মানবিক তরুণ সাংবাদিক মনির
- Update Time : ০২:৩৭:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / 195
আনিসুল ইসলাম নাঈম:
সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ স্বার্থকতা নিহিত। অপরের কল্যাণ কামনাকে প্রাধান্য দিয়ে নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করার নামই মানবসেবা। মানবসেবাকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ মানুষের জন্য প্রমাণ দিয়েছেন অনেকেই। তেমনি একজন মানবসেবীর নাম জাহিদুল হক মনি। তার জন্ম ও বেড়ে উঠা শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার ঝিনাইগাতীতে। এই তরুণ পেশায় একজন সাংবাদিক হলেও নেশার জায়গা থেকে কাজ করেন মানুষের জন্য। মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ব্যাথিত হয় তার হৃদয়। পাহাড়ি জনপদের মানুষের দুঃখদুর্দশার কথা জানতে পারলে ছুটে চলেন মানুষের দ্বারেদ্বারে। নিজের সাধ্যের মধ্যে হলে নিজেই সহযোগিতা করেন আর সাধ্যের বাইরে গেলে চেষ্টা করেন অন্য কোন মাধ্যমে।
ঝিনাইগাতী থেকে মনির এসএসসি ও এইচএসসির দিয়েছেন। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ বিভাগ নিয়ে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্স করেছেন। মনির একটি জাতীয় দৈনিকের জেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে আরও একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কাজ করছেন।
মনির বিডি সমাচারকে বলেন, ‘সাংবাদিকতা করতে গিয়ে অনেক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়, আমি যেহেতু মানুষ আমারও, কষ্ট লাগে। করোনার লকডাউনের সময় কর্মহীন মানুষ যখন দু’মুঠো খাবারের জন্য দিকবিদিক ছুটছিল তখনই আমার মাথায় চিন্তা আসে তাদের জন্য কিছু করার। আমি যেহেতু সাংবাদিক, ব্যক্তি হিসেবে কিছু করতে গেলে অনেক মানুষই অনেক কথা বলতে পারে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে কয়েকজন ছোট ভাইদের নিয়ে ‘ভয়েস অব ঝিনাইগাতী’ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালু করি।
পরিচিত কয়েকজন প্রবাসী ভাই ও জার্মানির একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানির ফার্মা বিভাগের রিচার্ড ও ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এবং প্রধান গবেষক ড. জাফর ইকবাল ভাইকে জানাই এলাকায় মানুষের খাদ্য সংকটের কথা। এরপর তারা অর্থ পাঠালে সেই অর্থে করোনার প্রথমদফা ও দ্বিতীয় দফায় সর্বমোট ১৫০০ দরিদ্র ও কর্মহীন পরিবারকে ৭ দিনের খাদ্য সহায়তা দেই। আমার এই কাজে খুশি হয়ে আশেপাশে অনেক মানুষই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।’
এরপর ‘ভয়েস অব ঝিনাইগাতীর’ পক্ষ থেকে ২৫জন দরিদ্র শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ দেন। পাহাড়ি এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা বহুকাল থেকেই সেই সমস্যা নিরসনে ৫টি নলকূপ স্থাপন করেন। শীতকালীন সময়ে দরিদ্র মানুষ ও বৃদ্ধাদের মাঝে ৫০০ কম্বল বিতরণ করেন। গত ঈদুল ফেতরে ৩০০ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন। ঈদুল আযহায় শতাধিক এতিম ও দরিদ্র শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে পোষাক এবং প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার উপহার দিয়েছেন। মনিরের এসব কার্যক্রম সফল হয়েছে বিদেশ থেকে আসা অর্থের কারনে। আবার অনেকের স্বতঃস্ফূর্ত সহায়তা ও নিজের অর্থ দিয়েও মানুষের পাশে দাড়াঁন এই মানবসেবী।
করোনায় লকডাউন বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে মনিরের স্বেচ্ছাসেবী দল ছিল ঝিনাইগাতীর প্রধান সড়কে, উপজেলা প্রশাসনের সহায়ক হয়ে কোভিড মনিটরিং টিমের সমন্বয়ক হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এছাড়া বেশ কয়েকবার রক্তদান করে মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন।
মনিরের মানবসেবায় যেমন সুনাম রয়েছে তেমনি মফস্বল সাংবাদিকতাতেও তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন, সফল হয়েছেন। মনিরের লেখা সংবাদ প্রকাশের পর ভাঙা ঘরে থাকা নলকুড়া ইউনিয়নের হেলাল মিয়া পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘর, বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা পেয়েছেন অনেক নারীই। শালচূড়া-গান্ধীগাও সড়কের ডেফলাই এলাকায় জরাজীর্ণ সেতু নিয়ে লেখায় নতুন সেতুর অনুমোদন পেয়েছে।
ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, যতদিন সৃষ্টিকর্তা বাচিঁয়ে রাখবেন ততোদিন মানুষের জন্যেই লিখে যাবো, এবং কাজ করে যাবো। গরীব ও দরিদ্রদের কষ্ট দুর্দশা দূর করতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান এই তরুণ সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবকের।