আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারা হয়েছে ইসলামী মাহফিল করার জন্য : আসিফ নজরুল

  • Update Time : ০৫:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • / 75

ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইন বিভাগের যেসকল শিক্ষার্থীকে মারা হয়েছে, তাদের মারা হয়েছে ইসলামী মাহফিল করার জন্য। আমি অনেক খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমাদের যেসব শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে তারা শিবির কেন, কোনো সংগঠনের সঙ্গেই জড়িত নয়। শিবির ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলোতে এই রাজনীতি নতুন না।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় ঢাবির আইন অনুষদের সামনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মানববন্ধন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপাচার্য বরাবর বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে স্মারকলিপি দেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে আসিফ নজরুল বলেন, ধারণা করে, মিথ্যা অভিযোগ করে কাউকে মারতে পারেন না আপনারা। এটা গুরুতর অপরাধ, ফৌজদারি অপরাধ। আমি অনেক খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমাদের যেসব শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে তারা শিবির কেন, কোনো সংগঠনের সঙ্গেই জড়িত নয়। আমি মনে করে তাদের শিবির করার জন্য মারা হয়নি, তাদের মারা হয়েছে ইসলামী মাহফিল করার জন্য। বাংলাদেশের মুসলমানরা ধর্মীয় সমাবেশ করবে সেটার জন্য মার খাবে সেটার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম?

অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, আমরা ছাত্রলীগ কিংবা সরকারকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের যদি এতই শিবির ভীতি থাকে তাহলে আইন করে শিবিরকে নিষিদ্ধ করেন না কেন?

ছাত্রলীগের শীর্ষনেতারা আছে তারা সবাই আইন বিভাগের ছাত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে শিক্ষক হিসেবে আপিল করছি। তোমরা কি মনে কর ইসলামী মাফফিল করার জন্য বহিরাগত ছাত্রলীগের গুণ্ডারা তোমাদের জুনিয়রদের মারার অধিকার রাখে? তোমাদের ছোট ভাইদের রক্তাক্ত চেহারা দেখে কি তোমাদের মনে কোনো বেদনার উদ্রেক হয় না? তোমাদের কাছে আপিল করলাম- এসব বহিরাগত গুণ্ডাদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার কর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কি ভূমিকা রাখছেন, এ প্রশ্ন রেখে গেলাম।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান। মানববন্ধনে হামলার শিকার হওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাফওয়ান বলেন, আমাদের এই প্রোগ্রামে হামলা হবে আমরা ভাবতেও পারিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাস বলে আমরা যেটাকে মনে করি সেখানে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতারা এসে আমিসহ আমার সহপাঠীদের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করে। আমরা জানি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যারা আছেন তারা আমাদের বিভাগের। তাদের বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও যদি আমাদের এভাবে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হতে হয় আর তারা তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা কিভাবে তাদের সিনিয়র ভাই মনে করব। আমরা এ হামলার কঠিন বিচার চাই।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার আইন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী যোহরের নামাজ পড়তে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে আসেন। এসময় তারা নামাজের শেষেই রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাসলা মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে বাধা দেন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কর্মচারি সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। এখানে আলোচনা করা উপাচার্য ও প্রক্টর থেকে নিষেধ করা আছে বলে জানান তিনি। এসময় সেখানে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজন এসে তাদের মসজিদ থেকে বের হতে বলেন।

পরে শিক্ষার্থীরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আইন বিভাগের দিকে যেতে চাইলে গেটের মুখেই তাওহীদুল ইসলাম সুজন ও তার অনুসারী প্রায় ৪৫-৫০ জন তাদের উপর হামলা করে। তাদেরকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের মুখ, নাক, পিঠ সহ দেহের বিভিন্ন অংশে জখম করা হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারা হয়েছে ইসলামী মাহফিল করার জন্য : আসিফ নজরুল

Update Time : ০৫:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আইন বিভাগের যেসকল শিক্ষার্থীকে মারা হয়েছে, তাদের মারা হয়েছে ইসলামী মাহফিল করার জন্য। আমি অনেক খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমাদের যেসব শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে তারা শিবির কেন, কোনো সংগঠনের সঙ্গেই জড়িত নয়। শিবির ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলোতে এই রাজনীতি নতুন না।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় ঢাবির আইন অনুষদের সামনে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

মানববন্ধন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও উপাচার্য বরাবর বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে স্মারকলিপি দেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে আসিফ নজরুল বলেন, ধারণা করে, মিথ্যা অভিযোগ করে কাউকে মারতে পারেন না আপনারা। এটা গুরুতর অপরাধ, ফৌজদারি অপরাধ। আমি অনেক খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমাদের যেসব শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে তারা শিবির কেন, কোনো সংগঠনের সঙ্গেই জড়িত নয়। আমি মনে করে তাদের শিবির করার জন্য মারা হয়নি, তাদের মারা হয়েছে ইসলামী মাহফিল করার জন্য। বাংলাদেশের মুসলমানরা ধর্মীয় সমাবেশ করবে সেটার জন্য মার খাবে সেটার জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম?

অধ্যাপক আসিফ নজরুল আরও বলেন, আমরা ছাত্রলীগ কিংবা সরকারকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের যদি এতই শিবির ভীতি থাকে তাহলে আইন করে শিবিরকে নিষিদ্ধ করেন না কেন?

ছাত্রলীগের শীর্ষনেতারা আছে তারা সবাই আইন বিভাগের ছাত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তোমাদের কাছে শিক্ষক হিসেবে আপিল করছি। তোমরা কি মনে কর ইসলামী মাফফিল করার জন্য বহিরাগত ছাত্রলীগের গুণ্ডারা তোমাদের জুনিয়রদের মারার অধিকার রাখে? তোমাদের ছোট ভাইদের রক্তাক্ত চেহারা দেখে কি তোমাদের মনে কোনো বেদনার উদ্রেক হয় না? তোমাদের কাছে আপিল করলাম- এসব বহিরাগত গুণ্ডাদের ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার কর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য কি ভূমিকা রাখছেন, এ প্রশ্ন রেখে গেলাম।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান। মানববন্ধনে হামলার শিকার হওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাফওয়ান বলেন, আমাদের এই প্রোগ্রামে হামলা হবে আমরা ভাবতেও পারিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরাপদ ক্যাম্পাস বলে আমরা যেটাকে মনে করি সেখানে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতারা এসে আমিসহ আমার সহপাঠীদের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করে। আমরা জানি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা যারা আছেন তারা আমাদের বিভাগের। তাদের বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও যদি আমাদের এভাবে ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হতে হয় আর তারা তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা কিভাবে তাদের সিনিয়র ভাই মনে করব। আমরা এ হামলার কঠিন বিচার চাই।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার আইন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী যোহরের নামাজ পড়তে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারে আসেন। এসময় তারা নামাজের শেষেই রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাসলা মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে বাধা দেন বঙ্গবন্ধু টাওয়ার কর্মচারি সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। এখানে আলোচনা করা উপাচার্য ও প্রক্টর থেকে নিষেধ করা আছে বলে জানান তিনি। এসময় সেখানে শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম সুজন এসে তাদের মসজিদ থেকে বের হতে বলেন।

পরে শিক্ষার্থীরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আইন বিভাগের দিকে যেতে চাইলে গেটের মুখেই তাওহীদুল ইসলাম সুজন ও তার অনুসারী প্রায় ৪৫-৫০ জন তাদের উপর হামলা করে। তাদেরকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের মুখ, নাক, পিঠ সহ দেহের বিভিন্ন অংশে জখম করা হয়।