ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে

  • Update Time : ০৬:১৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • / 247
শাহারিয়ার বেলাল:
ভালোবাসা বলতে আসলে কি বুঝি? কয়জনই বা পারে এর সঠিক সংজ্ঞা দিতে।
ভালোবাসা ও প্রেম শব্দ দুটির অর্থ একই। অন্যদিকে এই দুটি শব্দের মাঝে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। ভালোবাসাটা মানুষের আবেগ অনুভূতির একটা স্বাভাবিক রূপ। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার উৎপত্তি। অবশ্য ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আরো ব্যাপক, এটা যেকোন ঘটনা, ব্যক্তি, প্রাণী, স্মৃতি, বিষয় ইত্যাদির ব্যাপারেও হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা বলতে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অজানা আবেগকেই বুঝায় না। সন্তানের প্রতি মা-বাবার আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা, মা-বাবার প্রতি সন্তানের নম্র আচরণ, ভাইয়ের প্রতি বোনের, বোনের প্রতি ভাইয়ের স্নেহের সেই পবিত্র বাঁধনকেও ভালোবাসা বলা হয়। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন মানুষের প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকতে পারে, তবে সেটাকে প্রেম বলা যাবে না। প্রেমটা তখনই হবে যখন বিষয়টা দু’দিক থেকেই হবে। তবে অবশ্যই সেটা ভালোবাসা থেকেও অনেক গভীর হতে হবে।
.
ভালোবাসা মানে কমিটমেন্ট। একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা। কখনও প্রিয় মানুষটির প্রতি অশুভ আচরণ না করা। ক্ষতি না চাওয়া। সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকা। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ার নামই ভালোবাসা। এ ভালোবাসা কালের মতো পরিবর্তন হবে না। সব সময় একই থাকবে। তবে এ ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা দিবসের জন্য নয়। এ দিন উপলক্ষেও নয়। সারা জীবনের জন্য। সুখে-দুঃখে সব সময় ভালোবাসা। মায়া দেখানো। কখনও বা আদর দেখানো আবার শাসনও করা। খুব সহজ ভাবে বলতে যেমন ছোট ছোট রাজ্য নিয়ে বৃহৎ কোন রাষ্ট্র গঠিত হয়।তেমনি ছোট ছোট প্রেমের পরশ দিয়ে ভালোবাসা নামের রাষ্ট্র গঠন করা যায়।সর্বোপরি, প্রেম শব্দটি সহজ কিছু নির্দেশ করে আর ভালোবাসা মহৎ, অতল গভীর, আর শ্বাশত কিছু নির্দেশ  করে।
.
ভালোবাসা হল একটি চারাগাছের মত, যাকে ‘বিশ্বাস’ নামক পানি দিয়ে সবসময় সিক্ত রাখতে হয় এবং ‘অভিমান’ নামক আগাছাগুলোকে কয়েকদিন পর পর পরিষ্কার করতে হয়। তখনই কেবল এই চারাগাছটি মাটিতে শক্ত শেকড় গজিয়ে বেড়ে উঠবে ও সুস্বাদু ফল দিবে, যখন আপনি একে সঠিক পরিচর্যা ও পানি (বিশ্বাস) দিয়ে পরম মমতায় আঁকড়ে রাখতে পারবেন।
.
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। যা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নামে পরিচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এই বিশেষ দিবসটি পালিত হচ্ছে। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ। বাংলা ফাল্গুন মাসের ঠিক শুরুর দিকেে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়ে আসছে। নতুন রূপে প্রকৃতিকে সাজাবে ঋতুরাজ বসন্ত। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত, আনন্দ উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মনপ্রাণ কেড়ে নেয়ার সাথে সাথে ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে উঠবে এক নতুন পৃথিবী।
.
দিবসটির জাকজমকপূর্ণ আয়োজন মূলত শহরেই বেশি দেখা যায়। তবে ইদানীং গ্রামাঞ্চলেও ছোয়া লেগেছে এই ভালোবাসা দিবসের। আর এই দিবসটিতে ভালোবাসা নিবেদনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ফুল। ফুল ছাড়া এই দিবসটি উদযাপন হবে তা কল্পনাই করা যায় না। সেই ফুল ভালোবাসা দিবসে কেউ দিবে মাকে। কেউ দিবে বাবাকে। কেউ দিবে আদরের ছোট ভাই-বোনদের। কেউ বা দিবে প্রিয় বন্ধু কিংবা বান্ধবীকে। কেউ আবার ফুল নিয়ে গোপনে রেখে দিবে মনের মানুষটিকে দিতে।
.
পুরো একটি বছরের চাপা অভিমানের অবসান ঘটিয়ে তাজা গোলাপের সুবাসে সব অভিমান পেছনে ফেলে প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয়ে প্রবাহিত হবে প্রেমের এক নতুন ধারা। যে ধারায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে প্রেমিক প্রেমিকার অতৃপ্ত মনকে।
.
আসুন, ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসি প্রিয়জনকে, ভালোবাসি মা-বাবাকে, ভালোবাসি ভাই-বোনকে, ভালোবাসি পাড়া-প্রতিবেশীকে এবং ভালোবাসি সেই সব অসহায় মানুষদেরকে, যাদের ভালোবাসার মত কেউ নেই। আপনার আমার একটুখানি ভালোবাসা আর মমতার ছোয়ার তাদের হৃদয়টাও একটুখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পাবে। তাহলেই হয়তো আজকের এই বিশেষ দিনটি বিশেষভাবে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে প্রকৃত ভালোবাসায়।
.
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
.
