রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
- Update Time : ১০:১০:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মে ২০২১
- / 207
দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্তে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।
একইসঙ্গে রোজিনাকে হেনস্তা, হয়রানি, মামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তি, মামলা প্রত্যাহার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ করা এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। বেলা ১১টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর সোয়া দুইটার দিকে।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রোজিনা ইসলাম সত্য প্রকাশ, অবাধ তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতীক ও সংগ্রামী। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতীক তিনি।
তিনি বলেন, রোজিনা ইসলাম যে তথ্য চুরি করতে গিয়েছেন, সেটি তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, সেটি জনগণের তথ্য। তাই চৌর্যবৃত্তির যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, সেটি বা অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অবাধ তথ্যের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
সভাপতির বক্তব্যে ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, রোজিনা ইসলামকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ও মামলায় যা লেখা হয়েছে, এর মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। একটা স্বাধীন, নিরপেক্ষ কমিটি করে এই ঘটনার তদন্ত করতে হবে। আর তদন্ত কমিটি গঠিত হতে হবে প্রশাসনমুক্ত।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, দেশের সাংবাদিকতায় একটা ক্রান্তিকাল চলছে। রোজিনা ইসলামের ওপর হেনস্তার ঘটনায় রোজিনাকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।
রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সমালোচনা করেছেন ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান। তিনি বলেন, আমলাতন্ত্রের নেতৃত্বে কোনো কমিটি আমরা চাই না। সবচেয়ে বড় কষ্ট, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে নির্যাতন হয়েছে, তা সভ্য দেশে হতে পারে না মন্তব্য করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এভাবে কোনো সাংবাদিককে আটকে রাখতে পারে না। একটা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করতে হবে, যেখানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিরা থাকবে, কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কেউ থাকবে না।
রোজিনা ইসলামকে দোষী করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমগুলোর সমালোচনা করেন ডিইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। তিনি বলেন, পত্রিকার মালিকরা সামান্য একটা বিজ্ঞাপনের লোভ সামলাতে পারল না। ২৫-৩০ হাজার টাকার একটা বিজ্ঞাপনের কাছে বিক্রি হয়ে গেল।
সমাবেশে আরও অংশ নেওয়া সাংবাদিক সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি, বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক পরিষদ, বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ আন্তধর্মীয় লেখক ও সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সাংবাদিক জোট, ঢাকা বিভাগ সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, লালমনিরহাট সাংবাদিক ফোরাম, শরীয়তপুর সাংবাদিক সমিতি।
এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বাইরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের নেতারা রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিচার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান।
এ ছাড়া রোজিনা ইসলামকে শর্তহীনভাবে মুক্তির দাবিতে সকালে প্রেসক্লাবের বাইরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, জাতীয় নারী জোট, জাতীয় শ্রমিক জোট, জাতীয় যুব জোট।