করোনা কালে কিছু শব্দের সহজ প্রয়োগ জরুরী

  • Update Time : ০৩:০৯:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০
  • / 300
মো: সুমন হোসেন:
সারা বিশ্ব এখন করোনাময়। এটি এখন করোনাকাল হিসেবেই সমধিক প্রতিষ্ঠিত। এসময়ে করোনা সম্পর্কিত বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে মেডিক্যাল সায়েন্সের কিছু দুর্বোধ্য শব্দ সাধারণ মানুষের সামনে এখন খুবই আলোচিত। কোভিড-১৯, লকডাউন, শাটডাউন, রেড জোন, ইয়েলো জোন, গ্রিন জোন, কোয়ারেন্টাইন, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সেল্ফ আইসোলেশন, ফিজিক্যাল/সোসাল ডিস্ট্যান্সিং বা শারীরিক/সামাজিক দূরত্ব, ভেন্টিলেশন, অক্সিজেন সাপ্লাই, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই, আইসিইউ, স্যাম্পল কালেকশন/নমুনা সংগ্রহ, পিপিই, মাস্ক/সাধারণ মাস্ক/এন৯৫ মাস্ক, টেস্ট, পিসিআর মেশিন, র‌্যাপিড টেস্ট কিট, টেস্ট কিট, হট লাইন, ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল, নন-কোভিড হাসপাতাল, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, থারমাল স্ক্যানিং, এক মিটার/তিন ফুট দূরে থাকা- ইত্যাদি আরো অনেক শব্দাবলি।
.
এমন শব্দগুলো এখন নিয়মিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে শোনা যাচ্ছে। তবে সবাই যে এসব শব্দের মানে বুঝে তা কিন্তু নয়। আমরা যারা শিক্ষিত জনগোষ্ঠিীর মধ্যে পড়ি তারাও এসকল মেডিক্যাল সায়েন্সের কারিগরি শব্দগুলোর মানে তাৎক্ষণিক বুঝে উঠতে পারি না। তাহলে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ কেমন করে এসব শব্দের মানে বুঝবে? অথচ করোনাকালে এসব প্রত্যেকটি শব্দের মানে সবাইকেই বুঝতে পারাটা খুবই জরুরি। কারণ প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য এগুলো সবাইকেই এখন মেনে চলতে হচ্ছে। সেগুলো যদি সবাই সাধারণভাবে বুঝতেই না পারে তবে পালন করবে কীভাবে? এটা অনেকটা ড্রাইভারদের নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল বুঝা, না বুঝার মতো।
.
সেখানেও দেখা গেছে অনেক শিক্ষিত মানুষও যেসকল ট্রাফিক সিগন্যালের মানে বুঝে না, সেগুলো অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত ড্রাইভারদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এক্সিডেন্ট আর এক্সিডেন্ট। তেমনিভাবেই মানুষ না বুঝেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের শিকার হয়ে দিচ্ছে প্রাণ। কাজেই কতৃপক্ষকে সহজভাবে, বোধগম্যতার সাথে, ব্যাখ্যাসহকারে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে থাকা দরকার। এখন নিম্নে আমি আমার নিজের ভাষায় বিগত কিছুদিনে গণমাধ্যমে দেখতে দেখতে এবং আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এগুলো সম্পর্কে একটু আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম।
.
নভেল করোনা ভাইরাল ডিজিজ যা প্রথম চীনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শনাক্ত হয়। তাই করোনা ভাইরাসজনিত রোগকেই কোভিড-১৯ নামে ডাকা হয়। অর্থাৎ করোনা হলো ভাইরাসের নাম আর কোভিড হলো এর দ্বারা সংঘটিত রোগের নাম। লকডাউন মানে হলো কোন স্থান বা এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল আটকে রাখা। আবার শাটডাউন হলো কোন কিছু বন্ধ করে দেওয়া। যেভাবেই বলা হোক না কেন মূল কাজটি হলো কোন নির্ধারিত এলাকায় অন্য এলাকা থেকে মানুষকে আটকে দেওয়া এবং সেটি কঠোরভাবে কার্যকর করা। রেড জোন, ইয়েলো জোন, গ্রিন জোন মানে হলো এসব রং দ্বারা আক্রান্তের তীব্রতা নির্ধারণ করে তদানুযায়ী লকডাউন কার্যকর করা।
.
