“করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশবাসীর পাশে আওয়ামী লীগ”

  • Update Time : ০৯:১৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
  • / 224
সুজিত রায় নন্দী:
 
করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বৈশ্বিক এ সমস্যা বাংলাদেশেও সংকট সৃষ্টি করেছে। এ সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা তার অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা, দক্ষতা ও অদম্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। উন্নত দেশগুলোর নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও যেখানে তারা পর্যুদস্ত সেখানে এ-ধরনের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাংলাদেশের জন্যে খুবই দুঃসাধ্য একটি কাজ। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার মেধা, প্রজ্ঞা, সাহসিকতার সমন্বয়ে দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই করোনাভাইরাসের এ বৈশ্বিক দুর্যোগে বাংলাদেশকে এখনও একটি সহনীয় অবস্থায় রাখতে পেরেছেন। এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দক্ষ ও উদ্দীপনামূলক নেতৃত্বে।
.
তিনি প্রতিনিয়ত তার বক্তব্যের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন, উজ্জীবিত করেছেন। তিনি বলেন, “বাঙালি বীরের জাতি। নানা দুর্যোগে-সংকটে বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছে। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব।” জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি ধৈর্য ধরে সাহসিকতার সাথে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া, নিম্ন আয়ের মানুষদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় প্রণোদনা দেওয়া, পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের মজুদ বিষয়ে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করাসহ নানা ধরনের উৎসাহ প্রদানমূলক বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল মানুষকে সুরক্ষিত করার প্রয়াসে ৩১-দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন খাতে মোট প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের সংস্থাগুলোর জন্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) এবং মাঝারি শিল্পের চলতি মূলধন সরবরাহের জন্যে ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল, প্রবর্তিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)-এর সুবিধাগুলো বাড়ানোর জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, প্রাক-শিপমেন্ট ক্রেডিট পুনরায় অর্থ প্রকল্পের জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকা, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রদানের জন্যে ১০০ কোটি টাকা, ৭৫০ কোটি টাকার স্বাস্থ্য বীমা এবং জীবন বীমা। এছাড়া ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার খাদ্যসামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণের এই প্রণোদনা প্যাকেজ।
.
কৃষিতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, কৃষি ঋণ পুনঃতফসিল প্রকল্পে ৫ হাজার কোটি টাকা, স্বল্প আয়ের কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনরায় ফিনান্সিং স্কিম ৩ হাজার কোটি টাকা, ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি বাবদ ২৫১ কোটি টাকা, নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে নগদ বিতরণের জন্যে ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি বাবদ ৮১১ কোটি টাকা, গৃহহীন মানুষের জন্যে ঘর তৈরি বাবদ ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, বোরো ধান/চাল ক্রয়ের কার্যক্রম (অতিরিক্ত ২ লাখ টন) ৮৬০ কোটি টাকার এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বাবদ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। উপরন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৬ কোটি মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন, ১ কোটি মানুষকে রেশনের আওতায় এবং ৫০ লাখ মানুষকে আর্থিক সহায়তার আওতায় নিয়ে এসেছেন।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি-সহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, আমিসহ দপ্তর ও উপ-দপ্তর সম্পাদকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী দেশের সাধারণ মানুষের সেবা কাজে নিয়োজিত। বিশেষ করে করোনাভাইরাস দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ যারা সহযোগিতা চাইতে পারেন না, সেসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
.
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রায় শুরু থেকেই অর্থাৎ ১৭ মার্চ ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী হিসেবে বিশেষ ধরনের কেমিক্যালযুক্ত এন্টিসেপটিক সাবান, উন্নতমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, খাদ্য, বস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি ১০টি বিতরণ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন। উক্ত বিতরণ অনুষ্ঠানগুলোতে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উক্ত কার্যক্রমসমূহে সার্বিকভাবে সহায়তা করেছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির আট সদস্যের এক বিশেষ টিম।
.
আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, আমি, দপ্তর সম্পাদক ও উপ-দপ্তর সম্পাদক জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছি এবং প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি দেশব্যাপী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সব সময় জনগণের পাশে থেকে মানবিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্যে প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছি। এসব কার্যক্রমে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্যবৃন্দ।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত সারাদেশে ১ কোটি ২০ লাখেরও অধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে এবং ১০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। উপরন্তু পবিত্র রমজান মাসে এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
.
এছাড়াও ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী এবং ১ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ একেএম রহমতুল্লাহ এমপি ব্যক্তিগত ও শুভাকাক্সক্ষীদের অর্থায়নে নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ২০ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান ও প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার নগদ আর্থিক সহায়তাসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন।
.
আমার প্রচেষ্টায় ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি, প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছি। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাফফর হোসেন এমপি ব্যক্তিগত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে জামালপুর সদরে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী, আর্থিক সহায়তা ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দও তাদের সাধ্যমতো নিজ নিজ এলাকায় খাদ্যসামগ্রী, করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী, ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি কর্তৃক এ পর্যন্ত ৬০টিরও অধিক জেলা, ২০০টিরও অধিক উপজেলা, সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ৭৫টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের মাঝে এসব সামগ্রী বিতরণ করা হয়। বিশেষ করে ১৪-দলের মাধ্যমে বাসদ, গণআজাদী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, জাতীয় পার্টির কর্মীদের মাঝেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২০টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার ৫০০-এরও বেশি পিপিই, শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার এবং টুঙ্গিপাড়া, কোটালিপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদরে শুকনো খাবারসহ সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সায়েরা খাতুন মেডিকেল হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল, টুঙ্গিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কোটালিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাঁদপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, সাতকানিয়া ও লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পিপিই ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশেষ ধরনের এন্টিসেপটিক সাবান, দলীয় কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্যে উন্নতমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও উন্নতমানের সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করা হয়।
.
বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, খ্যাতনামা টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, ফটোজার্নালিস্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যামেরাম্যান যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদের মাঝে করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম, মিরপুর ক্যাথলিক চার্চ, তেজগাঁও চার্চ, জাতীয় বৌদ্ধ মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, হাইকোর্টের মাজার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেখানে অধিক পরিমাণে লোক সমাগমের সম্ভাবনা থাকে সেসব প্রতিষ্ঠানে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও হরিজন সম্প্রদায়, ঋষি সম্প্রদায়, বেদে সম্প্রদায়, দাফন-কাফন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি, জাতীয় মহাশ্মশান কমিটির সদস্যদের মাঝেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
উপরন্তু গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও গাজীপুর সদর হাসপাতালে করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য নন-ইনভেসিভ ভেনটিলেটর প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫০ সহস্রাধিক মাস্ক, ২০ সহস্রাধিক ১০০ এমএল-র উন্নতমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পাঁচ লক্ষাধিক পিছ বিশেষ ধরনের কেমিক্যালযুক্ত এন্টিসেপটিক সাবান ও ২.৫ হাজারেরও বেশি পিপিই বিতরণ করা হয়েছে।
.
এছাড়াও সামাজিক কল্যাণের অংশ হিসেবে করোনাভাইরাস সংকটকালীন সময়ে মানুষের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং আমার যৌথ তত্ত্বাবধানে প্রায় ১০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে চালুকৃত হটলাইন চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা-সুবিধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার আহ্বানে কেন্দ্র থেকে জেলা, জেলা থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের আর্থিক সহযোগিতায় এই খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি ও নগদ আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
.
যে কোনো দুর্যোগেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের দেশব্যাপী বন্যায় তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশ-বিদেশের নানান সংস্থা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দক্ষ নেতৃত্বে এবং সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে একজন মানুষও সে-সময়ে না খেয়ে মারা যায়নি। দেশরত্ন শেখ হাসিনার সেই দক্ষ ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আম্পান, ফণীসহ সুপার সাইক্লোনেও ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।
.
