কুয়েতে পাপুলের সাজা লজ্জাজনক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

  • Update Time : ১২:১২:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২১
  • / 156
মশিয়ার রহমান:

কুয়েতে অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের কারাদণ্ড বাংলাদেশের জন্য ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন উনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন না, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন। এটা খুবই দুঃখজনক, অবশ্যই এটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক ব্যাপার।’

সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় প্রথম বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমেটিক টেনিস টুর্নামেন্টের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রায়ের বিষয়ে কুয়েত সরকার আমাদেরকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। সেখানে উনার বিচার হয়েছে, যেটা আমরা গণমাধ্যমের বদৌলতে শুনেছি। ওদেশের সরকার ওনার সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলেনি। প্রথম দিকে জানতে চেয়েছিলাম, তারা তখন রেসপন্স করেনি। আর এখন পেপারে দেখলাম ওনার শাস্তি হয়েছে, উনি জেলে আছেন অনেক দিন ধরে। আমরা সরকারিভাবে জানার জন্য আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি।’

সরকারিভাবে জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টা তারা আমাদের সরকারিভাবে জানালে পরে আমরা সংসদকে জানাব। তখন বিধি মোতাবেক উনার সম্পর্কে কি করা হবে, দেখা যাবে।’ কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানার জন্য রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘স্বদেশের নাগরিক বিদেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের লজ্জা লাগে। আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমাদের লোক যখন বিদেশে সম্মান পায়, আমরা সবাই খুব খুশি হই। নিউ ইয়র্কে যখন ট্যাক্সি ড্রাইভার সম্মানিত হয়, কেউ তার গাড়িতে টাকা-পয়সা ফেলে গেছে, সে সেটা ফেরত দিয়েছে। তখন মেয়র আমাদের বাংলাদেশের নাগরিককে সম্মাননা দেয়, আমাদের কলিজা গর্বে ভরে ওঠে। অপরদিকে আমাদের দেশের কেউ যদি বিদেশে ক্রাইম করে, তাহলে আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটা লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে পাপুলের সাজার ফলে কুয়েতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কুয়েতের সঙ্গে আমাদের বিভিন্নভাবে সম্পর্ক এবং সেটা অনেক দিনের পুরোনো। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে আমাদের ভালো সম্পর্ক। এই একটি ঘটনার কারণে আমাদের সম্পর্কের কোনো ঘাটতি হবে না। তবে আমাদের দেশের জন্য এটা একটা লজ্জাজনক ঘটনা, দুঃখের ব্যাপার।’

jagonews24

গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) অর্থ ও মানবপাচার মামলায় এমপি পাপুলের চার বছরের কারাদণ্ড দেন দেশটির ফৌজদারি আদালত। এছাড়া পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসেবে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩ কোটি টাকা।
 
গত ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সংসদ সদস্য পাপলুকে গ্রেফতার করে। ওই সময় গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের সরকারি কৌঁসুলিরা তিনটি অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগগুলো হলো- মানবপাচার, অবৈধ মুদ্রাপাচার এবং স্বদেশী কর্মীদের কাছে রেসিডেন্ট পারমিট বিক্রি।

পাঁচ বাংলাদেশি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বাংলাদেশিরা জানিয়েছিলেন, পাপুল তাদের কুয়েতে পাঠানোর জন্য প্রত্যেকের কাছে সোয়া আট লাখেরও বেশি করে টাকা নিয়েছেন। এছাড়া রেসিডেন্সি ভিসা নবায়নের জন্য প্রতি বছর পাপুলকে নতুন করে অর্থ প্রদান করতে হতো তাদের।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি কুয়েতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসেবে পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি সরবরাহ করেছিলেন, যাতে তিনি সেখানে যে সংস্থাটি চালাচ্ছিলেন তার চুক্তি পেতে পারেন।

কুয়েতের গণমাধ্যমও তার বিরুদ্ধে ভিসা বাণিজ্য ও অবৈধ অর্থপাচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সেই অর্থ পাঠানোর অভিযোগ তুলেছে। একটি সূত্রের বরাতে মিডল ইস্ট মনিটর জানিয়েছে, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন তিন সদস্যের মধ্যে একজন বাংলাদেশি এমপি রয়েছেন, যার স্ত্রীও একজন এমপি (সংরক্ষিত আসন)।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


কুয়েতে পাপুলের সাজা লজ্জাজনক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

Update Time : ১২:১২:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২১
মশিয়ার রহমান:

