জাতীয় উদ্দানের বিল দখল করে ধান চাষ, ভেস্তে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র

  • Update Time : ০১:৪২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১
  • / 149
সোবহান আলম, নবাবগঞ্জ:
বিলুপ্ত প্রজাতির মৎস্য অভয় অরন্য ও পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনাময় দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের আশুড়ার বিলের সরকারি জমি দখল করে চলছে ধান চাষ। হারাতে বসেছে জীববৈচিত্র, শুন্য হতে চলেছে পর্যটকদের পদচারনা। বেকার হয়ে পড়েছে পর্যটন কেন্দ্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন পেশাজীবিরা। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের নেই কোন উদ্যোগ, হতাশ এলাকাবাসী।
.
উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে বড় ৫১৭.৬১ হেক্টর আয়তনের শালবন ও শালবন ঘেষে ২৫১.৭৮ হেক্টর আয়তনের আশুড়ার বিল নিয়ে নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান। গত বছরে শীত মৌসুমে আশুড়ার বিলের স্বচ্ছ পানিতে ছিল শাপলা, পদ্মফুল সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ও অতিথি পাখির কলরবে মুখিরত। সেই পানিতে পর্যটকরা করত নৌকা ভ্রমন। বিল ঘেষে ঘন শালবনে পাখিদের কিচির মিচির ও পোকা মাকড়ের শুনশান শব্দে অসাধারন নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত  পর্যটকদের। ২০১৯ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে জাতীয় উদ্যানের আশুড়ার বিলে নির্মান করা হয় শেখ ফজিলাতুন নেছা আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু। বিলে পানি সংরক্ষনের জন্য নির্মান করা হয় ক্রসড্যাম।
এছাড়াও রাস্তা, বিশ্রাগার, শৌচাগার, বিদ্যুৎ লাইন সহ কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় নানা স্থাপনা। বিপুল পরিমান পর্যটকদের আনাগুনা শুরু হয়।
.
এলাকার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন উপজেলা সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে বিল পাড়ে বসবাসরত হরিপুর গ্রামের একটি কু-চক্রিমহল ভেঙ্গে দেয় ক্রসড্যামের বাধ এবং জলাশয়ে ধান চাষের দাবীতে শুরু করে অবৈধ আন্দোলন। পানি শুন্য করে আশুড়ার বিলের সরকারি সম্পত্তি দখল করে শুরু করে ধান চাষ। অপর দিকে পর্যটন কেন্দ্র রক্ষায় সোচ্চার হয়ে উঠে এলাকাবাসী বাধ সংস্কারের দাবীতে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসুচী পালন করে। বিভিন্ন  সরকারি দপ্তরে বাধটি নির্মানের দাবীতে স্বারকলিপি প্রদান করে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ বাধটি সংস্কার করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। স্থায়ী ভাবে বেহাত হতে চলেছে সরকারি সম্পদ ২৫১.৭৮ হেক্টর জমি। ভেস্তে যেতে চলেছে এলাকাবাসীর স্বপ্ন।
.
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাজমুন নাহার জানান, এটা আমাদের সরকারি সম্পত্তি, এটি রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
.
শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহাবুব আলম জানান- যারা আশুড়ার বিলে ধান চাষ জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। জাতীয় উদ্যান ও আশুড়ার বিলের উন্নয়ন হবে এটা উপজেলা বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী।
.
দিনাজপুর থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী জোবায়ের হোসেন বলছেন, উদ্যানটিতে দর্শনার্থীদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা বাড়ানো গেলে এখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে কর্মসংস্থান হবে স্থানীয়দের।
.
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের ব্যবসায়ী মোঃ মাহাবুবুর রহমান জানান, আগে ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল এখন কমে গেছে। আমরা কষ্টে আছি।
.
অবৈধ দখলদার দ্বারা ভেঙ্গে দেওয়া ক্রসড্যামের বাধ দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে এবং বিল থেকে অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করে বিপুল পরিমান সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও সম্ভাবনায় পর্যটন কেন্দ্রটিকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন এমন দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সুশিল সমাজ।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


জাতীয় উদ্দানের বিল দখল করে ধান চাষ, ভেস্তে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র

Update Time : ০১:৪২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১
সোবহান আলম, নবাবগঞ্জ:
বিলুপ্ত প্রজাতির মৎস্য অভয় অরন্য ও পর্যটন কেন্দ্রের অপার সম্ভাবনাময় দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের আশুড়ার বিলের সরকারি জমি দখল করে চলছে ধান চাষ। হারাতে বসেছে জীববৈচিত্র, শুন্য হতে চলেছে পর্যটকদের পদচারনা। বেকার হয়ে পড়েছে পর্যটন কেন্দ্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন পেশাজীবিরা। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের নেই কোন উদ্যোগ, হতাশ এলাকাবাসী।
.
উত্তর বঙ্গের সবচেয়ে বড় ৫১৭.৬১ হেক্টর আয়তনের শালবন ও শালবন ঘেষে ২৫১.৭৮ হেক্টর আয়তনের আশুড়ার বিল নিয়ে নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান। গত বছরে শীত মৌসুমে আশুড়ার বিলের স্বচ্ছ পানিতে ছিল শাপলা, পদ্মফুল সহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ও অতিথি পাখির কলরবে মুখিরত। সেই পানিতে পর্যটকরা করত নৌকা ভ্রমন। বিল ঘেষে ঘন শালবনে পাখিদের কিচির মিচির ও পোকা মাকড়ের শুনশান শব্দে অসাধারন নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত  পর্যটকদের। ২০১৯ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য, বনবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে জাতীয় উদ্যানের আশুড়ার বিলে নির্মান করা হয় শেখ ফজিলাতুন নেছা আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু। বিলে পানি সংরক্ষনের জন্য নির্মান করা হয় ক্রসড্যাম।
এছাড়াও রাস্তা, বিশ্রাগার, শৌচাগার, বিদ্যুৎ লাইন সহ কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করা হয় নানা স্থাপনা। বিপুল পরিমান পর্যটকদের আনাগুনা শুরু হয়।
.
এলাকার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন উপজেলা সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। কিন্তু গত বর্ষা মৌসুমে বিল পাড়ে বসবাসরত হরিপুর গ্রামের একটি কু-চক্রিমহল ভেঙ্গে দেয় ক্রসড্যামের বাধ এবং জলাশয়ে ধান চাষের দাবীতে শুরু করে অবৈধ আন্দোলন। পানি শুন্য করে আশুড়ার বিলের সরকারি সম্পত্তি দখল করে শুরু করে ধান চাষ। অপর দিকে পর্যটন কেন্দ্র রক্ষায় সোচ্চার হয়ে উঠে এলাকাবাসী বাধ সংস্কারের দাবীতে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসুচী পালন করে। বিভিন্ন  সরকারি দপ্তরে বাধটি নির্মানের দাবীতে স্বারকলিপি প্রদান করে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ বাধটি সংস্কার করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। স্থায়ী ভাবে বেহাত হতে চলেছে সরকারি সম্পদ ২৫১.৭৮ হেক্টর জমি। ভেস্তে যেতে চলেছে এলাকাবাসীর স্বপ্ন।
.
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাজমুন নাহার জানান, এটা আমাদের সরকারি সম্পত্তি, এটি রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
.
শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহাবুব আলম জানান- যারা আশুড়ার বিলে ধান চাষ জাতীয় উদ্যানের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। জাতীয় উদ্যান ও আশুড়ার বিলের উন্নয়ন হবে এটা উপজেলা বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী।
.
দিনাজপুর থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী জোবায়ের হোসেন বলছেন, উদ্যানটিতে দর্শনার্থীদের জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা বাড়ানো গেলে এখানে দর্শনার্থীদের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে কর্মসংস্থান হবে স্থানীয়দের।
.
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের ব্যবসায়ী মোঃ মাহাবুবুর রহমান জানান, আগে ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল এখন কমে গেছে। আমরা কষ্টে আছি।
.
অবৈধ দখলদার দ্বারা ভেঙ্গে দেওয়া ক্রসড্যামের বাধ দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করে এবং বিল থেকে অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করে বিপুল পরিমান সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার ও সম্ভাবনায় পর্যটন কেন্দ্রটিকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন এমন দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সুশিল সমাজ।