ছয় দফা আর কারও নয়, বঙ্গবন্ধুর একান্ত চিন্তার ফসল
- Update Time : ১০:৪০:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১
- / 196
ড. কাজী এরতেজা হাসান:
১৯৬২ সনে আশারামবাড়ী হয়ে বঙ্গবন্ধুর আগরতলা যাওয়ার কারণও ছিল একই লক্ষ্য অর্জনে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয় যে “… the Awami League supremo Sheikh Mujibur Rahman arrived in Agartala to meet Sachindralal Singha, the chief minister of Tripura … and made it clear that “Bengalis could no longer live with honour and hope with Pakistan …” (Subir Bhaumik, The Agartala Doctrine, 2016, p. 13)।
পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে বেড়িয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জন এবং অর্থনৈতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি সমাজ প্রতিষ্ঠাই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য।
স্বাধীনতা যেমন একদিনে অর্জিত হয়নি, তেমনি স্বাধীনতা সংগ্রামের এ পথ কখনই মসৃণ ছিল না। সময়োপযোগী রাজনৈতিক কৌশল রচনা ও অবলম্বন এবং তার যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে বাঙালি জাতিকে পৌঁছে দেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে। ঐতিহাসিক ছয় দফা তেমনি এক কৌশল।
ছয় দফা কর্মসূচির দুটি স্বতন্ত্র দিক রয়েছে। একটি রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামো সম্পর্কিত, অন্যটি অর্থনৈতিক। তবে, একটি অপরটির পরিপূরক, যেখানে অর্থনৈতিক বিষয়টি ছিল ফোকাস, আর রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনই ছিল চূড়ান্ত লক্ষ্য।
১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে পাকিস্তান সর্বদলীয় রাউন্ড টেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যাই থাকুক না কেন, কৌশলগত দিক থেকে বঙ্গবন্ধু ছয় দফায় পূর্ব -পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝের অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণ এবং দুই প্রদেশের ফেডারেশনের মাঝে বৈষম্যের সমাধানের দিকটি প্রাধান্য দেন। একই ধারায় ছয় দফার উপর প্রথম যে প্রচারপত্রটি প্রকাশিত হয় তার শিরোনামও ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচী’ (শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, ২০১৭, পৃ ৩০৮-৩২০)। অনুরূপভাবে, তার কয়েক মাস পর [৭ই জুন ১৯৬৬] কারাগারে থাকাকালীন তিনি তার ডাইরিতে লিখেন – “তারা [পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ] ছয় দফা সমর্থন করে কারণ তারা মুক্তি চায়, বাঁচতে চায়, খেতে চায়, ব্যক্তি স্বাধীনতা চায়” (শেখ মুজিবুর রহমান, কারাগারের রোজনামচা, ২০১৭, পৃ , ৬৯)।
রাজনৈতিক স্বাধীনতার লক্ষ্যে স্থির থেকে, অর্থনৈতিক দিকটি সামনে নিয়ে আসা একটি কৌশল ছিল মাত্র। অবশ্যই বুঝতে হবে যে, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম তখনও পরিচালিত হচ্ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে। এবং বঙ্গবন্ধু ভাল করেই জানতেন, তার যে কোন একটি ভুল পদক্ষেপ পূর্ব বাংলার জনগণের বৈধ এবং ন্যায়সংগত আন্দোলনকে শাসকশ্রেণি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করবে।
শেখ মুজিব তখন সবকিছু তার কাঁধে তুলে নিলেন। ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন তিনি। একজন অসাধারণ বাগ্মী ছিলেন। ১৯৬৬ থেকে ৭০ এই চার বছরে তিনি সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন। ছয় দফা আন্দোলন তাকে সাহায্য করলো বাঙালিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন প্রতীক হয়ে উঠতে। ছয় দফা ঘোষণার পাঁচ বছর পর বাংলাদেশের জন্ম হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমান হন তার প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি।
আজ বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের আশা ভরসার স্থলে পরিণত হয়েছে জাতির পিতার কন্যা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণেই আমরা এখন গর্বিত জাতিতে পরিণত হয়েছি। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বের রোল মডেল। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর অসামপ্ত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করবেন শেখ হাসিনা। তাই আমাদের সকলের উচিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করে দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির সোপানে নিয়ে যাওয়া। আমরা এটাও প্রত্যাশা করি, শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ এবং ২০৪১ এর আগেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হবে, যেখানে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম এবং পরিচালক, এফবিসিসিআই।