কোয়ারেন্টাইন মানে সন্দেহভাজনদেরকে হাসপাতাল কিংবা বাড়িতে আলাদা করে রাখা যার কঠিন দুর্বোধ্য বাংলা হলো সংঘনিরোধ। আর সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন তো বুঝাই যাচ্ছে নিজে নিজেই আলাদা হয়ে যাওয়া। আইসোলেশন মানে আক্রান্তদেরকে হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে সুস্থদের থেকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া। আর সেল্ফ আইসোলেশন মানে নিজে নিজেই আলাদা হয়ে যাওয়া। শারীরিক দূরত্ব হলো একজন হতে অন্যজন নির্ধারিত কমপক্ষে এক মিটার/তিন ফুট দূরত্বে থাকা। অপরদিকে সামাজিক দূরত্ব হলো একদল মানুষ থেকে অন্যদল মানুষ নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবে। তবে এখানে সামাজিক দূরত্বের চাইতে শারীরিক দূরত্বই অধিক যুক্তিযুক্ত শব্দ। আমরা বিশ্ব জরিপ থেকে জানতে পারি, মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তের মাত্র ১০% রোগীর অক্সিজেন সাপ্লাই আর ৫% রোগীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেশন অর্থাৎ কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজন যা বিশেষ যন্ত্র ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়।
.
যেসব হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে সেসব হাসপাতাল কোভিড রোগীর জন্য অনেক নিরাপদ। এখন সারাদেশজুড়েই টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে যা আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। আরটি-পিসিআর হলো রিয়েল টাইম ‘রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন-পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন’ পরীক্ষার মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমেই সারাদেশ থেকে সংগৃহীত করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যারা কোভিড রোগীদের নমুনা সংগ্রহ, চিকিৎসা, নার্সিং, পরিবহন অথবা মৃত্যুর পর সৎকার ইত্যাদি কাজে সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে আসবে তাদের জন্য বিশেষ ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) প্রয়োজন হয়।
.
অপরদিকে কোভিড রোগী অথবা যারা অজান্তেই করোনা ভাইরাস বহন করছে তাদের মধ্য থেকে একে অপরকে যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য দুজনের মধ্যে কমপক্ষে এক মিটার/তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ প্রত্যেকে একটি করে মাস্ক পরিধান করবে। সে মাস্কটি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এন৯৫ অর্থাৎ কমপক্ষে ৯৫% নেটিংয়ের মাধ্যমে ভাইরাস প্রতিরোধী, অন্যরা কাপড়ের তৈরি তিনস্তর বিশিষ্ট পুণর্ব্যবহারযোগ্য সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে। অর্থাৎ এন৯৫ মাস্ক সাধারণ সকল মানুষের জন্য নয়। যেহেতু কোভিড নিয়ন্ত্রণের অন্যতম নিরোধক হলো হাত পরিষ্কার রাখা সেজন্য ঘরে বা কাজের জায়গায় থাকলে বারবার ধোয়া কিন্তু জার্নিতে থাকলে হাতকে জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত জীবাণুনাশককে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বলে।
.