উপরন্তু সাম্প্রতিক শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি রোধে প্রাণহানিসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও কলারোয়া উপজেলা, খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলা এবং পটুয়াখালী জেলায় ২০০টি পিপিই, ১৫ হাজার পিছ বিশেষ ধরনের এন্টিসেপটিক সাবান, ৫ হাজার পিছ উন্নতমানের সার্জিক্যাল মাস্ক এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়।
.
দুর্যোগ মোকাবিলার এই ব্যাপক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনাভাইরাস সংকটে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার নিয়ে রাজধানীর কর্মহীন, অসহায় শ্রমজীবী ও ভাসমান মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
.
এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মটরচালক লীগ, আওয়ামী বাস্তুহারা লীগ, জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকেই কর্মহীন অসহায় শ্রমজীবী মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আসছেন। বিশেষ করে এ দুর্যোগের দিনে রমজান ও ঈদুল ফিতর আসায় ঐসব মানুষের মাঝে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দক্ষতার কারণে করোনা দুর্যোগে এ পর্যন্ত কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এবারও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সঞ্জীবনী মূলমন্ত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধে সারা বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলেন, তেমনি জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই করোনাভাইরাস সংকট থেকে উত্তরণ করে বাংলাদেশ আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিধ্বনি হবে এভাবেই “যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সংকটময় মুহূর্ত আসে। জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে। ইতোপূর্বে প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরার মতো মহামারি মানুষ প্রতিরোধ করেছে।”
.
লেখকঃ ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
.
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


“করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশবাসীর পাশে আওয়ামী লীগ”

Update Time : ০৯:১৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
সুজিত রায় নন্দী:
 
করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বৈশ্বিক এ সমস্যা বাংলাদেশেও সংকট সৃষ্টি করেছে। এ সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা তার অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা, দক্ষতা ও অদম্য নেতৃত্বের মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। উন্নত দেশগুলোর নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা থাকার পরেও যেখানে তারা পর্যুদস্ত সেখানে এ-ধরনের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাংলাদেশের জন্যে খুবই দুঃসাধ্য একটি কাজ। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার মেধা, প্রজ্ঞা, সাহসিকতার সমন্বয়ে দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণেই করোনাভাইরাসের এ বৈশ্বিক দুর্যোগে বাংলাদেশকে এখনও একটি সহনীয় অবস্থায় রাখতে পেরেছেন। এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দক্ষ ও উদ্দীপনামূলক নেতৃত্বে।
.
তিনি প্রতিনিয়ত তার বক্তব্যের মাধ্যমে সারাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন, উজ্জীবিত করেছেন। তিনি বলেন, “বাঙালি বীরের জাতি। নানা দুর্যোগে-সংকটে বাঙালি জাতি সম্মিলিতভাবে সেগুলো মোকাবিলা করেছে। ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছি। করোনাভাইরাস মোকাবিলাও একটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব।” জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি ধৈর্য ধরে সাহসিকতার সাথে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া, নিম্ন আয়ের মানুষদের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুরক্ষায় প্রণোদনা দেওয়া, পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যের মজুদ বিষয়ে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করাসহ নানা ধরনের উৎসাহ প্রদানমূলক বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল মানুষকে সুরক্ষিত করার প্রয়াসে ৩১-দফা নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন খাতে মোট প্রায় ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের সংস্থাগুলোর জন্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) এবং মাঝারি শিল্পের চলতি মূলধন সরবরাহের জন্যে ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল, প্রবর্তিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)-এর সুবিধাগুলো বাড়ানোর জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, প্রাক-শিপমেন্ট ক্রেডিট পুনরায় অর্থ প্রকল্পের জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকা, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রদানের জন্যে ১০০ কোটি টাকা, ৭৫০ কোটি টাকার স্বাস্থ্য বীমা এবং জীবন বীমা। এছাড়া ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার খাদ্যসামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণের এই প্রণোদনা প্যাকেজ।
.
কৃষিতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, কৃষি ঋণ পুনঃতফসিল প্রকল্পে ৫ হাজার কোটি টাকা, স্বল্প আয়ের কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনরায় ফিনান্সিং স্কিম ৩ হাজার কোটি টাকা, ১০ টাকা কেজি চাল বিক্রি বাবদ ২৫১ কোটি টাকা, নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে নগদ বিতরণের জন্যে ১ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি বাবদ ৮১১ কোটি টাকা, গৃহহীন মানুষের জন্যে ঘর তৈরি বাবদ ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, বোরো ধান/চাল ক্রয়ের কার্যক্রম (অতিরিক্ত ২ লাখ টন) ৮৬০ কোটি টাকার এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ বাবদ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। উপরন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৬ কোটি মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন, ১ কোটি মানুষকে রেশনের আওতায় এবং ৫০ লাখ মানুষকে আর্থিক সহায়তার আওতায় নিয়ে এসেছেন।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি-সহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, আমিসহ দপ্তর ও উপ-দপ্তর সম্পাদকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী দেশের সাধারণ মানুষের সেবা কাজে নিয়োজিত। বিশেষ করে করোনাভাইরাস দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ যারা সহযোগিতা চাইতে পারেন না, সেসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
.
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রায় শুরু থেকেই অর্থাৎ ১৭ মার্চ ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী থেকেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী হিসেবে বিশেষ ধরনের কেমিক্যালযুক্ত এন্টিসেপটিক সাবান, উন্নতমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, খাদ্য, বস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি ১০টি বিতরণ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন। উক্ত বিতরণ অনুষ্ঠানগুলোতে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উক্ত কার্যক্রমসমূহে সার্বিকভাবে সহায়তা করেছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির আট সদস্যের এক বিশেষ টিম।
.
আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপিসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, আমি, দপ্তর সম্পাদক ও উপ-দপ্তর সম্পাদক জেলা, মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছি এবং প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি দেশব্যাপী ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সব সময় জনগণের পাশে থেকে মানবিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্যে প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছি। এসব কার্যক্রমে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্যবৃন্দ।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত সারাদেশে ১ কোটি ২০ লাখেরও অধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে এবং ১০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। উপরন্তু পবিত্র রমজান মাসে এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
.
এছাড়াও ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিগত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী এবং ১ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান আলহাজ একেএম রহমতুল্লাহ এমপি ব্যক্তিগত ও শুভাকাক্সক্ষীদের অর্থায়নে নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ২০ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান ও প্রায় ৫০ লক্ষাধিক টাকার নগদ আর্থিক সহায়তাসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেন।
.
আমার প্রচেষ্টায় ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৮ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি, প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছি। ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাফফর হোসেন এমপি ব্যক্তিগত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অর্থায়নে জামালপুর সদরে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী, আর্থিক সহায়তা ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দও তাদের সাধ্যমতো নিজ নিজ এলাকায় খাদ্যসামগ্রী, করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী, ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি কর্তৃক এ পর্যন্ত ৬০টিরও অধিক জেলা, ২০০টিরও অধিক উপজেলা, সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, ৭৫টি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের মাঝে এসব সামগ্রী বিতরণ করা হয়। বিশেষ করে ১৪-দলের মাধ্যমে বাসদ, গণআজাদী লীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, জাতীয় পার্টির কর্মীদের মাঝেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২০টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ২ হাজার ৫০০-এরও বেশি পিপিই, শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার এবং টুঙ্গিপাড়া, কোটালিপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদরে শুকনো খাবারসহ সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোলজি বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, সায়েরা খাতুন মেডিকেল হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল, টুঙ্গিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কোটালিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চাঁদপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, সাতকানিয়া ও লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পিপিই ও করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রতিটি জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশেষ ধরনের এন্টিসেপটিক সাবান, দলীয় কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্যে উন্নতমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও উন্নতমানের সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করা হয়।
.
বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, খ্যাতনামা টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, ফটোজার্নালিস্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যামেরাম্যান যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাদের মাঝে করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম, মিরপুর ক্যাথলিক চার্চ, তেজগাঁও চার্চ, জাতীয় বৌদ্ধ মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, হাইকোর্টের মাজার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যেখানে অধিক পরিমাণে লোক সমাগমের সম্ভাবনা থাকে সেসব প্রতিষ্ঠানে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, করোনাভাইরাস প্রতিরোধসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও হরিজন সম্প্রদায়, ঋষি সম্প্রদায়, বেদে সম্প্রদায়, দাফন-কাফন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি, জাতীয় মহাশ্মশান কমিটির সদস্যদের মাঝেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
উপরন্তু গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও গাজীপুর সদর হাসপাতালে করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য নন-ইনভেসিভ ভেনটিলেটর প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫০ সহস্রাধিক মাস্ক, ২০ সহস্রাধিক ১০০ এমএল-র উন্নতমানের হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পাঁচ লক্ষাধিক পিছ বিশেষ ধরনের কেমিক্যালযুক্ত এন্টিসেপটিক সাবান ও ২.৫ হাজারেরও বেশি পিপিই বিতরণ করা হয়েছে।
.
এছাড়াও সামাজিক কল্যাণের অংশ হিসেবে করোনাভাইরাস সংকটকালীন সময়ে মানুষের সার্বক্ষণিক চিকিৎসা-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির উদ্যোগে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং আমার যৌথ তত্ত্বাবধানে প্রায় ১০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে চালুকৃত হটলাইন চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা-সুবিধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
.
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার আহ্বানে কেন্দ্র থেকে জেলা, জেলা থেকে উপজেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীদের আর্থিক সহযোগিতায় এই খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি ও নগদ আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
.
যে কোনো দুর্যোগেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। বিশেষ করে ১৯৯৮ সালের দেশব্যাপী বন্যায় তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশ-বিদেশের নানান সংস্থা ভবিষ্যৎ বাণী করেছিল ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দক্ষ নেতৃত্বে এবং সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে একজন মানুষও সে-সময়ে না খেয়ে মারা যায়নি। দেশরত্ন শেখ হাসিনার সেই দক্ষ ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আম্পান, ফণীসহ সুপার সাইক্লোনেও ক্ষয়ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।
.
উপরন্তু সাম্প্রতিক শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি রোধে প্রাণহানিসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর ও কলারোয়া উপজেলা, খুলনা জেলার কয়রা ও দাকোপ উপজেলা এবং পটুয়াখালী জেলায় ২০০টি পিপিই, ১৫ হাজার পিছ বিশেষ ধরনের এন্টিসেপটিক সাবান, ৫ হাজার পিছ উন্নতমানের সার্জিক্যাল মাস্ক এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়।
.
দুর্যোগ মোকাবিলার এই ব্যাপক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনাভাইরাস সংকটে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার নিয়ে রাজধানীর কর্মহীন, অসহায় শ্রমজীবী ও ভাসমান মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
.
এছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মটরচালক লীগ, আওয়ামী বাস্তুহারা লীগ, জাতীয় রিকশা-ভ্যান শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকেই কর্মহীন অসহায় শ্রমজীবী মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে আসছেন। বিশেষ করে এ দুর্যোগের দিনে রমজান ও ঈদুল ফিতর আসায় ঐসব মানুষের মাঝে ইফতার ও ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দক্ষতার কারণে করোনা দুর্যোগে এ পর্যন্ত কেউ না খেয়ে মারা যায়নি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় এবারও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সঞ্জীবনী মূলমন্ত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধে সারা বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘বাংলাদেশ’ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিলেন, তেমনি জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই করোনাভাইরাস সংকট থেকে উত্তরণ করে বাংলাদেশ আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিধ্বনি হবে এভাবেই “যুগে যুগে জাতীয় জীবনে নানা সংকটময় মুহূর্ত আসে। জনগণের সম্মিলিত শক্তির বলেই সেসব দুর্যোগ থেকে মানুষ পরিত্রাণ পেয়েছে। ইতোপূর্বে প্লেগ, গুটি বসন্ত, কলেরার মতো মহামারি মানুষ প্রতিরোধ করেছে।”
.
লেখকঃ ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
.