কুয়েতে অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের কারাদণ্ড বাংলাদেশের জন্য ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন উনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন না, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন। এটা খুবই দুঃখজনক, অবশ্যই এটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক ব্যাপার।’

সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় প্রথম বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমেটিক টেনিস টুর্নামেন্টের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রায়ের বিষয়ে কুয়েত সরকার আমাদেরকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। সেখানে উনার বিচার হয়েছে, যেটা আমরা গণমাধ্যমের বদৌলতে শুনেছি। ওদেশের সরকার ওনার সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলেনি। প্রথম দিকে জানতে চেয়েছিলাম, তারা তখন রেসপন্স করেনি। আর এখন পেপারে দেখলাম ওনার শাস্তি হয়েছে, উনি জেলে আছেন অনেক দিন ধরে। আমরা সরকারিভাবে জানার জন্য আমাদের রাষ্ট্রদূতকে বলেছি।’

সরকারিভাবে জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টা তারা আমাদের সরকারিভাবে জানালে পরে আমরা সংসদকে জানাব। তখন বিধি মোতাবেক উনার সম্পর্কে কি করা হবে, দেখা যাবে।’ কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানার জন্য রাষ্ট্রদূতকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘স্বদেশের নাগরিক বিদেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের লজ্জা লাগে। আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমাদের লোক যখন বিদেশে সম্মান পায়, আমরা সবাই খুব খুশি হই। নিউ ইয়র্কে যখন ট্যাক্সি ড্রাইভার সম্মানিত হয়, কেউ তার গাড়িতে টাকা-পয়সা ফেলে গেছে, সে সেটা ফেরত দিয়েছে। তখন মেয়র আমাদের বাংলাদেশের নাগরিককে সম্মাননা দেয়, আমাদের কলিজা গর্বে ভরে ওঠে। অপরদিকে আমাদের দেশের কেউ যদি বিদেশে ক্রাইম করে, তাহলে আমাদের প্রত্যেকের জন্য এটা লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে পাপুলের সাজার ফলে কুয়েতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কোনো সমস্যা হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘কুয়েতের সঙ্গে আমাদের বিভিন্নভাবে সম্পর্ক এবং সেটা অনেক দিনের পুরোনো। বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে আমাদের ভালো সম্পর্ক। এই একটি ঘটনার কারণে আমাদের সম্পর্কের কোনো ঘাটতি হবে না। তবে আমাদের দেশের জন্য এটা একটা লজ্জাজনক ঘটনা, দুঃখের ব্যাপার।’

jagonews24

গত বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) অর্থ ও মানবপাচার মামলায় এমপি পাপুলের চার বছরের কারাদণ্ড দেন দেশটির ফৌজদারি আদালত। এছাড়া পাপুলের কাজে সহায়তাকারী হিসেবে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ কুয়েতি দুই কর্মকর্তাকেও চার বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩ কোটি টাকা।
 
গত ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সংসদ সদস্য পাপলুকে গ্রেফতার করে। ওই সময় গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের সরকারি কৌঁসুলিরা তিনটি অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগগুলো হলো- মানবপাচার, অবৈধ মুদ্রাপাচার এবং স্বদেশী কর্মীদের কাছে রেসিডেন্ট পারমিট বিক্রি।

পাঁচ বাংলাদেশি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বাংলাদেশিরা জানিয়েছিলেন, পাপুল তাদের কুয়েতে পাঠানোর জন্য প্রত্যেকের কাছে সোয়া আট লাখেরও বেশি করে টাকা নিয়েছেন। এছাড়া রেসিডেন্সি ভিসা নবায়নের জন্য প্রতি বছর পাপুলকে নতুন করে অর্থ প্রদান করতে হতো তাদের।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি কুয়েতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসেবে পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি সরবরাহ করেছিলেন, যাতে তিনি সেখানে যে সংস্থাটি চালাচ্ছিলেন তার চুক্তি পেতে পারেন।

কুয়েতের গণমাধ্যমও তার বিরুদ্ধে ভিসা বাণিজ্য ও অবৈধ অর্থপাচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সেই অর্থ পাঠানোর অভিযোগ তুলেছে। একটি সূত্রের বরাতে মিডল ইস্ট মনিটর জানিয়েছে, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন তিন সদস্যের মধ্যে একজন বাংলাদেশি এমপি রয়েছেন, যার স্ত্রীও একজন এমপি (সংরক্ষিত আসন)।