স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে বাড়ি ফিরতে মরিয়া মানুষ
- Update Time : ১১:০০:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুলাই ২০২১
- / 158
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধ শিথিলের পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। পথে পথে ভোগান্তি আর ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও যেন বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা চলছে মানুষের মধ্যে। তবে এসব মানুষের কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সবার মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে সবার মধ্যেই চরম উদাসীনতা ভাব।
বৃহস্পতিবার থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে মহাসড়কও আগের ব্যস্ত চেহারায় ফিরে গেছে। অপর দিকে আন্তঃনগর ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হলেও বাস ও লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি রীতিমত উপেক্ষিত। এছাড়া শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটে নেমেছে মানুষের ঢল।
গাবতলীতে বাড়িফেরা মানুষের অধিকাংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। যাত্রীদের ভিড়ের কারণে সেখানে নেই শারীরিক দূরত্ব। দূরপাল্লার বাসে দুই সিটে একজন করে নেয়া হলেও ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে মানা হচ্ছে না এই দূরত্ব। এসব যানে গাদাগাদি করে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। গাবতলী ছাড়াও মহাখালী, সায়েদাবাদসহ বেশিরভাগ টার্মিনালে দূরপাল্লার বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে মানুষকে। অনেক বাস কাউন্টারেও টিকিট না পেয়ে বিকল্প উপায়ে মানুষকে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষ ছাড়াও মহাসড়কে পশুবাহী ট্রাক বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। এর ফলে উত্তরের পথে যাওয়া এই মহাসড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গভীর রাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড় থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত মহাসড়কের প্রায় ২২ কিলোমিটার এলাকায় সড়কে যানবাহন চলছে থেমে থেমে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী ও চালকদের।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, সরকারের নির্দেশনা আমরা প্রতিপালন করব। তবে এর আগেও আমরা দেখেছি- গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও যাত্রীরা বিকল্প পরিবহনে যাতায়াত করেছেন। এবারও তাই দেখতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী করোনা সংকটে পতিত দেশের সাধারণ মানুষের ওপর গণপরিবহনগুলোর এহেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের জুলুম থেকে মুক্তি দিতে পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
ঈদযাত্রায় অন্যান্য সময়ের মতো যাত্রীদের হুড়োহুড়ি নেই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে। গতকাল সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, অনলাইনে টিকিট কাটা ও টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ করতে না দেয়ার কারণে স্টেশনে হুড়োহুড়ি নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। টিকিট চেক করে যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সঙ্গে হ্যান্ড মাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য যাত্রীদের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। পুরো স্টেশন জুড়ে ছড়িয়ে আছেন রোবার স্কাউটের সদস্যরা। কারো মুখে মাস্ক না থাকলে মাস্ক পরার অনুরোধ জানাচ্ছিলেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মানা সংক্রান্ত বিভিন্ন স্লোগানের ফেস্টুনও দেখা গেছে তাদের হাতে। যাত্রী প্রবেশ মুখেই রাখা আছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঈদকে সামনে রেখে নিরাপদ রেল ভ্রমণ উপহার দিতে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের। আমরা সেটা মানছি। মানুষকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পেরেছি।
স্টেশন ম্যানেজার বলেন, গত তিনদিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। সময়মতো ট্রেন স্টেশনে আসছে, স্টেশন ছেড়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঈদের যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। যাত্রীর চাপ সামনে আরও বাড়বে।
লকডাউন শিথিলের প্রথম ও দ্বিতীয় দিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। সেই তুলনায় গতকাল তৃতীয় দিন শনিবার এর দ্বিগুণ ভিড় দেখা গেছে। গাদাগাদি করে পাল্লা দিয়ে লঞ্চে ভিড় করছে মানুষ। উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই রাজধানী ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন হাজারো মানুষ। মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মানা দূরের কথা লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করতেও দেখা যায়নি। তারা শুধু যাত্রী নিতে ব্যস্ত। এছাড়া লঞ্চগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী নিতে দেখা গেছে। তবে এ বিষয় মানতে রাজি না বিআইডব্লিউটিএ ও লঞ্চ মালিকরা। তারা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ মেনেই লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, আমরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে লঞ্চ ছাড়ছি। স্বাস্থ্যবিধি মানতে সব লঞ্চ মালিকদের বলা হয়েছে। কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে না। আমরা এবার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছি। তবে, নৌযানে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানানো অনেক কষ্টকর বিষয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, যাত্রীরা সচেতন না হলে স্বাস্থ্যবিধি মানা অনেক কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মাস্ক পরা বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের কাছে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সে রকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেব। লঞ্চগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী এড়াতে সময়ের আগেই লঞ্চ ছেড়ে দিচ্ছি। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে সাধারণ সময়ে ১৫০টি লঞ্চ যাতায়াত করে। ঈদ মৌসুমে সেখানে শুধু সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে যায় ১২৫টি। তবে এবার ঈদের আগের দিনের অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে ৩০টি অতিরিক্ত বা বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে এগুলো ছাড়া হবে।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দক্ষিণবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে। সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে ছোটবড় যানবাহনে যাত্রীরা ঘাটে উপস্থিত হন। গত দুদিনের তুলনায় বেড়েছে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ। গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়ায় ফেরিতে যানবাহন পারাপারে বেগ পেতে হচ্ছে। ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় অবস্থান করছে ৮ শতাধিক ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাক। বাড়তি গাড়ির চাপে ব্যক্তিগত ও গণপরিবহনে আসা যাত্রীদেরও নদী পারাপারে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ।
বিআইডাব্লিউটিএ শিমুলিয়া নদী বন্দর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের চাপ রয়েছে। নৌরুটে বর্তমানে ৮২টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। অপর দিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়ছে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট এলাকায়। সকাল থেকেই যাত্রীবাহী পরিবহন ও ছোট গাড়ি ঘাট এলাকায় আসছে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় তবে পার হচ্ছে ঝামেলা ছাড়াই।
বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাট শাখার বাণিজ্য বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল বলেন, সকাল থেকেই ছোট গাড়ির বেশ চাপ রয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীবাহী পরিবহনের সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। বর্তমানে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
সূত্র:ইত্তেফাক