পরিবেশ উন্নয়নে বাজেট বাড়ানোর দাবি পরিবেশবাদীদের
- Update Time : ১২:০১:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
- / 196
ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ। নদী ভাঙন ও অতিবৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করছে। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েই জাতীয় বাজেট করার কথা থাকলেও, এতে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত থাকছে। তাই এবারের বাজেটে পরিবেশের ওপর বরাদ্দ ও গ্রিন ডেভেলপমেন্টে নজর দিতে বলছেন পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশ সংবেদনশীলতার বিষয়টি আমলে নেয়া হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিত থাকে।
জানা গেছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জন্য আসন্ন বাজেটে ১ হাজার ২২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এটাকে অপ্রতুল বলছেন পরিবেশবাদীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, বাজেটে পরিবেশ বরাবরই অবহেলিত থাকে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যখাতে আরও বেশি বরাদ্দ দরকার। করোনাভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বে এখন গ্রিন রিকোভারি করা হচ্ছে। সবাই একটা সুযোগ পেয়েছে তার পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড রিভিউ করার। এ জন্য গ্রিন ডেভেলপমেন্টে নজর দিতে হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য বাজেটের বরাদ্দে রিসাইকেল, গ্রিন এনার্জি ও ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয়গুলো আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের নদ-নদী ও বনাঞ্চলকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। এছাড়া পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, উন্নয়ন পরিকল্পনায় ডার্টি ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে প্রাধান্য না দেয়া—এসব বিষয় বাজেটে প্রাধান্য পাবে বলে আশা করি।
জানা গেছে, দেশ দুর্যোগ প্রবণ হয়ে উঠলেও পরিবেশ উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ না বাড়িয়ে উল্টো কমানো হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটে এই মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছিল ১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয় ১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থ বছরের তুলনায় ২৪৯ কোটি টাকা কম। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা সবসময় লক্ষ্য করে আসছি, পরিবেশ মন্ত্রণালয় কম বাজেট পাওয়া মন্ত্রণালয়ের একটি। পরিবেশের উন্নয়নে কিছু করতে বললে তারা বাজেট ও লোকবল সংকটের কথা বলে। ৬৪ জেলায় পরিবেশ কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত, কিন্তু সব জায়গায় বিসিএস পরিবেশ ক্যাডার নেই। উপজেলা লেভেলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। নদীগুলো এখন উপজেলা থেকে দখল ও দূষণ করা শুরু হয়েছে। এসব রোধে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।
তিনি আরও বলেন, এবারের বাজেটে গ্রিন ডেভেলপমেন্টকে আলাদা করে গুরুত্ব দেয়া উচিত। মিথেন গ্যাস নিয়ে একটি গবেষণা আমাদের সামনে এসেছে। বর্জ্যের পাহাড় জমে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, উৎপন্ন হচ্ছে বিপদজনক মিথেন। এটা নিয়ে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বর্জ্যকে যদি এনার্জিতে রূপান্তর করা যেত, বর্জ্যকে যদি পুনরায় ব্যবহার করা যেত তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হতো।
কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা বর্জ্যকে কাজে লাগাতে পারলে পরিবেশ দূষণ কমতো। গরম কমতো, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ে আমাদের যে ভূমিকা আছে, সেটা থাকতো না। আরেকদিকে আমরা জ্বালানিসহ অনেক কিছু পেতাম। বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস বা জ্বালানি তৈরি করতে যে ধরনের প্লান্ট দরকার সেগুলো আমদানিতে ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এসবে ভর্তুকি দেয়াও প্রয়োজন।
সবুজ আন্দোলনের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার বলেন, আমরা বরাবরই দেখছি পরিবেশের জন্য যে বাজেট দেয়া হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য আমরা বন, পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের জন্য অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকার বাজেট চেয়েছি। নদীর দূষণ কমানো, রাজধানীকে সবুজায়ন, পরিবেশ দূষণ কমানো ও বনায়ন বাড়াতে অনেক বরাদ্দ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পাহাড় কাটা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়বে। এছাড়া পাহাড়ে সবুজায়ন করতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নের জন্য গাছ কাটার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। বন উজাড়ের যে সংস্কৃতি, তা থেকে বের হতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, সেগুলো নিতে বাজেটে সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বিভাগীয় শহরে রিসাইক্লিং পয়েন্ট বা উন্নত ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা প্রয়োজন। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি করার প্রক্রিয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাদের প্রণোদনা দেয়া উচিত। পলিথিন বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বাড়াতে কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।