একটু ভাবনা গন্ডির বাহিরে

  • Update Time : ০৬:০২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০
  • / 305

মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ:

আমরা মানুষ হিসেবে পরিবার, সমাজ ও দেশে বসবাস করি। ভাষা ও ভৌগলিক হিসেবে কেউ বাংলাদেশি, কেউ ভারতীয়, কেউ এরাবিয়ান, কেউ ইউরোপিয়ান, কেউ আমেরিকান, কেউ শেতাঙ্গ, কেউবা কৃষ্ণাঙ্গ আরো কত জাতি বিদ্যমান সুন্দর এই পৃথিবীতে।

আমরা একেক জন বিভিন্ন ধর্মের ও গোত্রের অনুসারী। আমাদের বিভিন্ন বংশ পরিচয় যেমন কেউ ভূইয়া, কেউ কাজী, কেউ খান, কেউ মজুমদার, কেউবা জমিদার।ধর্ম ও অনুশাসনের দিক থেকে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ খ্রিষ্টান, কেউ বৌদ্ধ।

আরো কত বিস্ময়কর ধর্ম ও নীতি আছে মানুষ যাতে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলে। আবার অনেকে ক্লাসিফিকেশান আছে পরিবারে ভেদে, বংশ ভেদে, এলাকা ভেদে, শিক্ষা ভেদে, কর্মভেদে, চাকরি ভেদে, জাতি, ধর্ম ও বর্ণভেদে।

ভেদের আর শেষ নেই।এই ভেদ ই আমাদের ভেদাভেদ তৈরি করে স্বাভাবিক বিবেক ও মনুষ্যত্ব কেড়ে নেয়। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আর্মি অফিসার , কেউ পুলিশ অফিসার ,কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ জজ ব্যারিস্টার, কেউ সাংবাদিক, কেউ রাজনিতিবীদ, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ মালিক, কেউ শ্রমিক, কেউ অনেক বড় আমলা কেউবা আবার তাঁর অধীনে কামলা আরও কত কি! কত বৈচিত্র্য মানুষের মাঝে, জীবনধারার মাঝে, তাদের কৃষ্টি ও কালচারে।সৃষ্টির সৌন্দর্য এখানেই। কিন্তু কিছু হলেই আমরা পক্ষ নিয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে যাই মনের অগোচরেই দোষ ত্রুটি না দেখে বিচার বিবেচনা বাদ দিয়ে স্বগোত্রের দিকে।

কোদাল বুকের দিকেই টানে এটা আমরা সবাই জানি এবং স্বজাতির প্রতি মমত্ববোধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বিপদ তখনি ঘটে যখন ন্যায়-অন্যায় না ভেবে একতরফা ভাবে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোন অন্যায় অনিয়মের ক্ষেত্রে প্রথমত পরিবারের কথা দিয়ে শুরু করি – না, আমার ভাই-বোন এটা করতে পারে না।আমার বাড়ির মানুষ এটা করে না,আমরা অমক বাড়ির মানুষ ।আমার সমাজ এমন হতে পারে না,আমরা তোমক পাড়ার মানুষ। আমার দল এগুলি করে না। আমার সার্ভিসের মানুষ এমন না।এর পর দেখি আমরা উত্তর বঙ্গীয়, ওরা দক্ষিণ বঙ্গীয়, সে পূর্ব ও তিনি পশ্চিমের।

অমুক এলাকার মানুষ খারাপ, তোমক এলাকা বাটপার অন্য এলাকা চিটার। কিন্ত আসলেই সবাই আমরা এদেশেরই মানুষ। এর পর যখন বিদেশে প্রবাসী হয় সেখানে কেউ বাঙ্গালী, কেউ কাশ্মিরী, কেউ ফিলিপাইনি। একজন একজনের ব্যক্তিগত ঝামেলাকে রুপ দেয় জাতিভেদে, ধর্মভেদে অথবা এলাকাভেদে।পৃথিবীর কোথাও ঝামেলা হলেই আমরা জুড়ে দেই ধর্মের তকমা, জাতীর পরিচয়।পরিবার, স্বজাতি ও স্বধর্মের প্রতি আনুগত্য রেখেই সত্য, ন্যায়নীতি, সততা, জ্ঞান ও বিচক্ষণতা দিয়ে চলা উচিত। কাজ করতে হয় বিবেক দিয়ে, আবেগ দিয়ে নয়।আবেগ মানুষকে মাঝে মাঝে ঠিক পথ না দেখালেও বিবেক এবং বুদ্ধি ঠিকই মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

লেখকঃ বিএসসি ইন টেলিকম. এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (হাবিপ্রবি) ইএমসিএ-অধ্যয়নরত (কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়) সহকারী প্রোগ্রামার, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


একটু ভাবনা গন্ডির বাহিরে

Update Time : ০৬:০২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০

মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ:

আমরা মানুষ হিসেবে পরিবার, সমাজ ও দেশে বসবাস করি। ভাষা ও ভৌগলিক হিসেবে কেউ বাংলাদেশি, কেউ ভারতীয়, কেউ এরাবিয়ান, কেউ ইউরোপিয়ান, কেউ আমেরিকান, কেউ শেতাঙ্গ, কেউবা কৃষ্ণাঙ্গ আরো কত জাতি বিদ্যমান সুন্দর এই পৃথিবীতে।

আমরা একেক জন বিভিন্ন ধর্মের ও গোত্রের অনুসারী। আমাদের বিভিন্ন বংশ পরিচয় যেমন কেউ ভূইয়া, কেউ কাজী, কেউ খান, কেউ মজুমদার, কেউবা জমিদার।ধর্ম ও অনুশাসনের দিক থেকে কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ খ্রিষ্টান, কেউ বৌদ্ধ।

আরো কত বিস্ময়কর ধর্ম ও নীতি আছে মানুষ যাতে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলে। আবার অনেকে ক্লাসিফিকেশান আছে পরিবারে ভেদে, বংশ ভেদে, এলাকা ভেদে, শিক্ষা ভেদে, কর্মভেদে, চাকরি ভেদে, জাতি, ধর্ম ও বর্ণভেদে।

ভেদের আর শেষ নেই।এই ভেদ ই আমাদের ভেদাভেদ তৈরি করে স্বাভাবিক বিবেক ও মনুষ্যত্ব কেড়ে নেয়। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আর্মি অফিসার , কেউ পুলিশ অফিসার ,কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ জজ ব্যারিস্টার, কেউ সাংবাদিক, কেউ রাজনিতিবীদ, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ মালিক, কেউ শ্রমিক, কেউ অনেক বড় আমলা কেউবা আবার তাঁর অধীনে কামলা আরও কত কি! কত বৈচিত্র্য মানুষের মাঝে, জীবনধারার মাঝে, তাদের কৃষ্টি ও কালচারে।সৃষ্টির সৌন্দর্য এখানেই। কিন্তু কিছু হলেই আমরা পক্ষ নিয়ে লক্ষ্য অর্জনের জন্য এগিয়ে যাই মনের অগোচরেই দোষ ত্রুটি না দেখে বিচার বিবেচনা বাদ দিয়ে স্বগোত্রের দিকে।

কোদাল বুকের দিকেই টানে এটা আমরা সবাই জানি এবং স্বজাতির প্রতি মমত্ববোধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু বিপদ তখনি ঘটে যখন ন্যায়-অন্যায় না ভেবে একতরফা ভাবে অন্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোন অন্যায় অনিয়মের ক্ষেত্রে প্রথমত পরিবারের কথা দিয়ে শুরু করি – না, আমার ভাই-বোন এটা করতে পারে না।আমার বাড়ির মানুষ এটা করে না,আমরা অমক বাড়ির মানুষ ।আমার সমাজ এমন হতে পারে না,আমরা তোমক পাড়ার মানুষ। আমার দল এগুলি করে না। আমার সার্ভিসের মানুষ এমন না।এর পর দেখি আমরা উত্তর বঙ্গীয়, ওরা দক্ষিণ বঙ্গীয়, সে পূর্ব ও তিনি পশ্চিমের।

অমুক এলাকার মানুষ খারাপ, তোমক এলাকা বাটপার অন্য এলাকা চিটার। কিন্ত আসলেই সবাই আমরা এদেশেরই মানুষ। এর পর যখন বিদেশে প্রবাসী হয় সেখানে কেউ বাঙ্গালী, কেউ কাশ্মিরী, কেউ ফিলিপাইনি। একজন একজনের ব্যক্তিগত ঝামেলাকে রুপ দেয় জাতিভেদে, ধর্মভেদে অথবা এলাকাভেদে।পৃথিবীর কোথাও ঝামেলা হলেই আমরা জুড়ে দেই ধর্মের তকমা, জাতীর পরিচয়।পরিবার, স্বজাতি ও স্বধর্মের প্রতি আনুগত্য রেখেই সত্য, ন্যায়নীতি, সততা, জ্ঞান ও বিচক্ষণতা দিয়ে চলা উচিত। কাজ করতে হয় বিবেক দিয়ে, আবেগ দিয়ে নয়।আবেগ মানুষকে মাঝে মাঝে ঠিক পথ না দেখালেও বিবেক এবং বুদ্ধি ঠিকই মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

লেখকঃ বিএসসি ইন টেলিকম. এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (হাবিপ্রবি) ইএমসিএ-অধ্যয়নরত (কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়) সহকারী প্রোগ্রামার, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর।