ঢাবিতে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ

  • Update Time : ০৩:৪৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / 97

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন। কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, এ অধ্যাপক সব বর্ষেই এক দুইজন নারী শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেন। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায় না। আজকেও তাদেরকে কর্মসূচিতে আসতে দেওয়া হয়নি।

“দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য” উল্লেখ করে এ শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষে একই ইন্সটিটিউটের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিদা খানম হাফসা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি এ শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। আমার আগে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারাও যেন সুষ্ঠু বিচার পায়। ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন ঘটনার শিকার না হয় তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি বলেন, এ ঘটনার আগেও তার নামে অভিযোগ করা হয়েছে কিন্তু কোনো বিচার করা হয়নি। কিছু শিক্ষকদের জন্য নারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম, অফিস, ডিপার্টমেন্ট কোথাও নিরাপদ না, তাদেরকে আমরা ধিক্কার জানাই। নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করা হয়। এ হচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের চিত্র। নামেমাত্র একটি কমিটি গঠন করা হয় কিন্তু কোনো বিচার করা হয় না। এভাবে তো চলতে পারে না।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বলেন, শিক্ষকরূপী হায়েনা ও ধর্ষকদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই না। নুরুল ইসলামের মতো শিক্ষকরা বিষফোঁড়াতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য মাত্র পাঁচটি হল রয়েছে। এ সংকটে হলের জন্য পরামর্শ নিতে গেলে রুমে ডেকে যৌন হয়রানি করবে তা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না। এ কুলাঙ্গার শিক্ষকে জেলে দিতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, যে মেয়েটিকে হয়রানি করা হয়েছে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অথচ সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউট থেকে যারা আজকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আসতে চেয়েছে সে শিক্ষক তাদেরকে আটকে রেখেছে। তাদেরকে পরীক্ষায় কম নাম্বারের ভয় দেখানো হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় ভীতিকর সংস্কৃতি তৈরি করে শিক্ষককে এ দুঃসাহস দিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। এ শিক্ষক এর আগেও অনেককে হ্যারাসমেন্ট করেছে কিন্তু কেউ সাহস করে মুখ খুলেনি। আজকে একজন মুখ খুলেছে বিষয়টি ইতিবাচক, নীতিহীন এ শিক্ষকের বিচার করতেই হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নিজ কক্ষে ইনস্টিটিউটের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রী ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেন।

তারপর ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ ঘটনায় গত ৩০ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় তিন সদস্যের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি (তদন্ত কমিটি) গঠন করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ঢাবিতে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ

Update Time : ০৩:৪৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি) সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা।

রোববার (৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন। কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, এ অধ্যাপক সব বর্ষেই এক দুইজন নারী শিক্ষার্থীকে টার্গেট করেন। পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয়ে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায় না। আজকেও তাদেরকে কর্মসূচিতে আসতে দেওয়া হয়নি।

“দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য” উল্লেখ করে এ শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পক্ষে একই ইন্সটিটিউটের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিদা খানম হাফসা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি এ শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। আমার আগে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারাও যেন সুষ্ঠু বিচার পায়। ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন ঘটনার শিকার না হয় তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী অদিতি বলেন, এ ঘটনার আগেও তার নামে অভিযোগ করা হয়েছে কিন্তু কোনো বিচার করা হয়নি। কিছু শিক্ষকদের জন্য নারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম, অফিস, ডিপার্টমেন্ট কোথাও নিরাপদ না, তাদেরকে আমরা ধিক্কার জানাই। নারী শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি করা হয়। এ হচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের চিত্র। নামেমাত্র একটি কমিটি গঠন করা হয় কিন্তু কোনো বিচার করা হয় না। এভাবে তো চলতে পারে না।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বলেন, শিক্ষকরূপী হায়েনা ও ধর্ষকদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই না। নুরুল ইসলামের মতো শিক্ষকরা বিষফোঁড়াতে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য মাত্র পাঁচটি হল রয়েছে। এ সংকটে হলের জন্য পরামর্শ নিতে গেলে রুমে ডেকে যৌন হয়রানি করবে তা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না। এ কুলাঙ্গার শিক্ষকে জেলে দিতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, যে মেয়েটিকে হয়রানি করা হয়েছে সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অথচ সমাজকল্যাণ ইন্সটিটিউট থেকে যারা আজকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আসতে চেয়েছে সে শিক্ষক তাদেরকে আটকে রেখেছে। তাদেরকে পরীক্ষায় কম নাম্বারের ভয় দেখানো হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় ভীতিকর সংস্কৃতি তৈরি করে শিক্ষককে এ দুঃসাহস দিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। এ শিক্ষক এর আগেও অনেককে হ্যারাসমেন্ট করেছে কিন্তু কেউ সাহস করে মুখ খুলেনি। আজকে একজন মুখ খুলেছে বিষয়টি ইতিবাচক, নীতিহীন এ শিক্ষকের বিচার করতেই হবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নিজ কক্ষে ইনস্টিটিউটের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রী ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেন।

তারপর ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এ ঘটনায় গত ৩০ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় তিন সদস্যের ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি (তদন্ত কমিটি) গঠন করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ ।