খুবি’র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

  • Update Time : ০৩:১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১
  • / 147

রাকিবুল হাসান,বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি:

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ২১২তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো, শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকা ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে ৩ শিক্ষক ও ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(বশেমুরবিপ্রবি)।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি)বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু এই মেরুদন্ড যদি জাতির উন্নতির কথা চিন্তা না করে অবনতির কথা চিন্তা করে, তাহলে জাতির জন্য সেটা হুমকি স্বরূপশিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানানো কোনো অপরাধ হতে পারেনা বরং বিবেকবান অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকরা তাদের যথার্থ কাজটি করেছেন।

কিন্তু বিনা কারনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা মানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দূর্নীতি ও নতুন কোন বড় ধরনের অপরাধকে ইঙ্গিত করে।” তিনি বলেন, “প্রশাসনের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের পেছনে প্রতিশোধ পরায়ণ কিছু উপাদান বিশেষভাবে দায়ী, যা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। বিনা কারনে যুক্তিক দাবি সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বহিষ্কার করা মানে দেশের প্রতিটা শিক্ষককে অপমান করা বলে জানান তিনি।” মানববন্ধনে একাত্ত্ব প্রকাশ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. মো. হাসিবুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিতা।

একজন শিক্ষার্থী তার ন্যায্য অধিকার এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি যুক্তিক দাবি জানাতে পারে। কিন্তু এতে করে তাদেরকে বহিষ্কার করার কথা মানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন কোন দূর্নীতির উপলক্ষকে নির্দেশ দেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার প্রতি শিক্ষকদের সমর্থন থাকা এবং তা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করে শিক্ষক হিসেবে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রত্যেক শিক্ষকের নৈতিক দায়ত্ব বলে মনে করেন তিনি এবং অনতিবিলম্বে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে প্রতিবাদ জানান।” মানববন্ধনে উপস্থিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল মিলন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত চিন্তার কেন্দ্র।

এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মুক্তচিন্তাকে বিকশিত করবে এবং তাদের যেকোন ন্যায্য দাবি আদায়ে সর্বদা প্রতিবাদ করবে। কিন্তু তাদের প্রতিবাদকে অন্যায় হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা খুবি প্রশাসনের উচিত হয়নি।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী তার ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সাথে অধিকার আদায়ে সহযোগীতা করবে। কিন্তু সেটাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হুমকি স্বরূপ বিবেচনা করাকে প্রশাসনিক দূর্বলতা কিংবা দূর্নীতিকে ইঙ্গিত করা বুঝায় বলে জানান তিনি।”

উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের জানুয়ারীতে খুবি’তে সাধারন শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা পূরণে এবং প্রশাসনিক নানা দূর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। তাদের এ আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে সমর্থন করায় ১বছর পর শিক্ষার্থীদের “উসকানি” দেওয়ার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, একই বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে বহিষ্কার করা হয়। এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ২শিক্ষার্থীকেও বহিষ্কার করা হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


খুবি’র শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

Update Time : ০৩:১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১

রাকিবুল হাসান,বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি:

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ২১২তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানো, শৃঙ্খলা-পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকা ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে ৩ শিক্ষক ও ২ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(বশেমুরবিপ্রবি)।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি)বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্যে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো জাতির মেরুদন্ড। কিন্তু এই মেরুদন্ড যদি জাতির উন্নতির কথা চিন্তা না করে অবনতির কথা চিন্তা করে, তাহলে জাতির জন্য সেটা হুমকি স্বরূপশিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানানো কোনো অপরাধ হতে পারেনা বরং বিবেকবান অভিভাবক হিসেবে শিক্ষকরা তাদের যথার্থ কাজটি করেছেন।

কিন্তু বিনা কারনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা মানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দূর্নীতি ও নতুন কোন বড় ধরনের অপরাধকে ইঙ্গিত করে।” তিনি বলেন, “প্রশাসনের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের পেছনে প্রতিশোধ পরায়ণ কিছু উপাদান বিশেষভাবে দায়ী, যা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক। বিনা কারনে যুক্তিক দাবি সমর্থনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বহিষ্কার করা মানে দেশের প্রতিটা শিক্ষককে অপমান করা বলে জানান তিনি।” মানববন্ধনে একাত্ত্ব প্রকাশ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. মো. হাসিবুর রহমান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পিতা।

একজন শিক্ষার্থী তার ন্যায্য অধিকার এবং মৌলিক চাহিদা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি যুক্তিক দাবি জানাতে পারে। কিন্তু এতে করে তাদেরকে বহিষ্কার করার কথা মানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নতুন কোন দূর্নীতির উপলক্ষকে নির্দেশ দেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার প্রতি শিক্ষকদের সমর্থন থাকা এবং তা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করে শিক্ষক হিসেবে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা প্রত্যেক শিক্ষকের নৈতিক দায়ত্ব বলে মনে করেন তিনি এবং অনতিবিলম্বে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে প্রতিবাদ জানান।” মানববন্ধনে উপস্থিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল মিলন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্ত চিন্তার কেন্দ্র।

এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মুক্তচিন্তাকে বিকশিত করবে এবং তাদের যেকোন ন্যায্য দাবি আদায়ে সর্বদা প্রতিবাদ করবে। কিন্তু তাদের প্রতিবাদকে অন্যায় হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা খুবি প্রশাসনের উচিত হয়নি।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থী তার ন্যায্য অধিকার আদায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে পারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সাথে অধিকার আদায়ে সহযোগীতা করবে। কিন্তু সেটাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হুমকি স্বরূপ বিবেচনা করাকে প্রশাসনিক দূর্বলতা কিংবা দূর্নীতিকে ইঙ্গিত করা বুঝায় বলে জানান তিনি।”

উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের জানুয়ারীতে খুবি’তে সাধারন শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা পূরণে এবং প্রশাসনিক নানা দূর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। তাদের এ আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে সমর্থন করায় ১বছর পর শিক্ষার্থীদের “উসকানি” দেওয়ার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজল, একই বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে বহিষ্কার করা হয়। এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ২শিক্ষার্থীকেও বহিষ্কার করা হয়।