ঢাবিতে অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ; ভিসিকে স্মারকলিপি
- Update Time : ০৯:৪২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৩
- / 130
জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আই.ই.আর) ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন কর্তৃক নিকাব পরিহিতা শিক্ষার্থীদের হেনস্তা এবং ভুক্তভোগীকে উগ্রবাদী আখ্যা দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০আগস্ট) দুপুর ২টায় সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে সাত জনের প্রতিনিধি দল।
এসময় অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান চাঁনকে নিকাব পরিহিতা শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, সম্প্রতি শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ৩য় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে নিকাব ও হিজাব পরিহিতাদের হেনস্থার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেখানে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য হিসেবে অপবাদ দিয়ে ভিক্টিম ব্লেমিং করেছেন এবং পর্দানশীন মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না এসে বাসায় পড়াশোনা করবে বলে রেসিস্ট মন্তব্য করেছেন।
এরূপ মন্তব্যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মেন্টাল ট্রমার শিকার হয়েছেন এবং নিকাব ও হিজাব পরিহিতাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে বলে দাবি করেন তারা।
তারা আরও জানান, কিছুদিন পূর্বে বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে দেয়া একটি নোটিশ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই নোটিশে পরিচয় শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার অজুহাতে সব ধরণের পরীক্ষা ও সংযোগ ক্লাসে, বিভাগের সকল শিক্ষার্থীকে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই নোটিশের ফলে বিভাগের প্র্যাক্টিসিং মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে। নোটিশের মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
পরে উপাচার্যের কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে সাত দফা দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো:
১. শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে পর্দানশিন শিক্ষার্থীদের হেনস্তা হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। নিকাব পরিধান করায় ভাইভা না নেওয়া শিক্ষার্থীর ভাইভা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
২. অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান চান কর্তৃক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য বলে অপবাদ দেওয়া এবং পর্দানশিন মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না এসে বাসায় পড়াশোনা করবে- এমন ‘রেসিজম’ করায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল করতে হবে।
৪.পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পরীক্ষার আগে নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে হিজাব ও নিকাব পরিহিতাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৫ দ্রুততম সময়ে সব অনুষদের সব বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করা বন্ধে নোটিশ দিতে হবে।
৬.বিভিন্ন সময়ে ক্লাস রুমে, ভাইবা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা অথবা কটূক্তির মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭.হিজাব বা নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করতে হবে এবং ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে অথবা ভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিকে বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইআর) মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষকদের সামনে নিকাব না খোলায় ভাইভা দিতে পারেননি এক শিক্ষার্থী। সেসময় অন্য আরেক শিক্ষার্থীকে জোর করে নিকাব খুলে ভাইভা নেওয়া হয়।
এ ঘটনা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে প্রকাশ করার পর ভাইভা বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক এম ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন সেই দুই নারী শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য হিসেবে আখ্যা দেন। এমনকি যারা পর্দা করে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে বাসায় থেকে পড়াশোনা করার কথা বলেন অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন।