সাংবাদিক হেনস্থার পেছনে কারা; তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক

  • Update Time : ১২:৫৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১
  • / 193

 

বাণী ইয়াসমিন হাসি:

শুধু প্রেস রিলিজ সংগ্রহ আর প্রেস কনফারেন্স কাভার করা নিশ্চয়ই একজন সাংবাদিকের একমাত্র কাজ না। রোজিনা ইসলামের কলমের খোঁচায় অনেকের অনেক জারিজুরি ফাঁস হয়েছে। রোজিনা ইসলামকে ছয় ঘণ্টা যাবত আটকে রাখা হয়েছিলো স্বাস্থ্য সচিবের পাশের রুমে। রোজিনা ইসলামের মতন একজন প্রমিনেন্ট সাংবাদিকের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অন্যদের বেলায় কি হবে!রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছয় ঘণ্টা সচিবালয়ে আটকে রেখে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ এই প্রতিবেদককে।

রোজিনা ইসলামের অপরাধটা আসলে কি? কেন তাকে ছয় ঘণ্টা যাবত আটকে রেখেছিলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়? সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম নিয়োগে দুর্নীতিসহ স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট করেছেন। এসব কারণেই কি ক্ষুব্ধ মন্ত্রণালয়? আজকের এই হেনস্থা কি তারই জের?

দেশে এই মুহূর্তে রোজিনা ইসলামের মত সাহসী, মেধাবী এবং প্রতিশ্রুতিশীল রিপোর্টার খুব কমই আছে। একটি ভালো রিপোর্টের জন্য রিপোর্টারকে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। দিনের পর দিন লেগে থাকতে হয়। একটি ভালো রিপোর্টের পেছনের গল্প আরেকটি মহাকাব্য। সেখানে পরতে পরতে থাকে ঝুঁকি, ডেডিকেশন আর ভয়কে জয় করার গল্প।
.
সাংবাদিকতার সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এবং নিজে এই পেশায় আছি বলেই জানি তথ্য পাওয়ার কাজটি কতটা কঠিন। আমাদের আমলাতন্ত্রের কাজই যেখানে তথ্য লুকানো সেখানে একজন রিপোর্টারকে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পেতে অনেক কৌশলই নিতে হয়। আর এটা নিশ্চয়ই গর্হিত কোন অপরাধ নয়?
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। মাননীয় মন্ত্রী, সচিব এবং নীতিনির্ধারকরা দয়া করে এটি নিয়ে একটু ভাবুন। পারলে গোপনীয়তার সংস্কৃতি ভাঙুন। আইনের ধারাগুলো এমন করা হোক যেন একজন পেশাদার সাংবাদিক চাওয়ামাত্র দুর্নীতি-অনিয়মের সব তথ্য পায়।

স্বাধীন গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। বাংলাদেশের হাইকোর্ট গতবছরের ১৬ মার্চ একটি মামলা চলাকালে এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এই চতুর্থ স্তম্ভ মানে সাংবাদিকরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে রাষ্ট্রের বাকি তিন স্তম্ভ (আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কাজেই সাংবাদিকদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রশ্ন-নিয়োগে যে কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে সেই নথি কি এমনি এমনি আপনারা দেবেন? আপনারা কোটি টাকার দুর্নীতি করবেন সমস্যা নেই, সেটা প্রকাশ করার চেষ্টা করলেই সব সমস্যা! হয়রানি না করে সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা করতে সহায়তা করুন। করোনাকে পুঁজি করে যারা কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম করছে- পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।

সাহসী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ । ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করায় দুই দফা তিনি সংজ্ঞাহীন হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়! কোভিডের সময় সরকারের টাকা নয়-ছয় করে যে সব কর্মকর্তা আর ঠিকাদারেরা যোগসাজশে সরকারকে জনগণের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন তাদের শাস্তি সময়ের দাবি।

আওয়ামী লীগ বা তার সহযোগী কোন সংগঠনের কেউ দুর্নীতি করেনি। দুর্নীতি করেছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চুরির রিপোর্ট করা যাবে না; সংবিধানের কোথাও এটা লেখা নেই। সরকারকে বিব্রত করতে সূক্ষ্মভাবে কারা এত আয়োজন করছে? সাংবাদিক হেনস্থার পেছনে কারা; তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক।

লেখক : সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট।

Please Share This Post in Your Social Media


সাংবাদিক হেনস্থার পেছনে কারা; তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক

Update Time : ১২:৫৪:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ মে ২০২১

 

বাণী ইয়াসমিন হাসি:

শুধু প্রেস রিলিজ সংগ্রহ আর প্রেস কনফারেন্স কাভার করা নিশ্চয়ই একজন সাংবাদিকের একমাত্র কাজ না। রোজিনা ইসলামের কলমের খোঁচায় অনেকের অনেক জারিজুরি ফাঁস হয়েছে। রোজিনা ইসলামকে ছয় ঘণ্টা যাবত আটকে রাখা হয়েছিলো স্বাস্থ্য সচিবের পাশের রুমে। রোজিনা ইসলামের মতন একজন প্রমিনেন্ট সাংবাদিকের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে অন্যদের বেলায় কি হবে!রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আজ সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় এবং তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ছয় ঘণ্টা সচিবালয়ে আটকে রেখে শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ এই প্রতিবেদককে।

রোজিনা ইসলামের অপরাধটা আসলে কি? কেন তাকে ছয় ঘণ্টা যাবত আটকে রেখেছিলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়? সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম নিয়োগে দুর্নীতিসহ স্বাস্থ্যখাতের নানা অনিয়ম নিয়ে সিরিজ রিপোর্ট করেছেন। এসব কারণেই কি ক্ষুব্ধ মন্ত্রণালয়? আজকের এই হেনস্থা কি তারই জের?

দেশে এই মুহূর্তে রোজিনা ইসলামের মত সাহসী, মেধাবী এবং প্রতিশ্রুতিশীল রিপোর্টার খুব কমই আছে। একটি ভালো রিপোর্টের জন্য রিপোর্টারকে অনেক ঝুঁকি নিতে হয়। দিনের পর দিন লেগে থাকতে হয়। একটি ভালো রিপোর্টের পেছনের গল্প আরেকটি মহাকাব্য। সেখানে পরতে পরতে থাকে ঝুঁকি, ডেডিকেশন আর ভয়কে জয় করার গল্প।
.
সাংবাদিকতার সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এবং নিজে এই পেশায় আছি বলেই জানি তথ্য পাওয়ার কাজটি কতটা কঠিন। আমাদের আমলাতন্ত্রের কাজই যেখানে তথ্য লুকানো সেখানে একজন রিপোর্টারকে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পেতে অনেক কৌশলই নিতে হয়। আর এটা নিশ্চয়ই গর্হিত কোন অপরাধ নয়?
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২তম। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। মাননীয় মন্ত্রী, সচিব এবং নীতিনির্ধারকরা দয়া করে এটি নিয়ে একটু ভাবুন। পারলে গোপনীয়তার সংস্কৃতি ভাঙুন। আইনের ধারাগুলো এমন করা হোক যেন একজন পেশাদার সাংবাদিক চাওয়ামাত্র দুর্নীতি-অনিয়মের সব তথ্য পায়।

স্বাধীন গণমাধ্যম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। বাংলাদেশের হাইকোর্ট গতবছরের ১৬ মার্চ একটি মামলা চলাকালে এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এই চতুর্থ স্তম্ভ মানে সাংবাদিকরা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে রাষ্ট্রের বাকি তিন স্তম্ভ (আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কাজেই সাংবাদিকদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে দিন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি প্রশ্ন-নিয়োগে যে কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে সেই নথি কি এমনি এমনি আপনারা দেবেন? আপনারা কোটি টাকার দুর্নীতি করবেন সমস্যা নেই, সেটা প্রকাশ করার চেষ্টা করলেই সব সমস্যা! হয়রানি না করে সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা করতে সহায়তা করুন। করোনাকে পুঁজি করে যারা কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়ম করছে- পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।

সাহসী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ । ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন করায় দুই দফা তিনি সংজ্ঞাহীন হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়! কোভিডের সময় সরকারের টাকা নয়-ছয় করে যে সব কর্মকর্তা আর ঠিকাদারেরা যোগসাজশে সরকারকে জনগণের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন তাদের শাস্তি সময়ের দাবি।

আওয়ামী লীগ বা তার সহযোগী কোন সংগঠনের কেউ দুর্নীতি করেনি। দুর্নীতি করেছে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের চুরির রিপোর্ট করা যাবে না; সংবিধানের কোথাও এটা লেখা নেই। সরকারকে বিব্রত করতে সূক্ষ্মভাবে কারা এত আয়োজন করছে? সাংবাদিক হেনস্থার পেছনে কারা; তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক।

লেখক : সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট।