লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ঢাবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে
- Update Time : ০৫:১৯:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
- / 131
ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “ঘরে বসে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন” দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাসির উদ্দীন ভূইয়া নামে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
এই টাকা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েরই কতিপয় শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নানা কৌশলে সংগ্রহ করেছেন। ডলার থেকে টাকা রূপান্তরের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে বড়লোক বানিয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিপদ-আপদের কথা বলেও অনেক টাকা নিতেন তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানান, একাধিক ফোন নাম্বার ও ফেসবুক আইডি থেকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতেন নাসির। মূলত বিদেশ থেকে পাঠানো ডলার ভাঙিয়ে টাকায় রূপান্তর করার ব্যবসায় খাটানোর জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে তাদের জানানো হতো।
জানা গেছে, এভাবে প্রায় ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন নাসির। নাসিরের বিকাশ, ব্যাংক একাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের তথ্য ইতোমধ্যেই বিডি সমাচারের হাতে এসেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, কখনও রিকশা ভাড়া নেই, বা মারাত্মক বিপদে পড়েছেন ইত্যাদি উল্লেখ করেও খুচরা ১০০-২০০ টাকা করে নিয়েছেন নাসির।
এ প্রসঙ্গে ঢাবির ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী জাকিয়া সুলতানা বলেন, নাসির উদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে ব্যবসায় টাকা ইনভেস্ট করা সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। সেটি দেখে তার সঙ্গে কথা বলি। আমি প্রথমে টাকা দিতে চাই নি। কিন্তু সপ্তাহ খানেক পরে তিনি নিজেই আমাকে মেসেজ দেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে (১০-১২ দিন) প্রচুর মুনাফা সহ সব টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। এতে আমার কাছে জমানো পাঁচ হাজার টাকা দিতে রাজি হই।
তিনি বলেন, এর পর বিভিন্নভাবে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার থেকে আরও টাকা চাওয়া হয়। আমি মোট বারো হাজার টাকা দিয়েছি। এখন উনি ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দিচ্ছেন না।
আরেক ভুক্তভোগী বিজয় একাত্তর হলের এক ছাত্রও একই রকম কথা বলেছেন। নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন, তিনিও উক্ত ফেসবুক পোস্ট দেখে এবং নাসিরের কথায় ভুলে টাকা দিয়েছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, আমি আমার ২ বছরে জমানো টিউশনির ৪০ হাজার টাকা তাকে দিয়েছি। সে ব্যবসার নামে এ টাকা নিয়ে আমাকে সকল সামাজিক মাধ্যমে ব্লক দিয়েছে। সব ধরনের ব্যালেন্স ট্রান্সফারের তথ্য তার কাছে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে নিরাপত্তা মঞ্চের আরাফাত (আরাফাত চৌধুরী) ভাইকে ২১ শে আগস্ট জানাই। তখন উনি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তাদের ছেলে নাসিরের সাথে যোগাযোগ নাই বলে জানায় ।
নাসির উদ্দীন ভূইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী। তবে দীর্ঘ দিন থেকে ডিপার্টমেন্টে তার কোনো যাতায়াত নেই। তিনি আগে ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলে থাকতেন ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নাসির উদ্দীন একটি নতুন মোটর সাইকেল কিনেছেন। তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত সকল নাম্বারই বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে নাসির উদ্দীনের ভাই মহিউদ্দিন রাসেল বিডি সমাচারকে বলেন, নাসির উদ্দীন এর আচরণে আমরা সবাই ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন সময় সে তার অপকর্মের জন্য বাড়িতে ক্ষমা চেয়েছে, এ ধরনের কাজে আর জড়াবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে।
নাসিরের আত্মসাৎ করা টাকা শোধ করা প্রসঙ্গে তার ভাই বলেন, এখন আমরা নাসিরের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমাদের পরিবারের অবস্থাও শোচনীয়। আব্বা-আম্মা অসুস্থ। নাসিরকে পেলে আমরা তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আদায়কৃত অর্থের ব্যাপারে একটা সমাধান করার চেষ্টা করবো।
নাসির এরকম কর্মকাণ্ডে আগে থেকেই জড়িত তা স্বীকার করে তার ভাই আরও বলেন, তার খোঁজ পেলে আমরা তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার কথা ভাবছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আরাফাত চৌধুরী বিডি সমাচারকে জানান, নাসির উদ্দীনের পরিবারের সাথে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাদের সার্বিক ভাবে সহায়তা করতে চেয়েছে। নাসিরের ভাই আমাকে জানিয়েছে সে ম্যালবেইট নামক এক বাজির ওয়েবসাইটে টাকা লাগায়। এ সব বিষয় নিয়ে তাকে মারধর করা হলে সে বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যায়। এখন পর্যন্ত তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
নাসিরের খোঁজ পেলে তার পরিবার তাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে চেয়েছে বলেও জানান আরাফাত চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত বিষয়ে নাসিরের বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বে একটি মামলাও করা হয়েছে।