অথবা সেটি করার বদলে হ্যান্ড গ্লাভস পড়তে হবে। আর সেটি সাধারণ মানুষের চেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেশি দরকার। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হলো জ্যামতিক হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে একজনের কাছ থেকে তিনজন, তিনজনের কাছ থেকে নয়জন, নয়জনের কাছ থেকে সাতাশজন…এভাবে বাড়তে থাকা। কোভিডের টেস্ট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যার দ্বারা পরীক্ষা করা হয় তাকে বলে টেস্ট কিট। টেস্ট যত বেশি হবে তার সুফল জনগণ তত বেশি পাবে। সেজন্য বলা হয় টেস্ট টেস্ট আর টেস্ট। আর তাড়াতাড়ি ফলাফল পাওয়ার জন্য র‌্যাপিড টেস্টের কথাও ন্তিা করা হচ্ছে। কাজেই চড়ামূল্যে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত টেস্টকিটের পাশাপাশি দেশীয় বিজ্ঞানীদের তৈরি র‌্যাপিড টেস্ট কিটের ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে। জ¦র যেহেতু কোভিডের প্রাথমিক লক্ষণ সেজন্য নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলাচলকৃত মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মাল স্ক্যানার মেশিন ব্যবহার করা হয়।
.
যেসকল হাসপাতালে বিশেষভাবে শুধুমাত্র কোভিড রোগীর চিকিৎসা করা হয় সেসকল হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল, তাছাড়া অন্যান্য হাসপাতালকে নন-কোভিড হাসপাতাল হিসেবে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। কাজেই এগুলো বিশেষায়িত শব্দগুলোকে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বোধগম্য হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। সেজন্য শব্দগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে আরো বেশি পরিচিত করার জন্য বেশি বেশি গণমাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। আরো বেশি জানা বা বুঝার জন্য আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস শুধু যে এবারেই শেষ হয়ে যাবে তা বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন না। তাই একে সাথে নিয়েই বেশ কিছুদিন চলতে হবে। সেজন্য এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কঠিন জটিল শব্দাবলি সকলের সহজভাবে আয়ত্ত করা প্রয়োজন। এটি যত বেশি করা যাবে তত বেশি লাভবান হবে সাধারণ মানুষ।
.
লেখকঃ  শিক্ষাথী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
.
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


করোনা কালে কিছু শব্দের সহজ প্রয়োগ জরুরী

Update Time : ০৩:০৯:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুন ২০২০
মো: সুমন হোসেন:
সারা বিশ্ব এখন করোনাময়। এটি এখন করোনাকাল হিসেবেই সমধিক প্রতিষ্ঠিত। এসময়ে করোনা সম্পর্কিত বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে মেডিক্যাল সায়েন্সের কিছু দুর্বোধ্য শব্দ সাধারণ মানুষের সামনে এখন খুবই আলোচিত। কোভিড-১৯, লকডাউন, শাটডাউন, রেড জোন, ইয়েলো জোন, গ্রিন জোন, কোয়ারেন্টাইন, সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সেল্ফ আইসোলেশন, ফিজিক্যাল/সোসাল ডিস্ট্যান্সিং বা শারীরিক/সামাজিক দূরত্ব, ভেন্টিলেশন, অক্সিজেন সাপ্লাই, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই, আইসিইউ, স্যাম্পল কালেকশন/নমুনা সংগ্রহ, পিপিই, মাস্ক/সাধারণ মাস্ক/এন৯৫ মাস্ক, টেস্ট, পিসিআর মেশিন, র‌্যাপিড টেস্ট কিট, টেস্ট কিট, হট লাইন, ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল, নন-কোভিড হাসপাতাল, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, থারমাল স্ক্যানিং, এক মিটার/তিন ফুট দূরে থাকা- ইত্যাদি আরো অনেক শব্দাবলি।
.
এমন শব্দগুলো এখন নিয়মিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে শোনা যাচ্ছে। তবে সবাই যে এসব শব্দের মানে বুঝে তা কিন্তু নয়। আমরা যারা শিক্ষিত জনগোষ্ঠিীর মধ্যে পড়ি তারাও এসকল মেডিক্যাল সায়েন্সের কারিগরি শব্দগুলোর মানে তাৎক্ষণিক বুঝে উঠতে পারি না। তাহলে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ কেমন করে এসব শব্দের মানে বুঝবে? অথচ করোনাকালে এসব প্রত্যেকটি শব্দের মানে সবাইকেই বুঝতে পারাটা খুবই জরুরি। কারণ প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য এগুলো সবাইকেই এখন মেনে চলতে হচ্ছে। সেগুলো যদি সবাই সাধারণভাবে বুঝতেই না পারে তবে পালন করবে কীভাবে? এটা অনেকটা ড্রাইভারদের নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য ট্রাফিক সিগন্যাল বুঝা, না বুঝার মতো।
.
সেখানেও দেখা গেছে অনেক শিক্ষিত মানুষও যেসকল ট্রাফিক সিগন্যালের মানে বুঝে না, সেগুলো অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত ড্রাইভারদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এক্সিডেন্ট আর এক্সিডেন্ট। তেমনিভাবেই মানুষ না বুঝেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের শিকার হয়ে দিচ্ছে প্রাণ। কাজেই কতৃপক্ষকে সহজভাবে, বোধগম্যতার সাথে, ব্যাখ্যাসহকারে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মুখে মুখে থাকা দরকার। এখন নিম্নে আমি আমার নিজের ভাষায় বিগত কিছুদিনে গণমাধ্যমে দেখতে দেখতে এবং আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে এগুলো সম্পর্কে একটু আলোকপাত করার চেষ্টা করলাম।
.
নভেল করোনা ভাইরাল ডিজিজ যা প্রথম চীনে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শনাক্ত হয়। তাই করোনা ভাইরাসজনিত রোগকেই কোভিড-১৯ নামে ডাকা হয়। অর্থাৎ করোনা হলো ভাইরাসের নাম আর কোভিড হলো এর দ্বারা সংঘটিত রোগের নাম। লকডাউন মানে হলো কোন স্থান বা এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল আটকে রাখা। আবার শাটডাউন হলো কোন কিছু বন্ধ করে দেওয়া। যেভাবেই বলা হোক না কেন মূল কাজটি হলো কোন নির্ধারিত এলাকায় অন্য এলাকা থেকে মানুষকে আটকে দেওয়া এবং সেটি কঠোরভাবে কার্যকর করা। রেড জোন, ইয়েলো জোন, গ্রিন জোন মানে হলো এসব রং দ্বারা আক্রান্তের তীব্রতা নির্ধারণ করে তদানুযায়ী লকডাউন কার্যকর করা।
.
কোয়ারেন্টাইন মানে সন্দেহভাজনদেরকে হাসপাতাল কিংবা বাড়িতে আলাদা করে রাখা যার কঠিন দুর্বোধ্য বাংলা হলো সংঘনিরোধ। আর সেল্ফ কোয়ারেন্টাইন তো বুঝাই যাচ্ছে নিজে নিজেই আলাদা হয়ে যাওয়া। আইসোলেশন মানে আক্রান্তদেরকে হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে সুস্থদের থেকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া। আর সেল্ফ আইসোলেশন মানে নিজে নিজেই আলাদা হয়ে যাওয়া। শারীরিক দূরত্ব হলো একজন হতে অন্যজন নির্ধারিত কমপক্ষে এক মিটার/তিন ফুট দূরত্বে থাকা। অপরদিকে সামাজিক দূরত্ব হলো একদল মানুষ থেকে অন্যদল মানুষ নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকবে। তবে এখানে সামাজিক দূরত্বের চাইতে শারীরিক দূরত্বই অধিক যুক্তিযুক্ত শব্দ। আমরা বিশ্ব জরিপ থেকে জানতে পারি, মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তের মাত্র ১০% রোগীর অক্সিজেন সাপ্লাই আর ৫% রোগীর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভেন্টিলেশন অর্থাৎ কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রয়োজন যা বিশেষ যন্ত্র ভেন্টিলেটর ব্যবহার করতে হয়।
.
যেসব হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে সেসব হাসপাতাল কোভিড রোগীর জন্য অনেক নিরাপদ। এখন সারাদেশজুড়েই টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে যা আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। আরটি-পিসিআর হলো রিয়েল টাইম ‘রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন-পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন’ পরীক্ষার মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমেই সারাদেশ থেকে সংগৃহীত করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। যারা কোভিড রোগীদের নমুনা সংগ্রহ, চিকিৎসা, নার্সিং, পরিবহন অথবা মৃত্যুর পর সৎকার ইত্যাদি কাজে সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে আসবে তাদের জন্য বিশেষ ধরনের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর (পিপিই) প্রয়োজন হয়।
.
অপরদিকে কোভিড রোগী অথবা যারা অজান্তেই করোনা ভাইরাস বহন করছে তাদের মধ্য থেকে একে অপরকে যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য দুজনের মধ্যে কমপক্ষে এক মিটার/তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ প্রত্যেকে একটি করে মাস্ক পরিধান করবে। সে মাস্কটি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য এন৯৫ অর্থাৎ কমপক্ষে ৯৫% নেটিংয়ের মাধ্যমে ভাইরাস প্রতিরোধী, অন্যরা কাপড়ের তৈরি তিনস্তর বিশিষ্ট পুণর্ব্যবহারযোগ্য সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করলেই চলবে। অর্থাৎ এন৯৫ মাস্ক সাধারণ সকল মানুষের জন্য নয়। যেহেতু কোভিড নিয়ন্ত্রণের অন্যতম নিরোধক হলো হাত পরিষ্কার রাখা সেজন্য ঘরে বা কাজের জায়গায় থাকলে বারবার ধোয়া কিন্তু জার্নিতে থাকলে হাতকে জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহৃত জীবাণুনাশককে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বলে।
.
অথবা সেটি করার বদলে হ্যান্ড গ্লাভস পড়তে হবে। আর সেটি সাধারণ মানুষের চেয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের বেশি দরকার। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হলো জ্যামতিক হারে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়ে একজনের কাছ থেকে তিনজন, তিনজনের কাছ থেকে নয়জন, নয়জনের কাছ থেকে সাতাশজন…এভাবে বাড়তে থাকা। কোভিডের টেস্ট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যার দ্বারা পরীক্ষা করা হয় তাকে বলে টেস্ট কিট। টেস্ট যত বেশি হবে তার সুফল জনগণ তত বেশি পাবে। সেজন্য বলা হয় টেস্ট টেস্ট আর টেস্ট। আর তাড়াতাড়ি ফলাফল পাওয়ার জন্য র‌্যাপিড টেস্টের কথাও ন্তিা করা হচ্ছে। কাজেই চড়ামূল্যে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত টেস্টকিটের পাশাপাশি দেশীয় বিজ্ঞানীদের তৈরি র‌্যাপিড টেস্ট কিটের ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে। জ¦র যেহেতু কোভিডের প্রাথমিক লক্ষণ সেজন্য নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর, বিমান বন্দর, স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলাচলকৃত মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মাল স্ক্যানার মেশিন ব্যবহার করা হয়।
.
যেসকল হাসপাতালে বিশেষভাবে শুধুমাত্র কোভিড রোগীর চিকিৎসা করা হয় সেসকল হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল, তাছাড়া অন্যান্য হাসপাতালকে নন-কোভিড হাসপাতাল হিসেবে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। কাজেই এগুলো বিশেষায়িত শব্দগুলোকে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বোধগম্য হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। সেজন্য শব্দগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে আরো বেশি পরিচিত করার জন্য বেশি বেশি গণমাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে। আরো বেশি জানা বা বুঝার জন্য আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাস শুধু যে এবারেই শেষ হয়ে যাবে তা বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন না। তাই একে সাথে নিয়েই বেশ কিছুদিন চলতে হবে। সেজন্য এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কঠিন জটিল শব্দাবলি সকলের সহজভাবে আয়ত্ত করা প্রয়োজন। এটি যত বেশি করা যাবে তত বেশি লাভবান হবে সাধারণ মানুষ।
.
লেখকঃ  শিক্ষাথী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
.