নোবিপ্রবিতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বেড়েছে দুর্ভোগ, শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ
- Update Time : ০৬:০৬:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪
- / 64
এস আহমেদ ফাহিম, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ৫টি হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।রমজান মাসে প্রায় সবগুলো বিভাগে ক্লাস ও কিছু কিছু বিভাগে সেমিস্টার চলায় এই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে।ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত, ঘুমে সমস্যা ও পানি সংকটসহ নানান সমস্যায় ভোগান্তিতে পড়েছে হলগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এতে অসন্তোষ প্রকাশ করে জেনারেটর সুবিধা বাড়ানোর দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বন্ধের দিনে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। রমজান মাসে প্রায় সবগুলো বিভাগে ক্লাস ও কিছু কিছু বিভাগে সেমিস্টার চলায় এই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়েছে।এরফলে নির্বিঘ্নে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে। হলগুলো ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনগুলোতেও একই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে একাডেমিক কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ছে বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপিডি দফতর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল অর্ডারের একটি নির্দিষ্ট সময় জুড়ে জেনারেটর সুবিধা চালু রাখা হয়। অফিসিয়াল অর্ডারের চেয়ে বেশি সময় জেনারেটর চালু রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে এবং অনুমতি পেলে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন তারা।
দুর্ভোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের এক আবাসিক ছাত্রী বলেন, পরীক্ষা দিয়ে এসে দেখি কারেন্ট নাই। রুমমেট এর থেকে শুনলাম আরও ঘণ্টা খানেক আগে কারেন্ট গিয়েছে। গরমের মধ্যে শরীর অনেক খারাপ করে। সন্ধ্যার সময় কারেন্ট আসে। মাঝখানে ১০ মিনিটের জন্য এমনি এসে আবার চলে যায়। পরদিন নেক্সট এক্সিমের প্রিপারেশন এর জন্য ল্যাপটপ অন করে বসি। কারেন্ট আবার চলে যায়। ওয়াইফাই না থাকলে মোবাইল ডাটা দিয়ে তো এতক্ষণ চলা সম্ভব না। অনেককিছু সার্চ করা লাগে। ল্যাপটপ এর চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ ও হয়ে যায়। সব মিলিয়ে প্রচুর বিরক্তি কাজ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক স্পিকার আবদুল মালেক উকিল হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, গতবছর পরীক্ষার সময় আমরা পড়াশোনা করেছি তখন লোডশেডিং ছিল না যেটা এই বছর দেখা যাচ্ছে। পাঁচ মিনিট পরপর বিদ্যুৎ আসে আর যায়, যার কারণে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছি না। পরীক্ষা থাকায় উপায় না পেয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে আমাদের পড়তে হচ্ছে যা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য দুঃখজনক।
বঙ্গমাতা হলের এক আবাসিক ছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রথমত তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিদ্যুৎ না থাকলে অসহ্য গরম লাগে, হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। পানি সরবরাহের সমস্যা হয়, ফলে পানি সংকট দেখা দেয়। এছাড়া ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোতে চার্জ থাকে না, ফলে রমজানের মধ্যে অনলাইনে ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। ওয়াইফাই সুবিধা ও থাকে না।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে পানির সমস্যাতেও ভোগান্তি হচ্ছে উল্লেখ করে বিবি খাদিজা হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, খাদিজা হলের পানির লাইনগুলো এমনভাবে করা যে পানি আগে সামনের ব্লকে যায় এরপর পিছনের ব্লকে আসে। দেখা যায় সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় পানি নাই আবার দুপুরে এসেও পানি নাই। মাঝে যেই সময় হঠাৎ অল্প একটু আসে তখন যারা থাকে তারা পায় বা অনেক সময় দেখা যায় জানেও না। গতবছর পুরো গ্রীষ্মকাল এইভাবেই গেছে। সব হলে পানি থাকলেও খাদিজা হলের পিছনের ব্লকে দেখা যায় নাই।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, বিদ্যুৎ তো সরকারের হাতে, তারা কতক্ষণ দিবে না দিবে এটার ওপর আমাদের হাত নেই।
বিদ্যুৎ সরকারের হাতে থাকলেও জেনারেটর সুবিধাতো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। তবে কেন এ সুবিধা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় দেয়া হচ্ছে না।এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আমাদের অফিসিয়াল একটা অর্ডার আছে কয়টা থেকে কয়টা জেনারেটর চালু রাখবো বা কতক্ষণ চালু থাকবে। আর এর চেয়ে বেশি সময় জেনারেটর চালু রাখতে হলে অর্থের ব্যাপার আছে। ভিসি স্যার বা ট্রেজারার স্যার হচ্ছেন এটার অথোরিটি। উনারা যদি অনুমতি দেয় অতিরিক্ত সময় চালানোর তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, আমাদের একটা জেনারেটর নষ্ট। ঐটা ঠিক করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.দিদার-উল-আলম বলেন, আমরা অফডেতে হল এবং আবাসিক এলাকায় দিনের বেলায় জেনারেটর এর ব্যবস্থা করছি। দিনের বেলায় জেনারেটর থাকবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বলে দেওয়া হয়েছে।