ঢাবিতে ফাইরুজ অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় বাধ্যকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি
- Update Time : ১০:৫১:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০২৪
- / 92
জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার অভিযোগে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানববন্ধন ও মিছিল করেছে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।
শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুর ১২টায় মানববন্ধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি। বিকেল সাড়ে ৪টায় মানববন্ধন করে ছাত্র ফেডারেশন। সন্ধ্যায় অবন্তিকার আত্মহত্যাকে ‘পরিকল্পিত হত্যা’ দাবি করে মশাল মিছিল করে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে জবি শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় বাধ্য করে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা। একে ‘টেকনিক্যাল মার্ডার’ আখ্যা দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সদস্য এবং ঢাবির ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী রিফাত রাশিদ।
তিনি বলেন, ফাইরুজ আমার বড়বোনের মতো। ওনাকে আমি বহু আগে থেকেই চিনি, দীপ্ত প্রতিবাদী একজন মানুষ। তিনি কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারেন না। এটা একটা টেকনিক্যাল মার্ডার।
রিফাত রাশিদ বলেন, ফাইরুজ সুইসাইড পোস্টে স্পষ্ট করে বলে গিয়েছেন, সহপাঠী আম্মানের কাছে দিনের পর দিন তিনি হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়ে প্রক্টর দ্বীন ইসলামের কাছে ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু সেই প্রক্টরও হ্যারেজার আম্মানের দলে যোগ দেয়। তিনি কোনো বিচার পাননি, তার সাথে দিনের পর দিন পশুর মতো আচরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শত শত ফাইরুজকে আজ এভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। তিনি আত্মহত্যার মাধ্যমে এসবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি অত্যাচারিতদের পক্ষে অত্যাচারীর বিচার চেয়ে আত্মত্যাগ করেছেন। আমরা তার এ ত্যাগকে বৃথা যেতে দেব না।
আহ্বায়ক সদস্য ফারজানা আফিফা অদিতি বলেন, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী মহিলা, স্পিকার মহিলা সে দেশে মহিলারাই নিপীড়িত হচ্ছে। ফাইরুজ অবন্তিকা এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, শেষ পর্যন্ত তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আজকে আমাদের একটাই দাবি এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ছাত্র ফেডারেশনের মানববন্ধনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান নিশাদ বলেন, ফাইরুজের হত্যার মধ্য দিয়ে আমরা দেখি, কীভাবে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। তার মৃত্যুর পর ভিক্টিম ব্লেমিং খেলা শুরু হয়েছে।
কি এক ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে আমরা বাস করছি! বর্তমানে তারা এমন ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন, যার কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফলে সহকারী প্রক্টরের সহযোগিতা নিয়ে একজন নারীর ওপর দীর্ঘ সময় নিপীড়ন চালানো হয়।
ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টররা নিজেদের জমিদার মনে করেন। ঢাবিতে কয়েকদিন আগেও যৌন নিপীড়নের ঘটনা হলো। ঢাবির একদল শিক্ষার্থী রমজানের প্রোগ্রাম করার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হামলা করা হলো। প্রশাসন এসবের বিচার না করে বরং সমর্থন করল। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিতে ভয় পায়। কারণ, সামগ্রিকভাবে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানুষ জেগে উঠলে তখন লোক দেখানো দুয়েকটি বিচার হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ফারহানা মানিক মুনার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কার্যকরী সদস্য জিন্নাত আরা, ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, সংগঠক সীমা আক্তার, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নুসরাত হক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য সরকার।
উল্লেখ্য, ফাইরুজ অবন্তিকা জবির আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। গলায় ফাঁস দেয়ার আগে ফাইরুজ নিজে দীর্ঘ এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে প্ররোচনাকারী হিসেবে জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম এবং আইন বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকী আম্মানকে অভিযুক্ত করে যান।