তালেবান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সরকারি কাঠামো ঘোষণা করবে

  • Update Time : ১২:৫২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১
  • / 179

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানের নতুন সরকারি কাঠামো ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে তালেবানের।

সংগঠনটির এক মুখপাত্র শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো সরকারি কাঠামোর বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সময় জানানো হলো। খবর আল জাজিরার।

তালেবানের আইন বিষয়ক, ধর্মীয় এবং পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন সরকারি কাঠামো প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র। এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান। সে সময় বেশ কঠোরভাবেই আফগানিস্তান শাসন করেছে তারা। তবে এবার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান অনেকটাই নমনীয় আচরণ প্রকাশ করেছে।

গত রোববার (১৫ আগস্ট) রাজধানী কাবুল দখলের পর পুরো আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তখন থেকেই পরবর্তী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তাছাড়া তালেবান কীভাবে সরকার গঠন করবে বা তাদের সরকারি কাঠামো কেমন হবে তা নিয়েও আলোচনা শেষ হচ্ছে না।

তবে এবার তালেবান ক্ষমতা দখলেও পরও পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন বলা যায়। তালেবান দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরও মেয়েদের স্কুলে যেতে দেখা গেছে, টিভি চ্যানেলে নারীদের সংবাদ উপস্থাপনা করতেও দেখা গেছে। বড় ধরনের কোনো সহিংসতার খবরও সেখানে পাওয়া যায়নি। এমনকি তালেবানের নেতাদের পক্ষ থেকে তাদের যোদ্ধাদের কোনো ধরনের সহিংসতা না করার এবং লোকজনের বাড়ি-ঘরে প্রবেশ না করার আহ্বান জানানো হয়।

নারীসহ অন্যান্য লোকজনকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরা এমনকি তালেবান সরকারে নারীদের অংশ গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছে তালেবান। তবে নারীদের অবশ্যই হিজাব পরেই সব কাজে অংশ নিতে হবে বলে জানানো হয়। তালেবানের পক্ষ থেকে দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

তবে এটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে তালেবান গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে না। তালেবান শাসনে আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে না বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন সংগঠনটির এক শীর্ষ নেতা। ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি নামের ওই নেতা বলেন, এখানে কোনো রকম গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকবে না। কারণ আমাদের দেশে এর কোন ভিত্তি নেই। তালেবানের সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে হাশিমির।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে কী ধরনের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা থাকবে এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। কারণ এটা পরিষ্কার। আফগানিস্তান চলবে শরিয়া আইনে। সেটাই শেষ কথা। এই নেতা আরও বলেন, তালেবোনের সুপ্রিম নেতা হিবাতুল্লাহ আকুন্দজাদার নেতৃত্বে গঠিত শাসক পরিষদের মাধ্যমে আফগানিস্তান পরিচালিত হবে।

সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের যৌথ অভিযানে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে। অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমন করা হলেও ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান করছিল পশ্চিমা সেনারা।

কিছু বছর পার হওয়ার পর সেখান থেকে ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য দেশের সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করলে প্রত্যন্ত এলাকা দখল করে থাকা তালেবান কাবুলের ক্ষমতার মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে। যদিও এর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে কাবুলের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাতের অবসানে কাতারসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সব আলোচনাই ভেস্তে গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media


তালেবান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সরকারি কাঠামো ঘোষণা করবে

Update Time : ১২:৫২:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানের নতুন সরকারি কাঠামো ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে তালেবানের।

সংগঠনটির এক মুখপাত্র শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো সরকারি কাঠামোর বিষয়ে দলটির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সময় জানানো হলো। খবর আল জাজিরার।

তালেবানের আইন বিষয়ক, ধর্মীয় এবং পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন সরকারি কাঠামো প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন ওই মুখপাত্র। এর আগে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান। সে সময় বেশ কঠোরভাবেই আফগানিস্তান শাসন করেছে তারা। তবে এবার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তালেবান অনেকটাই নমনীয় আচরণ প্রকাশ করেছে।

গত রোববার (১৫ আগস্ট) রাজধানী কাবুল দখলের পর পুরো আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তখন থেকেই পরবর্তী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। তাছাড়া তালেবান কীভাবে সরকার গঠন করবে বা তাদের সরকারি কাঠামো কেমন হবে তা নিয়েও আলোচনা শেষ হচ্ছে না।

তবে এবার তালেবান ক্ষমতা দখলেও পরও পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন বলা যায়। তালেবান দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরও মেয়েদের স্কুলে যেতে দেখা গেছে, টিভি চ্যানেলে নারীদের সংবাদ উপস্থাপনা করতেও দেখা গেছে। বড় ধরনের কোনো সহিংসতার খবরও সেখানে পাওয়া যায়নি। এমনকি তালেবানের নেতাদের পক্ষ থেকে তাদের যোদ্ধাদের কোনো ধরনের সহিংসতা না করার এবং লোকজনের বাড়ি-ঘরে প্রবেশ না করার আহ্বান জানানো হয়।

নারীসহ অন্যান্য লোকজনকে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরা এমনকি তালেবান সরকারে নারীদের অংশ গ্রহণের আহ্বানও জানিয়েছে তালেবান। তবে নারীদের অবশ্যই হিজাব পরেই সব কাজে অংশ নিতে হবে বলে জানানো হয়। তালেবানের পক্ষ থেকে দেশের উন্নয়ন এবং জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

তবে এটা ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে তালেবান গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে না। তালেবান শাসনে আফগানিস্তান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে না বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন সংগঠনটির এক শীর্ষ নেতা। ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি নামের ওই নেতা বলেন, এখানে কোনো রকম গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকবে না। কারণ আমাদের দেশে এর কোন ভিত্তি নেই। তালেবানের সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারী নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে হাশিমির।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানে কী ধরনের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা থাকবে এ নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। কারণ এটা পরিষ্কার। আফগানিস্তান চলবে শরিয়া আইনে। সেটাই শেষ কথা। এই নেতা আরও বলেন, তালেবোনের সুপ্রিম নেতা হিবাতুল্লাহ আকুন্দজাদার নেতৃত্বে গঠিত শাসক পরিষদের মাধ্যমে আফগানিস্তান পরিচালিত হবে।

সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোটের যৌথ অভিযানে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে। অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমন করা হলেও ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ সেখানে ঘাঁটি গেড়ে অবস্থান করছিল পশ্চিমা সেনারা।

কিছু বছর পার হওয়ার পর সেখান থেকে ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্র বাদে অন্য দেশের সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়া হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রও তাদের সেনাদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করলে প্রত্যন্ত এলাকা দখল করে থাকা তালেবান কাবুলের ক্ষমতার মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে। যদিও এর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে কাবুলের শাসকগোষ্ঠীর সংঘাতের অবসানে কাতারসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় নানা সময়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সব আলোচনাই ভেস্তে গেছে।