করোনা মহামারি: রপ্তানি শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ

  • Update Time : ১০:০২:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১
  • / 310

ড. কামরুল হাসান হীরা:

প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ধনী দেশগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, সৌদি আরব এবং ইরানের নাম। ঠিক তেমনি উন্নয়নশীল কিংবা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর নামের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ঘনবসতি ও জনবহুল দেশ হলেও প্রাকৃতিক সম্পদে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি গত এক দশকের বেশি সময় ধরে তৈরী পোশাক শিল্প উৎপাদনে বাংলাদেশ এক অনন্য ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু, গত মার্চ ২০২০ ইং হতে অদ্যবধি করোনা মহামারি জনিত পরিস্থিতি ঠেকাতে দেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলো হিমশিম খাচ্ছে। করোনা মহামারির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তার বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স এর উপর। ধারণা করা যায় রেমিট্যান্স সংগ্রহে সরকারের সফলতা থাকলেও দেশের রপ্তানি, আমদানি, দেশীয় বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীন বাণিজ্য এবং পর্যটন বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।

সর্বসাকুল্যে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক সংকটময় অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। দেশের রপ্তানি খাত সঙ্কটাপন্ন হওয়াতে শিল্প-কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে আছে। সূত্র মতে, গত ছয় বছরে দেশে প্রায় ১,২০০ টি বা তার অধিক সংখ্যক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়েছে। যার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধাচের কল কারখানার মালিকরা আছেন ঝুঁকিতে। তাছাড়া, সময়ের পরিক্রমায় এই ঝুঁকি আরো প্রকট আকার ধারণ করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। চলতি অর্থ বছরে চাকরি হারানোর ভয়ে সাধারণ শ্রমিকদের সময় কাটছে নানা দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে। একইভাবে, রপ্তানি বাণিজ্য এবং বৈদেশিক আয় কমে যাওয়ায় দেশের শ্রমবাজার একপ্রকার স্থবির। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বর্তমান রপ্তানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক হুমকিতে পড়বে তা অনেকটাই সুস্পষ্ট।

সরকার, মালিক এবং শ্রমিক পক্ষ থেকে শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফের বিষয় নিয়ে একমত পোষণ করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের চাকুরী হারানোটাই দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ। শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফের বিষয়গুলো সম্পর্কে দেশের সাধারণ শ্রমিকরা পরিচিত থাকলেও বাস্তবে তা অনেক কিছুই অজানা। এমন অনেক ছাঁটাইকৃত শ্রমিক আছেন যাদের মধ্যে বেশির ভাগ শ্রমিক চাকুরী হারানোর কষ্টকে মুখ্য ভাবার কারণে ছাঁটাই করার বিষয়গুলো আড়ালে চলে যায়। উপরন্তু, শ্রমিক ও শ্রমিক সংঘের সমঝোতা, শ্রমিক সংঘ ও মালিক পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয়গুলো থাকে ফাইল বন্ধি। এমনকি, আইনি সুরাহা বা আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে সাধারণ শ্রমিকদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায় ।

সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে যে সকল শ্রমিকরা কর্ম ক্ষেত্র ত্যাগ করেছে তাদের চাকরি হারাবার কোন ভয় নেই। এমনকি, শিল্প কল-কারখানাও বন্ধ হবে না। যা পোশাক শ্রমিকদের জন্য অবশ্যই আনন্দের বিষয়। দেশের এই ক্রান্তিকালে বর্তমান সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা রপ্তানি খাতে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু, কতদিন পর্যন্ত এ নিয়ম অব্যাহত থাকবে তা নিয়ে শ্রমিকদের মনে চলছে নানা গুঞ্জন। এই অনিশ্চিয়তা চলতে থাকলে বেকারত্ব, দারিদ্রতা, আর্থিক মন্দা সহ ইত্যাদি বিষয়গুলো দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি দিয়ে বলা যায় করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের অর্ধেক শ্রমজীবী মানুষ তাদের কাজ হারাতে পারেন। বর্তমানে দেশের পোশাক শিল্প-কারখানা সীমিত আকারে খুললেও শ্রমিকদের মধ্যে নানা ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। গবেষণায় উঠে এসেছে দেশে মোট ৬ কোটি ৮ লক্ষ মানুষ মজুরির বিনিময়ে কাজ করছেন যার মধ্যে প্রায় ৯০% শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা নেই।

আমরা জানি জীবন ও জীবিকা মানব জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের জন্য জীবিকা নাকি জীবিকার জন্য জীবন কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা মুখ্য নয়। বরং করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের পাশে থাকাটাই মালিক পক্ষের প্রধান দায়িত্ব। সত্যি-বলতে কবে নাগাদ রপ্তানি পণ্য বাজারজাত করা হবে কিংবা, কবে নাগাদ সাধারন শ্রমিকরা তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষেত্রে ফিরেবেন তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

এছাড়াও, গত এক বছরে রপ্তানি খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তার ঘাটতি পূরণে কারখানা মালিকরা আছেন নানা দুশ্চিন্তায় । বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের শিল্প, কল-কারখানা, চাকুরী, মজুরি, জনস্বাস্থ ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনা যেমন হুমকিতে রয়েছে।  ঠিক তেমনি শিল্প-কলকারখানা সাথে সম্পর্কযুক্ত ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িমালিকদের আয়-উপার্জন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার সাথে জড়িত শ্রমিক-মালিকরাও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় সমাধানের পথ একটাই তা হলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন।

হয়তো অচিরেই করোনা ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়বে। হয়তো করনা ভাইরাস তার সংক্রমনের শেষ ধাপে আছে। হয়তো শ্রমবাজার আবার নতুন ভাবে চাঙ্গা হবে। হয়তো একটা সময় শ্রমিক-মালিকদের মুখে হাসি ফুটবে। তবে এই মুহূর্তে শ্রমিক ছাঁটাই বা লেঅফ না করে বরং কর্মক্ষেত্রে চাকুরির স্থায়ী নিশ্চয়তা প্রদান সময়ের দাবি । হতদরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য খাদ্য, আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন। পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিকভাবে সাধারণ শ্রমিকরা কে কেমন আছে তার খোঁজ খবর রাখা মালিকপক্ষের গুরুদায়িত্ব।

এমতাবস্থায়, সরকারের সার্বিক সহযোগিতাই পারবে করোনা-কালীন ঝুঁকি থেকে শ্রমিক ও শিল্প মালিকদের বাঁচাতে। সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতার চেয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা আরও বেশি জরুরী। দেশের এহেন বিপদে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করার পরিবর্তে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি অপরিহার্য। এক্ষেত্রে, সরকার পক্ষ থেকে শুরু করে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, এনজিও, সিভিল সোসাইটি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজকর্মী সহ সকলে মিলে একসাথে কাজ করা বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি, করোনা পরবর্তী সময়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকদের ছাটাই না করে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারলে রপ্তানি খাতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: গবেষক ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

Please Share This Post in Your Social Media


করোনা মহামারি: রপ্তানি শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ

Update Time : ১০:০২:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুন ২০২১

ড. কামরুল হাসান হীরা:

প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ ধনী দেশগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, সৌদি আরব এবং ইরানের নাম। ঠিক তেমনি উন্নয়নশীল কিংবা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর নামের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ঘনবসতি ও জনবহুল দেশ হলেও প্রাকৃতিক সম্পদে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাকৃতিক সম্পদের পাশাপাশি গত এক দশকের বেশি সময় ধরে তৈরী পোশাক শিল্প উৎপাদনে বাংলাদেশ এক অনন্য ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু, গত মার্চ ২০২০ ইং হতে অদ্যবধি করোনা মহামারি জনিত পরিস্থিতি ঠেকাতে দেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলো হিমশিম খাচ্ছে। করোনা মহামারির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে তার বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে বৈদেশিক বাণিজ্য ও রেমিটেন্স এর উপর। ধারণা করা যায় রেমিট্যান্স সংগ্রহে সরকারের সফলতা থাকলেও দেশের রপ্তানি, আমদানি, দেশীয় বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীন বাণিজ্য এবং পর্যটন বাণিজ্যে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে।

সর্বসাকুল্যে, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ এক সংকটময় অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। দেশের রপ্তানি খাত সঙ্কটাপন্ন হওয়াতে শিল্প-কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে আছে। সূত্র মতে, গত ছয় বছরে দেশে প্রায় ১,২০০ টি বা তার অধিক সংখ্যক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়েছে। যার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধাচের কল কারখানার মালিকরা আছেন ঝুঁকিতে। তাছাড়া, সময়ের পরিক্রমায় এই ঝুঁকি আরো প্রকট আকার ধারণ করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। চলতি অর্থ বছরে চাকরি হারানোর ভয়ে সাধারণ শ্রমিকদের সময় কাটছে নানা দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে। একইভাবে, রপ্তানি বাণিজ্য এবং বৈদেশিক আয় কমে যাওয়ায় দেশের শ্রমবাজার একপ্রকার স্থবির। এভাবে চলতে থাকলে দেশের বর্তমান রপ্তানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প মারাত্মক হুমকিতে পড়বে তা অনেকটাই সুস্পষ্ট।

সরকার, মালিক এবং শ্রমিক পক্ষ থেকে শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফের বিষয় নিয়ে একমত পোষণ করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের চাকুরী হারানোটাই দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ। শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফের বিষয়গুলো সম্পর্কে দেশের সাধারণ শ্রমিকরা পরিচিত থাকলেও বাস্তবে তা অনেক কিছুই অজানা। এমন অনেক ছাঁটাইকৃত শ্রমিক আছেন যাদের মধ্যে বেশির ভাগ শ্রমিক চাকুরী হারানোর কষ্টকে মুখ্য ভাবার কারণে ছাঁটাই করার বিষয়গুলো আড়ালে চলে যায়। উপরন্তু, শ্রমিক ও শ্রমিক সংঘের সমঝোতা, শ্রমিক সংঘ ও মালিক পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়ার বিষয়গুলো থাকে ফাইল বন্ধি। এমনকি, আইনি সুরাহা বা আদালত পর্যন্ত পৌঁছাতে সাধারণ শ্রমিকদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায় ।

সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, করোনার কারণে যে সকল শ্রমিকরা কর্ম ক্ষেত্র ত্যাগ করেছে তাদের চাকরি হারাবার কোন ভয় নেই। এমনকি, শিল্প কল-কারখানাও বন্ধ হবে না। যা পোশাক শ্রমিকদের জন্য অবশ্যই আনন্দের বিষয়। দেশের এই ক্রান্তিকালে বর্তমান সরকার যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তা রপ্তানি খাতে কিছুটা হলেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু, কতদিন পর্যন্ত এ নিয়ম অব্যাহত থাকবে তা নিয়ে শ্রমিকদের মনে চলছে নানা গুঞ্জন। এই অনিশ্চিয়তা চলতে থাকলে বেকারত্ব, দারিদ্রতা, আর্থিক মন্দা সহ ইত্যাদি বিষয়গুলো দেশের সার্বিক উন্নয়নে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

আন্তর্জাতিক সংস্থার বিবৃতি দিয়ে বলা যায় করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের অর্ধেক শ্রমজীবী মানুষ তাদের কাজ হারাতে পারেন। বর্তমানে দেশের পোশাক শিল্প-কারখানা সীমিত আকারে খুললেও শ্রমিকদের মধ্যে নানা ভয় ও আতঙ্ক কাজ করছে। গবেষণায় উঠে এসেছে দেশে মোট ৬ কোটি ৮ লক্ষ মানুষ মজুরির বিনিময়ে কাজ করছেন যার মধ্যে প্রায় ৯০% শ্রমিকের কাজের নিশ্চয়তা নেই।

আমরা জানি জীবন ও জীবিকা মানব জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের জন্য জীবিকা নাকি জীবিকার জন্য জীবন কোনটি গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করা মুখ্য নয়। বরং করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের পাশে থাকাটাই মালিক পক্ষের প্রধান দায়িত্ব। সত্যি-বলতে কবে নাগাদ রপ্তানি পণ্য বাজারজাত করা হবে কিংবা, কবে নাগাদ সাধারন শ্রমিকরা তাদের স্বাভাবিক কর্মক্ষেত্রে ফিরেবেন তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।

এছাড়াও, গত এক বছরে রপ্তানি খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তার ঘাটতি পূরণে কারখানা মালিকরা আছেন নানা দুশ্চিন্তায় । বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের শিল্প, কল-কারখানা, চাকুরী, মজুরি, জনস্বাস্থ ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাপনা যেমন হুমকিতে রয়েছে।  ঠিক তেমনি শিল্প-কলকারখানা সাথে সম্পর্কযুক্ত ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়িমালিকদের আয়-উপার্জন, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার সাথে জড়িত শ্রমিক-মালিকরাও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। উপরোক্ত বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে বলা যায় সমাধানের পথ একটাই তা হলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন।

হয়তো অচিরেই করোনা ভাইরাস দুর্বল হয়ে পড়বে। হয়তো করনা ভাইরাস তার সংক্রমনের শেষ ধাপে আছে। হয়তো শ্রমবাজার আবার নতুন ভাবে চাঙ্গা হবে। হয়তো একটা সময় শ্রমিক-মালিকদের মুখে হাসি ফুটবে। তবে এই মুহূর্তে শ্রমিক ছাঁটাই বা লেঅফ না করে বরং কর্মক্ষেত্রে চাকুরির স্থায়ী নিশ্চয়তা প্রদান সময়ের দাবি । হতদরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য খাদ্য, আর্থিক অনুদান ও চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন। পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিকভাবে সাধারণ শ্রমিকরা কে কেমন আছে তার খোঁজ খবর রাখা মালিকপক্ষের গুরুদায়িত্ব।

এমতাবস্থায়, সরকারের সার্বিক সহযোগিতাই পারবে করোনা-কালীন ঝুঁকি থেকে শ্রমিক ও শিল্প মালিকদের বাঁচাতে। সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের মধ্যে সমঝোতার চেয়ে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা আরও বেশি জরুরী। দেশের এহেন বিপদে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করার পরিবর্তে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি অপরিহার্য। এক্ষেত্রে, সরকার পক্ষ থেকে শুরু করে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, এনজিও, সিভিল সোসাইটি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজকর্মী সহ সকলে মিলে একসাথে কাজ করা বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি, করোনা পরবর্তী সময়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিকদের ছাটাই না করে তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে পারলে রপ্তানি খাতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: গবেষক ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।