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে

Update Time : ০৬:১৩:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
শাহারিয়ার বেলাল:
ভালোবাসা বলতে আসলে কি বুঝি? কয়জনই বা পারে এর সঠিক সংজ্ঞা দিতে।
ভালোবাসা ও প্রেম শব্দ দুটির অর্থ একই। অন্যদিকে এই দুটি শব্দের মাঝে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। ভালোবাসাটা মানুষের আবেগ অনুভূতির একটা স্বাভাবিক রূপ। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোলাগা, শ্রদ্ধাবোধ থেকেই মূলত ভালোবাসার উৎপত্তি। অবশ্য ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আরো ব্যাপক, এটা যেকোন ঘটনা, ব্যক্তি, প্রাণী, স্মৃতি, বিষয় ইত্যাদির ব্যাপারেও হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা বলতে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অজানা আবেগকেই বুঝায় না। সন্তানের প্রতি মা-বাবার আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা, মা-বাবার প্রতি সন্তানের নম্র আচরণ, ভাইয়ের প্রতি বোনের, বোনের প্রতি ভাইয়ের স্নেহের সেই পবিত্র বাঁধনকেও ভালোবাসা বলা হয়। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন মানুষের প্রতি আপনার ভালোবাসা থাকতে পারে, তবে সেটাকে প্রেম বলা যাবে না। প্রেমটা তখনই হবে যখন বিষয়টা দু’দিক থেকেই হবে। তবে অবশ্যই সেটা ভালোবাসা থেকেও অনেক গভীর হতে হবে।
.
ভালোবাসা মানে কমিটমেন্ট। একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা। কখনও প্রিয় মানুষটির প্রতি অশুভ আচরণ না করা। ক্ষতি না চাওয়া। সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকা। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ার নামই ভালোবাসা। এ ভালোবাসা কালের মতো পরিবর্তন হবে না। সব সময় একই থাকবে। তবে এ ভালোবাসা শুধু ভালোবাসা দিবসের জন্য নয়। এ দিন উপলক্ষেও নয়। সারা জীবনের জন্য। সুখে-দুঃখে সব সময় ভালোবাসা। মায়া দেখানো। কখনও বা আদর দেখানো আবার শাসনও করা। খুব সহজ ভাবে বলতে যেমন ছোট ছোট রাজ্য নিয়ে বৃহৎ কোন রাষ্ট্র গঠিত হয়।তেমনি ছোট ছোট প্রেমের পরশ দিয়ে ভালোবাসা নামের রাষ্ট্র গঠন করা যায়।সর্বোপরি, প্রেম শব্দটি সহজ কিছু নির্দেশ করে আর ভালোবাসা মহৎ, অতল গভীর, আর শ্বাশত কিছু নির্দেশ  করে।
.
ভালোবাসা হল একটি চারাগাছের মত, যাকে ‘বিশ্বাস’ নামক পানি দিয়ে সবসময় সিক্ত রাখতে হয় এবং ‘অভিমান’ নামক আগাছাগুলোকে কয়েকদিন পর পর পরিষ্কার করতে হয়। তখনই কেবল এই চারাগাছটি মাটিতে শক্ত শেকড় গজিয়ে বেড়ে উঠবে ও সুস্বাদু ফল দিবে, যখন আপনি একে সঠিক পরিচর্যা ও পানি (বিশ্বাস) দিয়ে পরম মমতায় আঁকড়ে রাখতে পারবেন।
.
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। যা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ নামে পরিচিত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও এই বিশেষ দিবসটি পালিত হচ্ছে। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিনটি ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ। বাংলা ফাল্গুন মাসের ঠিক শুরুর দিকেে এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়ে আসছে। নতুন রূপে প্রকৃতিকে সাজাবে ঋতুরাজ বসন্ত। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত, আনন্দ উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মনপ্রাণ কেড়ে নেয়ার সাথে সাথে ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে উঠবে এক নতুন পৃথিবী।
.
দিবসটির জাকজমকপূর্ণ আয়োজন মূলত শহরেই বেশি দেখা যায়। তবে ইদানীং গ্রামাঞ্চলেও ছোয়া লেগেছে এই ভালোবাসা দিবসের। আর এই দিবসটিতে ভালোবাসা নিবেদনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ফুল। ফুল ছাড়া এই দিবসটি উদযাপন হবে তা কল্পনাই করা যায় না। সেই ফুল ভালোবাসা দিবসে কেউ দিবে মাকে। কেউ দিবে বাবাকে। কেউ দিবে আদরের ছোট ভাই-বোনদের। কেউ বা দিবে প্রিয় বন্ধু কিংবা বান্ধবীকে। কেউ আবার ফুল নিয়ে গোপনে রেখে দিবে মনের মানুষটিকে দিতে।
.
পুরো একটি বছরের চাপা অভিমানের অবসান ঘটিয়ে তাজা গোলাপের সুবাসে সব অভিমান পেছনে ফেলে প্রেমিক প্রেমিকার হৃদয়ে প্রবাহিত হবে প্রেমের এক নতুন ধারা। যে ধারায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে প্রেমিক প্রেমিকার অতৃপ্ত মনকে।
.
আসুন, ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসি প্রিয়জনকে, ভালোবাসি মা-বাবাকে, ভালোবাসি ভাই-বোনকে, ভালোবাসি পাড়া-প্রতিবেশীকে এবং ভালোবাসি সেই সব অসহায় মানুষদেরকে, যাদের ভালোবাসার মত কেউ নেই। আপনার আমার একটুখানি ভালোবাসা আর মমতার ছোয়ার তাদের হৃদয়টাও একটুখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পাবে। তাহলেই হয়তো আজকের এই বিশেষ দিনটি বিশেষভাবে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে প্রকৃত ভালোবাসায়।
.
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
.