আফগানিস্তানে গত চার দিনের সংঘর্ষে নিহত ৯৬৭ তালেবান

  • Update Time : ১২:২৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১
  • / 221

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আফগানিস্তানে সরকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে গত চার দিনে অন্তত ৯৬৭ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫ শতাধিক। রোববার এমন দাবি করেছে আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। আফগান জেনারেল আজমল সিনওয়ারি গণমাধ্যমকে জানান, এখনও অন্তত ২০টির বেশি প্রদেশ ও নয়টি শহেরে তালেবানের সাথে যুদ্ধ করছে সরকারি বাহিনী। ফলে উচ্চ হুমকির মধ্যে রয়েছে সেখানকার বসবাসকারীরা।

আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গত ১২ ঘণ্টায় পারওয়ানের সোরখ-ই-পারসা জেলা ও গজনির মেলস্তান জেলার পুননিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আফগান বাহিনী। যদিও তালেবানের দাবি, আফগানিস্তানের ৮৫ ভাগের বেশি এলাকা তাদের দখলে রয়েছে।

এদিকে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ-যুদ্ধের মধ্যেই, আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে গত ১৭ থেকে ১৮ জুলাই কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনের শান্তি আলোচনা। শান্তির বৈঠকে আফগান সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। আলোচনায় যোগ দিয়েছেন আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। এছাড়া তালেবান প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের রাজনৈতিক উপপ্রধান মোল্লা বারাদার।

এবারও বৈঠকে সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও তালেবান বন্দীদের মুক্তির বিষয়গুলো ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। যদিও অন্য সব শান্তি আলোচনার মতো এবারের বৈঠকটিও কোন ভালো সমাধান বয়ে আনেনি আফগানিস্তানে।

শান্তি আলোচনা শেষে তালেবান জানায়, আফগানিস্তানে চলমান সংকট সমাধানের জন্য তারা রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সমর্থন চেয়েছে তালেবান।

সম্প্রতি আফগানিস্তানজুড়ে নতুন করে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানের ২৯টি প্রদেশের ১১৬টি জেলা নিজেদের দখলে নিয়েছে তারা। তালেবানের দখলে থাকা জেলাগুলোতে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে। যারা বঞ্চিত হচ্ছেন নানাবিধ নাগরিক সুবিধা থেকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। ১৫ জুলাই কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন আফগান সরকারের প্রশাসনিক সংস্কার বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান আহমাদ নাদের নাদেরি।

এ সময় নাদেরি আরও জানান, ১১৬টি জেলা দখল করার সময় তালেবান ধ্বংস করেছে নানা সরকারি স্থাপনা। বাজার মূল্য হিসেবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি ডলার।

২০০১ সালে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। এরপর দেশটিতে গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় এবং একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। কিন্তু তালেবান এরপর এক দীর্ঘ বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু করে। ক্রমান্বয়ে তারা আবার শক্তি সঞ্চয় করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীকে আরও বেশি করে সংঘাতে জড়িয়ে ফেলে। কিন্তু এখন মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান থেকে তাদের সবশেষ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। তালেবান জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের ৮৫ ভাগের বেশি এলাকা দখল করেছে। যদিও এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক আছে। আফগান সেনারা দেশটিতে তালেবানদের অগ্রগতি থামাতে হিমশিম খাচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media


আফগানিস্তানে গত চার দিনের সংঘর্ষে নিহত ৯৬৭ তালেবান

Update Time : ১২:২৫:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুলাই ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আফগানিস্তানে সরকারী বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে গত চার দিনে অন্তত ৯৬৭ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫ শতাধিক। রোববার এমন দাবি করেছে আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তাবাহিনী। আফগান জেনারেল আজমল সিনওয়ারি গণমাধ্যমকে জানান, এখনও অন্তত ২০টির বেশি প্রদেশ ও নয়টি শহেরে তালেবানের সাথে যুদ্ধ করছে সরকারি বাহিনী। ফলে উচ্চ হুমকির মধ্যে রয়েছে সেখানকার বসবাসকারীরা।

আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, গত ১২ ঘণ্টায় পারওয়ানের সোরখ-ই-পারসা জেলা ও গজনির মেলস্তান জেলার পুননিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আফগান বাহিনী। যদিও তালেবানের দাবি, আফগানিস্তানের ৮৫ ভাগের বেশি এলাকা তাদের দখলে রয়েছে।

এদিকে দুপক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ-যুদ্ধের মধ্যেই, আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে গত ১৭ থেকে ১৮ জুলাই কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দিনের শান্তি আলোচনা। শান্তির বৈঠকে আফগান সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। আলোচনায় যোগ দিয়েছেন আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই। এছাড়া তালেবান প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের রাজনৈতিক উপপ্রধান মোল্লা বারাদার।

এবারও বৈঠকে সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও তালেবান বন্দীদের মুক্তির বিষয়গুলো ছিল প্রধান আলোচ্য বিষয়। যদিও অন্য সব শান্তি আলোচনার মতো এবারের বৈঠকটিও কোন ভালো সমাধান বয়ে আনেনি আফগানিস্তানে।

শান্তি আলোচনা শেষে তালেবান জানায়, আফগানিস্তানে চলমান সংকট সমাধানের জন্য তারা রাজনৈতিক সমাধান চেয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সমর্থন চেয়েছে তালেবান।

সম্প্রতি আফগানিস্তানজুড়ে নতুন করে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানের ২৯টি প্রদেশের ১১৬টি জেলা নিজেদের দখলে নিয়েছে তারা। তালেবানের দখলে থাকা জেলাগুলোতে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে। যারা বঞ্চিত হচ্ছেন নানাবিধ নাগরিক সুবিধা থেকে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। ১৫ জুলাই কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন আফগান সরকারের প্রশাসনিক সংস্কার বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান আহমাদ নাদের নাদেরি।

এ সময় নাদেরি আরও জানান, ১১৬টি জেলা দখল করার সময় তালেবান ধ্বংস করেছে নানা সরকারি স্থাপনা। বাজার মূল্য হিসেবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ কোটি ডলার।

২০০১ সালে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। এরপর দেশটিতে গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় এবং একটি নতুন সংবিধান গৃহীত হয়। কিন্তু তালেবান এরপর এক দীর্ঘ বিদ্রোহী তৎপরতা শুরু করে। ক্রমান্বয়ে তারা আবার শক্তি সঞ্চয় করে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনীকে আরও বেশি করে সংঘাতে জড়িয়ে ফেলে। কিন্তু এখন মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান থেকে তাদের সবশেষ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। তালেবান জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের ৮৫ ভাগের বেশি এলাকা দখল করেছে। যদিও এ পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক আছে। আফগান সেনারা দেশটিতে তালেবানদের অগ্রগতি থামাতে হিমশিম খাচ্ছে।