতোই শক্তিশালী।  

তিনি বলেন, হলের খাবার যেহেতু রান্না করার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা খেয়ে থাকে তাই ঐ খাবারে বাইরের ক্যাফে থেকে তুলনামূলক ক্ষতি কম হয়। বাইরে ক্যাফেগুলোতে খাবার রেখে দেওয়া হয় ফলে দীর্ঘ সময় সেটি বাইরে অবস্থান করে এবং এতে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এই খাবার খাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।  

এ প্রসঙ্গে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হলের ক্যান্টিন মনিটরিংয়ের জন্য শিক্ষকদের একটি কমিটি করে দিয়েছি। একই সঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষ থেকে একজন করে পাঁচ জন শিক্ষার্থী ক্যান্টিন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবে। প্রতি মাসে এই পাঁচ জন পরিবর্তন করে নতুন পাঁচ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এভাবেই হলের খাবারের মান নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা করেছি।