করোনাযুদ্ধে এগিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিক শাহাদাতের ‘প্লাজমা ব্যাংক’
- Update Time : ১০:১৫:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুন ২০২০
- / 141
তিনি একাই নন, তার পুরো পরিবারের ওপরই থাবা বসিয়েছিল করোনাভাইরাস।
দীর্ঘ প্রায় ১ মাস রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং বাসায় চিকিৎসা শেষে গত ১২ মে তিনি ও তার পরিবারে সবাই করোনা মুক্ত হয়েছেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় নানা প্রতিকূলতা দেখেছেন, চোখের সামনেই করোনা রোগীদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে দেখেছেন।
তাই করোনামুক্তি মিললেও লড়াইটা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি এখন করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্লাজমা সংগ্রহের অন্যতম উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তদের সুস্থ্যতার জন্য প্লাজমা থেরাপির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হওয়ার পর অনেকে শাহাদাত হোসেন ও তার পরিবারের সঙ্গে প্লাজমা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে যোগাযোগ করতে থাকেন। তখন থেকেই সংকটে থাকা মানুষের পাশে থাকার সংকল্প নেন এই গণমাধ্যমকর্মী।
বিষয়টি অনুধাবনের পর গত ১ জুন সস্ত্রীক প্লাজমা দান করেন তিনি।
চাহিদার তুলনায় প্লাজমার সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল দেখে তিনি নিজেই একটি ফ্ল্যাটফর্ম তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে প্লাজমা গ্রহীতা এবং ডোনার খুঁজে পেতে সহায়ক হবে।
আর তাই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তৈরি করেন ‘প্লাজমা ব্যাংক’ গ্রুপ। এর মাধ্যমে দেশে করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহবান জানান তিনি। অল্প কদিনেই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৩০ হাজার পেরিয়ে যায়।
জানা গেছে, সেই গ্রুপের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৩৫ জন করোনা রোগীকে প্লাজমা সরবরাহ করতে পেরেছেন শাহাদাত হোসেন।
এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রথমে আমি ও আমার স্ত্রী প্লাজমা দান করি। আমার শ্বশুরের বয়স বেশি হওয়ার ও তার ডায়াবেটিস থাকায় তিনি প্লাজমা দিতে পারেননি।
পরে গ্রুপটি খুলে ব্যাপক সাড়া পেলেও সে তুলনায় প্লাজমা ডোনার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না এবং অনেকেই দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এর কারণ হিসাবে তিনি জানান, অনেকে প্লাজমা দান সম্পর্কে কিছুই জানেন না কিংবা সচেতন নন। প্লাজমা দানে দ্বিতীয়বার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলেও ধারণা অনেকের, যা একেবারেই ভুল। তাছাড়া অনেকে পরিবারের জন্য প্লাজমা প্রিজার্ভ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণে এটি পাওয়া একেবারে কঠিন হয়ে পড়ছিল।
এসব কারণে প্লাজমা দান করতে চাচ্ছেন না অনেক করোনাযুদ্ধে জয়ী ব্যক্তিরা।
এছাড়া দেশে করোনা রোগী হু হু করে বাড়তে থাকলেও এর বড় অংশটিই প্লাজমা দানে যোগ্য নয় বলে জানান তিনি। কারণ অনেকে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হলে তিনি প্লাজমা দিতে পারেন না।
এছাড়া নারীদের অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্লাজমা দিতে পারেন না নানান জটিলতা থাকার কারণে।
এমন মানবিক কাজেও অনেকে প্রতারিত হয়েছেন বলে জানান শাহাদাত।
তিনি বলেন, অনেকেই গ্রুপের প্লাজমা গ্রহীতা অথবা আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, তিনি প্লাজমা ডোনার হতে চান। এজন্য যাতায়াত কিংবা নানান অজুহাতে কিছু অর্থ দাবি করেন। পরে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
এমন নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে ‘দেশ সমাচার’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালকে সঙ্গে নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করেন শাহাদাত হোসেন। www.deshshamachar.com/plasmabank
এই ডাটাবেজে প্লাজমা ডোনাররা তাদের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করে প্লাজমা দানের জন্য নিবন্ধন করতে পারেন। যেখানে প্লাজমা ডোনার বা গ্রহণকারী করোনা রোগীর নাম, নিকট আত্মীয়ের নাম, যোগাযোগের নাম্বার, ইমেইল, রক্তের গ্রুপ, বয়স, গ্রহণকারী কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন- এসব পূর্ণ করে ডাটা সংরক্ষণ রাখা হয়।
শাহাদাত হোসেন জানান, তার প্লাজমা ব্যাংক প্ল্যাটফর্মের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৫ জনকে প্লাজমা দান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন-
১. এইচ এম শামসূল হক (৬০), গ্রীণ লাইফ হাসপাতাল
২. জসিম উদ্দিন (৫৬), গ্রীণ লাইফ হাসপাতাল
৩. আবু কায়েস (৬০), বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল
৪. হাফেজ মো. আসাদুল্লাহ (৪৫), সিএমএইচ
৫. আবুল হোসেন (৬১), সিএমএইচ
৬. সাজেদা বেগম (৬০), ইবনে সিনা হাসপাতাল
৭. শীলা (৩৬), কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল
৮. বজলুর রহমান (৬৫), সিটি হাসপাতাল
৯. খালেদা বেগম (৫০), চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল
১০. আদিলুর রহমান (৫৮), জাপান ইস্ট ওয়েষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
শাহাদাত হোসেন যোগ করেন, প্লাজমা সংগ্রহ করতেই হাসপাতালগুলোতে প্রসেসিং ফি হাসপাতালের মানভেদে ১৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পযন্ত লাগে।
তিনি অনুরোধ জানান, কেউ মোবাইলে প্লাজমা দেয়ার কথা বলে টাকা চাইলে কোনোভাবেই টাকা দেয়া ঠিক হবে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে https://www.facebook.com/groups/bdplasmabank/ এই লিংকে যোগ দিতে পারেন যে কেউ।