সেঞ্চুরির পথে আলুর দাম!

  • Update Time : ০৯:৩৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / 117

সেঞ্চুরি হওয়ার পথে এখন আলুর দাম। ভরা মৌসুমে সাধারণত বাজারে নতুন আলু উঠলেই দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। বাজারে নতুন আলু উঠছে, পুরোনো আলুও আছে। কিন্তু দাম কমার বদলে বাড়ছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসেও পুরোনো আলু বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। অথচ অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে পুরোনো আলুর চাহিদা একেবারে পড়ে যেত এবং দামও কমত। ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, এখনো নতুন আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ হয়নি। সে কারণে নতুন ও পুরোনো দুই ধরনের আলুর দামই বাড়তি।

রাজধানীর মিরপুর, মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে নতুন ও পুরনো আলুর কেজি পড়ছে ৮০ টাকা। পুরনো আলুর দাম কোথাও কোথাও একটু কমে ৭০ টাকা কেজিতেও মিলছে। আবার নতুন আলু আকারে বেশি ছোট হলে সেটির দামও একটু কম রাখা হয়। আবার স্থানভেদে মহল্লার ভ্রাম্যমাণ দোকান গুলোতে আলুর দাম হাকা হচ্ছে নব্বই টাকা কেজি দরে।

তবে একটু বড় সাইজের যেকোনো আলুই ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গত সপ্তাহ থেকে উভয় পদের আলুর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের সবচেয়ে বড় আলুর আড়তদার মো. সবুজ জানান, তার দোকান বিক্রমপুর ভাণ্ডারে প্রতিদিন ২০ টন আলু পাইকারি বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, আলুর দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। সোমবার পাইকারি ৬৮ টাকা কেজি দরে পুরনো আলু বিক্রি করেছি। গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ৪৭-৪৮ টাকায়। আলুর সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বেড়েছে। মুন্সীগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুরে আলুর খুব সংকট চলছে, পাওয়া যাচ্ছে না। অতি বৃষ্টি ও ঢলে দুই দফায় আলুর বিজ নষ্ট হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

আবুল হোসেন নামের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, বস্তার ওজন, মাটি, ফাটা আলু এসব কারণে ১০ শতাংশ আলু নষ্ট হয়। সেজন্য পুরনো আলু পাইকারিতে ৬৮ করে কিনলেও খুচরায় আমাদের ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারত থেকে আলু আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণেও বাজার চড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এ সময়ে এবারই সর্বোচ্চ দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নভেম্বরেও আলুর কেজি ৫০ টাকার আশপাশে ছিল। এবার অন্যান্য সবজির দামও বেশি। এটিও আলুর বাড়তি দামের আরেকটি কারণ।

এদিকে শুধু রাজধানীতে নয়, আমদানি বন্ধের অযুহাতে জেলাপর্যায়েও আগুন দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। সিলেটে আলুর দাম কেজিতে ৮০ টাকা হয়েছে। বাজারে নতুন আলু আসার পরও দামবৃদ্ধির জন্য আমদানি বন্ধকে দায়ী করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। যদিও আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বাজারে নামবেন বলে জানিয়েছেন বাজার মনিটরিং টিম।

সিলেট জেলা জ্যৈষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, হঠাৎ করে আলুর দাম বেড়েছে। বাজারে ৬৫ থেকে ৭০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমরা এর কারণ খুঁজছি। সোমবার বড়দিনের সরকারি ছুটি ছিল। মঙ্গলবার বাজার মনিটরিংয়ে নেমে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানব।

জয়পুরহাটের আলু ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, আগাম জাতের আলুর সরবরাহ কম হওয়ায় দাম কমছে না। তবে কয়েক দিনের মধ্যে আলুর সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম দ্রুত নেমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

সাইদুর রহমান একজন ক্রেতা। কারওয়ান বাজারে দেখা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি নিজে পুরনো আলুই খাই মূলত। নতুনটা ভালো লাগে না। তিন দিন আগেও ৫৫ টাকা কেজি দরে পুরনো আলু কিনেছি। এখন ৮০ টাকা চাচ্ছে। নতুন আলু তিন দিন আগে দেখেছিলাম ৫৫ টাকা কেজি। এখন ৭০ টাকার নিচে নেই।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


সেঞ্চুরির পথে আলুর দাম!

Update Time : ০৯:৩৫:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

সেঞ্চুরি হওয়ার পথে এখন আলুর দাম। ভরা মৌসুমে সাধারণত বাজারে নতুন আলু উঠলেই দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। বাজারে নতুন আলু উঠছে, পুরোনো আলুও আছে। কিন্তু দাম কমার বদলে বাড়ছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসেও পুরোনো আলু বেশ চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। অথচ অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে পুরোনো আলুর চাহিদা একেবারে পড়ে যেত এবং দামও কমত। ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, এখনো নতুন আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ হয়নি। সে কারণে নতুন ও পুরোনো দুই ধরনের আলুর দামই বাড়তি।

রাজধানীর মিরপুর, মালিবাগ, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে নতুন ও পুরনো আলুর কেজি পড়ছে ৮০ টাকা। পুরনো আলুর দাম কোথাও কোথাও একটু কমে ৭০ টাকা কেজিতেও মিলছে। আবার নতুন আলু আকারে বেশি ছোট হলে সেটির দামও একটু কম রাখা হয়। আবার স্থানভেদে মহল্লার ভ্রাম্যমাণ দোকান গুলোতে আলুর দাম হাকা হচ্ছে নব্বই টাকা কেজি দরে।

তবে একটু বড় সাইজের যেকোনো আলুই ৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গত সপ্তাহ থেকে উভয় পদের আলুর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের সবচেয়ে বড় আলুর আড়তদার মো. সবুজ জানান, তার দোকান বিক্রমপুর ভাণ্ডারে প্রতিদিন ২০ টন আলু পাইকারি বিক্রি হয়।

তিনি বলেন, আলুর দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। সোমবার পাইকারি ৬৮ টাকা কেজি দরে পুরনো আলু বিক্রি করেছি। গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ৪৭-৪৮ টাকায়। আলুর সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বেড়েছে। মুন্সীগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুরে আলুর খুব সংকট চলছে, পাওয়া যাচ্ছে না। অতি বৃষ্টি ও ঢলে দুই দফায় আলুর বিজ নষ্ট হওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।

আবুল হোসেন নামের একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, বস্তার ওজন, মাটি, ফাটা আলু এসব কারণে ১০ শতাংশ আলু নষ্ট হয়। সেজন্য পুরনো আলু পাইকারিতে ৬৮ করে কিনলেও খুচরায় আমাদের ৮০ টাকায় বিক্রি করতে হয়।

বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ভারত থেকে আলু আমদানি বন্ধ হওয়ার কারণেও বাজার চড়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এ সময়ে এবারই সর্বোচ্চ দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নভেম্বরেও আলুর কেজি ৫০ টাকার আশপাশে ছিল। এবার অন্যান্য সবজির দামও বেশি। এটিও আলুর বাড়তি দামের আরেকটি কারণ।

এদিকে শুধু রাজধানীতে নয়, আমদানি বন্ধের অযুহাতে জেলাপর্যায়েও আগুন দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। সিলেটে আলুর দাম কেজিতে ৮০ টাকা হয়েছে। বাজারে নতুন আলু আসার পরও দামবৃদ্ধির জন্য আমদানি বন্ধকে দায়ী করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। যদিও আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ খুঁজতে মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বাজারে নামবেন বলে জানিয়েছেন বাজার মনিটরিং টিম।

সিলেট জেলা জ্যৈষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, হঠাৎ করে আলুর দাম বেড়েছে। বাজারে ৬৫ থেকে ৭০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমরা এর কারণ খুঁজছি। সোমবার বড়দিনের সরকারি ছুটি ছিল। মঙ্গলবার বাজার মনিটরিংয়ে নেমে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানব।

জয়পুরহাটের আলু ব্যবসায়ী আশরাফ আলী বলেন, আগাম জাতের আলুর সরবরাহ কম হওয়ায় দাম কমছে না। তবে কয়েক দিনের মধ্যে আলুর সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম দ্রুত নেমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

সাইদুর রহমান একজন ক্রেতা। কারওয়ান বাজারে দেখা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি নিজে পুরনো আলুই খাই মূলত। নতুনটা ভালো লাগে না। তিন দিন আগেও ৫৫ টাকা কেজি দরে পুরনো আলু কিনেছি। এখন ৮০ টাকা চাচ্ছে। নতুন আলু তিন দিন আগে দেখেছিলাম ৫৫ টাকা কেজি। এখন ৭০ টাকার নিচে নেই।