লাশের জন্য কবরের অপেক্ষা!
- Update Time : ০১:১৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ জুলাই ২০২১
- / 170
নিজস্ব প্রতিনিধি :
সারি সারি খুঁড়ে রাখা নতুন কবর। পাশেই কয়েকদিন আগের খোঁড়া কবরে গজিয়েছে সবুজ ঘাস। নেমপ্লেটে চকচক করছে মৃতের নাম। নতুন কোনও লাশ এলেই একে একে পূরণ হবে পাশের খালি কবরগুলো। রায়েরবাজার কবরস্থানটিতে এমন খুঁড়ে রাখা কবর আগে দেখা যায়নি। মহামারি বদলে দিয়েছে সব। কবরস্থানে ঢুকলেই যেন জেঁকে ধরে একরাশ বিষণ্ণতা।
সাধারণত মুসলমান কেউ মারা যাওয়ার পরই শুরু হয় দাফনের আনুষ্ঠানিকতা। কবর খোঁড়া থেকে শুরু করে বাঁশ কাটা; ব্যস্ততা বাড়ে গোরখোদকদের। কিন্তু রাজধানীর বড় এই কবরস্থানের চিত্র ভিন্ন। আগেই অন্তত ২৫টি কবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে করোনা ব্লকে। দেখে মনে হবে, কবরগুলো যেন অপেক্ষা করছে লাশের জন্য।
কবর জিয়ারত করতে আসা অনেকেই বিষণ্ণ চোখে তাকিয়েছিলেন খোঁড়া কবরগুলোর দিকে। কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, আহা করোনা! আহা মৃত্যু! না জানি কার শেষ ঠিকানা হতে চলেছে কবরগুলো! তারা আরও বললেন, ওই লোক হয়তো এখনও জানেই না যে এ কবরগুলোর একটি তার জন্যই অপেক্ষা করছে। কারণ করোনার ছোবল এতোই মারাত্মক যে, দুদিন আগেও বোঝার উপায় নেই, লোকটা বাঁচবে না মরবে।
শুক্রবার (২ জুলাই) দুপুরে কবরস্থানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধের ঠিক পেছনে কবরস্থানের ৮ম ব্লকে ২৫টি কবর তৈরি করে রাখা হয়েছে। পাশেরগুলো সদ্য পূর্ণ হওয়া। খুঁড়ে রাখা কবরে জমে আছে বৃষ্টির পানি। পাশেই মাটির স্তূপ। একটু দূরেই কেটে রাখা হয়েছে বাঁশ। লাশ রাখার ঘরে অপেক্ষা করছেন কর্মীরাও। সাইরেন শুনলেই তারা এগিয়ে যান কবরের দিকে।
দুপুরের দিকে দেখা গেছে, কবরস্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সবুজ ঘাসে ঝলমল করছে প্রতিটি কবর। কোনও কোনও কবরে বুনো ফুলও ফুটেছে। জুমার নামাজের আগে ও পরে সমাহিত ব্যক্তিদের স্বজনরা আসতে শুরু করেন। কবরবাসীর পরকালের শান্তির জন্য দোয়া করেন। কেউ কবর স্পর্শ করে যান পরম মমতায়।
কথা হয় মুরশিদুল হাসানের সঙ্গে। ১০ এপ্রিল করোনার সঙ্গে দীর্ঘ ১৬ দিন লড়ে মারা যান তার স্ত্রী আরেফা বানু। প্রতিদিন তিনি ও তার ছেলে কবরের কাছে আসেন।
করোনায় মারা গেছেন বাবা। তার কবর জিয়ারত করতে আসেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, মহামারি এভাবে আমাদের এতিম করে দেবে ভাবিনি। বাবাকে বারবার মনে পড়ে। প্রতি সপ্তাহেই কবরের কাছে আসি।
জানতে চাইলে কবরস্থানটির সিনিয়র মোহরার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমরা সব সময় লাশ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। লাশ আসলে কর্মীদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। তবে আগের তুলনায় এখানে তেমন একটা করোনায় মারা যাওয়া লাশ আসছে না। গত জুন থেকে ১২টি লাশ দাফন হয়েছে।