ঢাবিতে সিজিএস এর উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

  • Update Time : ১০:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
  • / 58

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) এর উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ : রাষ্ট্রগঠন ও আন্তর্জাতিক আইনে গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) সেন্টারের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ।

সিজিএস এর পরিচালক ও ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, সম্মানিত আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, আমি সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে রোকেয়া হলে থাকতাম। ৭ মার্চ ভোর আনুমানিক পাঁচটার দিকে আমার দাদু শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আমাকে কুমিল্লা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার মাকে পাঠায়। আমি প্রথমে যেতে রাজি না হলেও পরে হলের প্রাধ্যক্ষের কথায় গাড়িতে উঠে কুমিল্লায় চলে যাই। কুমিল্লায় ফিরে যাওয়ার পর দাদুকে জিজ্ঞেস করি কেন আমাকে ফিরে যেতে বলা হল? প্রত্যুত্তরে দাদু আমাকে বললেন, আজ শেখের বেটা, বাঘের বাচ্চা, স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। রক্তের বন্যা বইবে। তোমাদের বয়সী ছেলে-মেয়েদের কচুকাটা করবে। তাই তোমাকে আমার ফিরিয়ে আনতেই হলো।

আরমা দত্ত বলেন, ৭ মার্চের আগেই বাঙালিদের মারা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে লালমনিরহাট এবং চিটাগাংয়ের দিকে বিহারিরা নির্মমভাবে বাঙালিদের মারতে লাগে। ৭ মার্চের দিন বিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হলো। আর কোনো টিভি-চ্যানেল নাই। কলকাতার দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় এবং বিবিসি বাংলা রাত ৮টায় ভাষণটি সম্প্রচার করল। আমার দাদা তখন অঝোরে কাঁদছেন আর বলছেন, বাঘের বাচ্চা শেখের বেটা। সে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে এসেছে। ঈশ্বরই তাকে প্রেরণ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘নান্দনিকতায় চিত্তাকর্ষক’। এই ভাষণ ছিল সুগভীর, দার্শনিক চিন্তা ও নান্দনিকতায় চিত্তাকর্ষক। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার ডাকই দেন নাই, ভবিষ্যতের রূপরেখাও তুলে ধরেছেন।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ৭ মার্চ নিয়ে একটি অনলাইন জরিপ চালিয়েছিলাম। যেখানে ৮০০ এরও বেশি তরুণ অংশ নেয়। সেখানে প্রশ্ন করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলে কোন দৃশ্যটি চোখে সবার আগে ভেসে ওঠে। ৭৪ শতাংশ লোকই বলেছিল  বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চে দেওয়া সেই ভাষণের দৃশ্যটি তাদের চোখে সর্বপ্রথম ভেসে ওঠে।

আতিউর রহমান বলেন, এই ভাষণ মহাকালের কথা বলে। এই ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তির চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছিলেন। সেদিনের ভাষণের মাধ্যমে মুক্তার মতো বের হয়ে এসেছিল বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো। অপূর্ব ভাষাভঙ্গি, কণ্ঠের ওঠানামা, ঘাড় ফিরিয়ে জনতার দিকে তাকানো, মাঝে মাঝে নিজের সঙ্গে কথা বলা, ফের হুঙ্কার, জনতার দীপ্ত আওয়াজ, পুরো জনতাকে মুক্তির অভিমুখে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এসব মিলিয়ে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল নান্দনিক।

তিনি আরও বলেন, তিনি একজন গণতান্ত্রিক, শান্তিবাদী ও আপসহীন নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে- বাঙালির প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই তিনি সবার মনে স্থান করে নিয়েছিলেন। তরুণ বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য কাজ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইতিহাসে নেলসন মেন্ডেলা, আব্রাহাম লিঙ্কন, রুজভেল্ট, মহাত্মা গাদ্ধী বা জহরলাল নেহেরু সহ আনেকের নাম আছে। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, বঙ্গবন্ধু অতুলনীয়। আমাদের বাংলাদেশের বলে বলছি না। পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে দেখুন, এরকম একজন মানুষ পৃথিবীর কোথাও আসেনি। তিনি আসলে বিশ্ববন্ধু।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঢাবিতে সিজিএস এর উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের উপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

Update Time : ১০:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) এর উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ : রাষ্ট্রগঠন ও আন্তর্জাতিক আইনে গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) সেন্টারের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত ।

সিজিএস এর পরিচালক ও ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, সম্মানিত আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, আমি সেই সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে রোকেয়া হলে থাকতাম। ৭ মার্চ ভোর আনুমানিক পাঁচটার দিকে আমার দাদু শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আমাকে কুমিল্লা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার মাকে পাঠায়। আমি প্রথমে যেতে রাজি না হলেও পরে হলের প্রাধ্যক্ষের কথায় গাড়িতে উঠে কুমিল্লায় চলে যাই। কুমিল্লায় ফিরে যাওয়ার পর দাদুকে জিজ্ঞেস করি কেন আমাকে ফিরে যেতে বলা হল? প্রত্যুত্তরে দাদু আমাকে বললেন, আজ শেখের বেটা, বাঘের বাচ্চা, স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। রক্তের বন্যা বইবে। তোমাদের বয়সী ছেলে-মেয়েদের কচুকাটা করবে। তাই তোমাকে আমার ফিরিয়ে আনতেই হলো।

আরমা দত্ত বলেন, ৭ মার্চের আগেই বাঙালিদের মারা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে লালমনিরহাট এবং চিটাগাংয়ের দিকে বিহারিরা নির্মমভাবে বাঙালিদের মারতে লাগে। ৭ মার্চের দিন বিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হলো। আর কোনো টিভি-চ্যানেল নাই। কলকাতার দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় এবং বিবিসি বাংলা রাত ৮টায় ভাষণটি সম্প্রচার করল। আমার দাদা তখন অঝোরে কাঁদছেন আর বলছেন, বাঘের বাচ্চা শেখের বেটা। সে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে এসেছে। ঈশ্বরই তাকে প্রেরণ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ‘নান্দনিকতায় চিত্তাকর্ষক’। এই ভাষণ ছিল সুগভীর, দার্শনিক চিন্তা ও নান্দনিকতায় চিত্তাকর্ষক। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার ডাকই দেন নাই, ভবিষ্যতের রূপরেখাও তুলে ধরেছেন।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ৭ মার্চ নিয়ে একটি অনলাইন জরিপ চালিয়েছিলাম। যেখানে ৮০০ এরও বেশি তরুণ অংশ নেয়। সেখানে প্রশ্ন করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলে কোন দৃশ্যটি চোখে সবার আগে ভেসে ওঠে। ৭৪ শতাংশ লোকই বলেছিল  বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চে দেওয়া সেই ভাষণের দৃশ্যটি তাদের চোখে সর্বপ্রথম ভেসে ওঠে।

আতিউর রহমান বলেন, এই ভাষণ মহাকালের কথা বলে। এই ভাষণে তিনি বাঙালির মুক্তির চূড়ান্ত বার্তা দিয়েছিলেন। সেদিনের ভাষণের মাধ্যমে মুক্তার মতো বের হয়ে এসেছিল বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো। অপূর্ব ভাষাভঙ্গি, কণ্ঠের ওঠানামা, ঘাড় ফিরিয়ে জনতার দিকে তাকানো, মাঝে মাঝে নিজের সঙ্গে কথা বলা, ফের হুঙ্কার, জনতার দীপ্ত আওয়াজ, পুরো জনতাকে মুক্তির অভিমুখে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এসব মিলিয়ে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি ছিল নান্দনিক।

তিনি আরও বলেন, তিনি একজন গণতান্ত্রিক, শান্তিবাদী ও আপসহীন নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে- বাঙালির প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন। মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই তিনি সবার মনে স্থান করে নিয়েছিলেন। তরুণ বয়স থেকেই বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তির জন্য কাজ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ইতিহাসে নেলসন মেন্ডেলা, আব্রাহাম লিঙ্কন, রুজভেল্ট, মহাত্মা গাদ্ধী বা জহরলাল নেহেরু সহ আনেকের নাম আছে। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, বঙ্গবন্ধু অতুলনীয়। আমাদের বাংলাদেশের বলে বলছি না। পৃথিবীর ইতিহাস পড়ে দেখুন, এরকম একজন মানুষ পৃথিবীর কোথাও আসেনি। তিনি আসলে বিশ্ববন্ধু।