ঢাবিতে ক্যান্টিনের দাবিতে মানববন্ধন, রুটিন পরিবর্তন চেয়ে ক্লাস বয়কট
- Update Time : ০৯:৩৫:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
- / 386
জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি:
ক্যান্টিন স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের শিক্ষার্থীরা। এসময় বক্তৃতার মধ্যে নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন তারা।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুরে কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় অর্ধ-শতাধিক শিক্ষার্থী এ মানববন্ধনে অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা ক্যান্টিন না থাকার ফলে সৃষ্ট দূর্ভোগের কথা মানববন্ধনে তুলে ধরেন।
তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও আইন বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন বলেন – “ক্যান্টিন না থাকায় শিক্ষার্থীদেরকে এই ক্যান্টিন, ঐ ক্যান্টিন দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কেবল পেট পুরার জন্য ক্যান্টিনের কথা বলছি না; কিন্তু খাবারের সাথে পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়ার একটা ব্যাপার তো অবশ্যই আছে। প্রশাসন কোন বাধার কারণে ক্যান্টিন দিতে অপরাগ হয়, আমাদের বলুক। প্রয়োজনে আমরা শিক্ষার্থীরা নিজেরা ক্যান্টিন দেবো।”
আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও আইন বিভাগের ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী সুজয় বসু বলেন – “এই দাবি কাজী মোতাহের ভবনের সকল শিক্ষার্থীর। ম্যাথ ক্যান্টিনে খেতে গিয়ে ইতিপূর্বে অনেকগুলো অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হয়েছে আইনের শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের উচিত অতিদ্রুত সকল স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয় করে ক্যান্টিন স্থাপন করা।”
ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাবি সংসদের আহ্বায়ক ও ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজি রাকিব হোসাইন বলেন – “কাজী মোতাহারে ক্যান্টিনের দাবি দীর্ঘদিনের। এখানে ক্যান্টিন না থাকায় মধ্যাহ্নভোজ বিরতিতে শিক্ষার্থীদের বেশ বিপাকে পড়তে হয়। ক্যান্টিন স্থাপনে আইন অনুষদের ডিন মহোদয়সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দ্রুত এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাই।”
মানববন্ধনটি সঞ্চালনা করেন আইন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া। এ সময় সালেহ উদ্দিন সিফাত, কামরুজ্জামান হৃদয়, ফাহিম শাহরিয়ার, সানজিদা সাবরিন, ফাতিহা অরমিন নাসের, ইশতিয়াক ফারদিন, আনিকা তাহসিনা, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী রাবিত হাসান সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তারা ক্যান্টিন না থাকায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস করতে ও অন্যান্য ক্যান্টিনে যেতে যে যে সমস্যার মুখোমুখি হন তা বর্ণনা করেন এবং ক্যান্টিন সমস্যার আশু সমাধানের দাবি জানান।
মানববন্ধনের শেষে সমাপণী বক্তব্য রাখেন আইন বিভাগের ৪৫ তম ব্যাচ ও কবি জসীম উদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরাফাতুল ওসমানী ।
এদিকে রুটিন পরিবর্তন সহ বিভিন্ন দাবিতে ক্লাস বয়কট করেছে আইন বিভাগের ৪৯,৪৭ ও ৪৬ তম ব্যাচ। ৪৮ তম ব্যাচের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর এখনও তাদের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয় নি।
ক্লাস বয়কট করার পিছনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভবনে ক্যান্টিন স্থাপন করা, দুটি সেকশন ব্যবস্থা বন্ধ করে একসাথে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা, শিক্ষকদের কর্তৃক পূর্ব-নোটিশ প্রদান ব্যতিরেকে হঠাৎ করে ক্লাস ক্যান্সেল-করা বন্ধ করা, ওয়াশ রুমে পর্যাপ্ত স্যানিটেশন এর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
জানা গেছে, ইতোমধ্যেই ক্লাস বয়কটের কারণগুলো উল্লেখ করে বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর তা হস্তান্তর করেছেন আইনের শিক্ষার্থীরা।
এ প্রসঙ্গে আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষকরা অনেক সময় কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই ক্লাস ক্যান্সেল করেন। এতে দূর থেকে আগত শিক্ষার্থীদের অনেক কষ্ট হয়। তীব্র যানযটের কারণে সমস্ত দিনটিই অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।
কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের নিজস্ব কোনো ক্যান্টিন না থাকায় এখানকার শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে বাইরের খাবার কিনে খেতে হয় বলে জানিয়েছেন ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন কখনও খুব সকালেই আমাদের ক্লাসে আসতে হয়। সারাদিন ক্লাস করতে হলে চাই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, যে কারণে একটি ক্যান্টিন আমাদের জন্য অপরিহার্য।
আইন বিভাগে অধ্যয়নরত জিয়াউর রহমান হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, আগে আমাদের সেকশন ছিল না। ক্লাস হতো একত্রে। একসাথে ক্লাস করতে তেমন কোনো সমস্যা হতো না। এখন সেকশন করায় প্রতিটা ক্লাসের মাঝখানে ১ ঘন্টা করে গ্যাপ রাখা হয়েছে ;- যে সময়ে না হলে এসে রেস্ট নেওয়া যায় না অন্য কোনো কাজে ঠিকমতো মনোনিবেশ করা যায়।
এছাড়া দুটি সেকশনে ক্লাস নিলে শিক্ষকের পাঠদানও কিছুটা ভিন্ন হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, একই ক্লাস হুবহু রিপিট করা তো সম্ভব হয় না, অনেক কিছু মনে না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই আমরা সকলেই চাই যেন এক সেকশনেই আমাদের ক্লাস নেওয়া হয়।