চক্ষুহীনদের ক্ষমতা ও নেপোলিয়ানের ভয়
- Update Time : ০৬:৫২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জুলাই ২০২০
- / 118
পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে সেই দুঃখের চোখেরও পানি…ও আমার চক্ষু নাই…। কলিম শরাফীর কণ্ঠে শোনা গান। ‘সূর্যস্নান’ ছবিতে এ গানের সুর দিয়েছিলেন খান আতাউর রহমান। বন্ধু সৈয়দ বোরহান কবীরসহ অনেকেই বলেন, পুরাতন নিয়েই আমি আছি। বর্তমানে আর আসতে পারছি না। আসলেও তাই। যা দেখছি তাতে উত্তম-সুচিত্রার যুগই ভালো। সন্ধ্যা, লতা, মান্না, কিশোর, শ্যামল মিত্রেই মুগ্ধতা। এখনো বৃষ্টি এলে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়াই, চোখের পাতা যদি ছুঁয়ে দিয়ে যায়। বর্তমানকে মেলাই হৈমন্তীর গানের সঙ্গে। অসাধারণ দরদে গেয়েছেন, ‘আমি অবুঝের মতো একি করেছি… আমারি অজান্তে… একি করেছি…’ অবুঝের মতোই ভুলটা হয়। নষ্টামি, ভণ্ডামির মায়াজালে আগাছা-পরগাছা ভর করে সমাজ ও রাজনীতিতে। চোখ নেই বলে কেউ কিছু দেখে না। বুঝ আসে ভয়াবহরা ধরা পড়লে। তখন প্রচার হয়, ওরা আমাদের লোক নয়- বিএনপির লোক, অমুক ভবনের লোক। তাহলে আপনারা ওদের লোক নিয়েই ১২ বছর কাটিয়েছেন। নিজেদের দুঃসময়ের লোকগুলোকে দূরে সরিয়েছেন। চমৎকার অতীত বাদ দিয়ে লতাপাতা নিয়ে হেঁটেছেন। ঘাটে ঘাটে পাপিয়া, পাপুল, জি কে শামীম, মিঠুদের তৈরি করেছেন। এখন আজগুবি দোষ চাপিয়ে দায় এড়াচ্ছেন। কি চমৎকার সবকিছু!!
স্বাস্থ্য খাত আজ শেষ হয়ে গেছে। শতাধিক মিঠু, আবজালরা এ খাতের লুটেরা সেজে বারোটা বাজিয়েছে। ২০১২ সাল থেকে মিঠু সিন্ডিকেট নিয়ে লিখে আসছি। ক্ষমতাবানরা দেখেন না। চোখ না থাকলে দেখবেন কী করে? আগাছা নিয়ে চললে ব্যবস্থা নেবেন কী করে? সে সময় মিঠুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আবজাল, সাহেদ, সাবরিনা তৈরি হতো না। স্বাস্থ্য খাত বিপর্যয়ে পড়ত না। আন্তর্জাতিকভাবে ভাবমূর্তি নষ্ট হতো না। বিতর্কে পড়ত না দল ও সরকার। লোভের সাগরে ডুবত না সবকিছু। জানি মানুষ এখন বদলে গেছে। অপরাধ করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনের শাসন না থাকলে এমনই হয়। ক্যাসিনো বা ঠিকাদারি সিন্ডিকেট হয়। আর্থিক ও স্বাস্থ্য খাত এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে মাফিয়া তৈরি হয়। রাজনৈতিক গডফাদারদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়। আগাছারা পায় রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখেও না দেখার ভান করে। সব কা- সবার সামনেই হয়েছে। তার পরও কেউ কিছু দেখে না। চোখ নেই কারোই।
বহু বছর চলছে ওদের নিয়েই। ওরা ঢাকার বাইরে গেলে পুলিশের প্রটোকল পায়। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যায় মুজিবকোট পরে। প্রশ্ন জাগে, কীভাবে আমন্ত্রণ পেত? কারা পাঠাতেন আমন্ত্রণপত্র? কারা দিতেন নিরাপত্তা ছাড়পত্র। দলীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে বসতেন সামনের কাতারে। দলকে প্রতিনিধিত্ব করতেন টকশোয়। কেউ প্রশ্ন করতেন না। কেন করতেন না? কারণ কারও চোখ ছিল না। চোখ ছিল না বলেই ওদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের পার্টনার বানাতেন। তৈরি করতেন নতুন নতুন পাপুল, পাপিয়া। পাপুল এমপি পদ কিনেছেন। বুঝেছেন টাকা দিলে সবই হয়। স্ত্রীকেও এমপি করা যায়। চাইলে শ্যালক, শ্যালিকাকে বানাতে পারতেন। পাড়া-পড়শিকেও। তিনি দয়া করেছেন সমাজ ও রাজনীতিকে। সময় পেলে পাপিয়াও এমপি হতেন। এ রাষ্ট্র পাপুল, পাপিয়া, সাহেদ, সাবরিনা তৈরি করে। পাপুল ছিল মীর কাশেম আলীর ব্যবসায়িক পার্টনার। দিগন্ত গ্রুপে বিনিয়োগও করেছে। সে-ই পেয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থনের চিঠি। খোঁজ নেওয়ার সময় ছিল না কারও। প্রশাসনযন্ত্র ব্যস্ত দলীয় কাজে। দায়িত্ববানরা ব্যস্ত পাপুল, পাপিয়া, সাহেদ, মিঠু নিয়ে।
দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা মন্ত্রী-নেতা-উপদেষ্টাদের ড্রইংরুমে যেতে পারেন না। কিন্তু ওরা পারত। ওদের নিয়ে নেতারা যেতেন ক্লাবে, পাঁচতারা হোটেলের অনুষ্ঠানে। বসাতেন পাশে। উপকমিটিতে গাছের লতাপাতাদের নাম দিতেন যত্ন করে। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। দলে জবাবদিহি নেই। মাঠে বিরোধী দল নেই। সংসদের একই হাল। জাতীয় পার্টি কোন পক্ষ নিজেরাও জানে না। ’৭৯ সালে আওয়ামী লীগের ৩৯ সদস্য সংসদ কাঁপাতেন। সঙ্গে ছোটখাটো দলের আরও কিছু সদস্য। ’৮৬ সালের সংসদে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থানে। ’৯১ সালের সংসদ ছিল সবচেয়ে প্রাণবন্ত। সেই সংসদে বিরোধী দল আনীত বেসরকারি দিবসের বিলও পাস হয়েছে। সরকারি দল পরাজিত হয়েছিল কণ্ঠভোটে। ভাবা যায়? চোখের সামনে এখনো ভাসছে। নুরুল ইসলাম মণি ছিলেন স্বতন্ত্র সদস্য। তিনি বিল আনলেন সমুদ্র ও নৌপথ রক্ষায় কোস্টগার্ডের। এ বিলের ওপর আলোচনা শেষ হয়। ভোটাভুটির মুহূর্তে চিফ হুইপ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন খেয়াল করলেন, সরকারি দলের উপস্থিতি কম। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, স্বতন্ত্র মিলিয়ে বিরোধী দলের সদস্য বেশি। খোন্দকার দেলোয়ার উঠে দাঁড়ালেন। অনুরোধ করলেন ভোটাভুটি না করতে। বিল পরের সপ্তাহে নিয়ে যেতে। স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী অন্য রকম ব্যক্তিত্ব নিয়ে সংসদ চালাতেন। রাজ্জাক আলী সরকারি দলের চিফ হুইপকে বললেন, বেসরকারি কার্যদিবসে আপনার সহকর্মীরা থাকেন না কেন? ভোটে দেবই। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, স্বতন্ত্র সদস্যরা একদিকে থাকলেন। বিএনপি সরকারি দল হিসেবে বিপক্ষে। ভোটাভুটি হলো বিলের ওপর। সরকারি দল পরাজিত হলো। বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে নজির স্থাপিত হলো। এখন সেই সংসদ নেই। সেই নির্বাচন কমিশন নেই। সেই ব্যুরোক্রেসি নেই। সিএসপিদের মতো আভিজাত্য আশা করি না। কিন্তু ন্যূনতম কিছু কি আশা করতে পারি না? সেদিন দেখলাম, এক সচিব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখলেন, ‘সচিবরা বাঁচলে দেশ বাঁচবে’। শালীনতাবোধটুকুও উঠে গেছে। চক্ষুলজ্জা বলে কিছু নেই। সরকারি কর্মকর্তারা রাজনীতিবিদদের জায়গা কেন নিতে যাবেন? ভালোবাসা দেখাতে সরকারের নীতি ও নির্দেশগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলেই চলে। কর্মকর্তাদের বক্তৃতাবাজি কেন করতে হবে? কেন জড়াতে হবে সীমাহীন নির্লজ্জ দলবাজিতে।
আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সব প্রতিষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শেষ করার খেসারত দীর্ঘমেয়াদি। এখন একটা আরেকটাকে দোষারোপ করে লাভ নেই। জানি না কীভাবে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হবে। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল সব কাঠামো স্বাভাবিক করার প্রত্যয় নিয়ে। কিন্তু হিসাব মেলালে দেখা যায় দিন দিন বাজে সংস্কৃতির উপমা বাড়ছে। ’৯১ সালের সংসদে সরকারি দল-বিরোধী দল তুমুল লড়াই হতো। সে সময় আজকের কাগজ, ভোরের কাগজের সংসদ রিপোর্টার ছিলাম। কথায় কথায় পয়েন্ট অব অর্ডারে উঠে দাঁড়াতেন তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ অনেকে। নবীনরাও কম যেতেন না। অংশ নিতেন প্রাণবন্ত বিতর্কে। আবার মাগরিবের নামাজের সময় দুই দলের নবীন এমপিরা একসঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন ক্যান্টিনে। চায়ের কাপে ঝড় তুলছেন। সবাই সবার সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতেন। বিরোধী দলের এমপিরা যেতেন মন্ত্রীদের কাছে নিজের এলাকার উন্নয়ন নিয়ে। সেই রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। বিরোধী দল ও ভিন্নমত না থাকলে গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্তিশালী হয় না। সরকারও নিজের অজান্তে দুর্বল হয়ে পড়ে। হিংসা-বিদ্বেষের জন্ম হয়। আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়। তারা খবরদারি করে রাজনীতিবিদদের প্রতি। শক্তিশালী মন্ত্রিসভা থাকলে অনেক কিছু সামাল দিতে পারে। কিন্তু মন্ত্রিসভা দুর্বল হলেই সমস্যা বাড়ে।
রাজনীতি থাকা উচিত রাজনীতিবিদদের হাতে। গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে প্রাণবন্ত সংসদ দরকার। সংসদ জমজমাট থাকলে গণতন্ত্র স্বাভাবিক থাকে। নির্বাচন কমিশন ও রাষ্ট্রীয় অদৃশ্য শক্তিগুলো সে সুযোগ এবার হতে দেয়নি। সবাই মিলেমিশে অদ্ভুত কিসিমের ভোট করেছে। সে ভোট ক্ষতিগ্রস্ত করেছে শেখ হাসিনার ইমেজেরও। এ দেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন বঙ্গবন্ধু। আর ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শেখ হাসিনা। সেই ইমেজের বারোটা বাজিয়েছে অতি উৎসাহীরা। তারা গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল করেছে। মানুষের আশার আলোকে নিভিয়ে দিয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হতো। ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইমেজ ছিল অন্য উচ্চতায়। দেশে জোয়ার ছিল নৌকার পক্ষেই। ২০১৪ সালের পরিবেশ ছিল আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। কিন্তু ২০১৯ সাল ছিল আওয়ামী লীগের। বিপরীতে বিএনপি ছিল মামলায় জর্জরিত, দিশাহারা। দলীয় চেয়ারপারসন কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। আগুনসন্ত্রাস আর হরতালের রাজনীতি তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা ব্যস্ত ছিলেন মামলা সামাল দেওয়া নিয়ে। অনেক এলাকায় বিএনপি কর্মীরা মাঠেও নামতে পারেননি। কুমিল্লা ঘুরে দেখেছিলাম বাস্তবতা। তার পরও রাতের ভোট বিতর্কের কী দরকার ছিল? নিরপেক্ষ ভোট হলে কোনো সমস্যাই হতো না। বিরোধী দলের আসন নিয়ে জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপির লড়াই হতো। মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল পেত সংসদ। অতি উৎসাহীরা তা করতে দেয়নি। তারা সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিবাচক ধারা নষ্ট করেছে। মানুষের ভোটাধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
প্রাণবন্ত সংসদ গণতন্ত্রের অলঙ্কার। ’৯১ সালের সংসদের শুরুতে জাতীয় পার্টির এমপিরা হাউসে প্রবেশ করলেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি একসঙ্গে হইচই করত। স্বৈরাচার বলে গালাগাল দিত। ভোটে কাজী জাফর আহমদ জয়ী হন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে। পরে উপনির্বাচনে এরশাদের শূন্য আসনে লাঙ্গল নিয়ে রংপুর থেকে সংসদে আসেন মিজানুর রহমান চৌধুরী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। তারা সংসদে প্রবেশ করতেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি একসঙ্গে চিৎকার করত- স্বৈরাচার স্বৈরাচার। একদিন মিজান চৌধুরী বক্তব্য দিতে উঠে দাঁড়ান। চারদিকে চেঁচামেচি, চিৎকার, হইচই চলতে থাকে। মিজান চৌধুরী এর মাঝেই বলেন, শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। উনার সঙ্গে রাজনীতি করেছি। হইচই কিছুটা কমে। এরপর তিনি স্মরণ করলেন জিয়াউর রহমানকে। পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়। সর্বশেষ করলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের দুই নেত্রী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার প্রশংসা। সংসদে পিনপতন নীরবতা। এবার এলেন আসল কথায়। বললেন, দুই নেত্রীর অবদানেই চমৎকার এ সংসদ। এ সংসদকে আরও সুন্দর করতে মাননীয় স্পিকার অনুমতি দিন পাঁচটি আসনে নির্বাচিত সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সংসদে বসার। কারও প্রতিবাদের কিছু ছিল না। সে রকম একটি সংসদ হলে কী ক্ষতি হতো? বারো রকমের প্রতিহিংসায় আজ আমাদের সবকিছু তলানিতে ঠেকেছে।
এ লেখা শেষ করছি বিশ্বজয়ী নেপোলিয়ানের একটি গল্প দিয়ে। নেপোলিয়ান যেদিকে হেঁটে যেতেন মাটি কেঁপে উঠত। এ বীর যোদ্ধাও একবার ভয় পেয়েছিলেন। ভয়ে তার চোখমুখ উল্টে যাওয়ার উপক্রম। স্বাভাবিক হতে লাগে অনেক দিন। ঘটনা মিসরের। নেপোলিয়ান তখন সেনা কর্মকর্তা। ব্যাটল অব পিরামিডে জয়লাভ করে সিদ্ধান্ত নিলেন ফারাও খুপুর পিরামিডে একাকী থাকবেন কিছু সময়। একলা দেখবেন প্রকৃতির রহস্যকে। নেপোলিয়ান যা ভাবতেন তাই করতেন। ফারাও খুপু এ পিরামিড বানিয়েছিলেন। ভিতরে কিংস চেম্বারের পাশে কুইন্স চেম্বার। নেপোলিয়ান গিয়ে বসলেন কিংস চেম্বারে। তার সঙ্গে থাকা সবাইকে বের করে দিলেন। বললেন, তোমরা বাইরে গিয়ে অপেক্ষা কর। সেনারা পিরামিডের বাইরে অপেক্ষায়। কীভাবে সময় চলে গেল কেউ বুঝল না। সাত ঘণ্টা পর সেনারা খেয়াল করল ভিতর থেকে দৌড়ে বের হচ্ছেন নেপোলিয়ান। বাইরে এসেই বেহুঁশ হয়ে পড়লেন মাটিতে। তার দেহ চলছিল না। চেহারা ছিল ভীতসন্ত্রস্ত। বিড়বিড় করে বলছেন, আমি হারব… হারব… হারব… সময় ভীষণ কম। সেনারা তাকে জড়িয়ে ধরে। থরথর করে কাঁপছে বীরের শরীর। কেউ কোনো প্রশ্ন করছে না। সবাই অনুভব করছে, কিছু একটা দেখে নেপোলিয়ান ভয় পেয়েছেন। সে ভয়ের রেখা তার চোখেমুখে। সে রাতে নেপোলিয়ানের ঘুম হলো না। কমল না অস্থিরতা। এর মাঝে নীল নদে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সত্যি সত্যি তিনি হারলেন। প্রথম হার এ ঘটনার ১০ দিনের মাথায় ব্রিটিশ নৌ সেনাদের কাছে। পরাজিত নেপোলিয়ান দেশে ফিরলেন। দখল নিলেন ক্ষমতার। আবার শুরু করলেন লড়াই। লড়াইয়ে লড়াইয়ে কেটে যায় জীবন। ক্ষমতার অহংকার ছিল, শান্তি ছিল না। ভালো ছিল না শাসনক্ষমতার শেষটা। ক্ষমতা হারিয়ে যেতে হয়েছিল নির্বাসনে। তখন সহকর্মীরা প্রশ্ন করেন কী দেখে সেদিন ভীত হয়েছিলেন পিরামিডের ভিতরে। জবাবে বললেন, আমি এখনো বলব না, বলতে পারব না।… নেপোলিয়ান বলেননি। বলতে পারেননি। অথবা বলতে চাননি। এ জগৎ বড় রহস্যময়। এক অদৃশ্য ভয়ের দেয়াল জাগতিক রহস্যময়তাকে বাড়িয়ে দেয়।
লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন