অপপ্রচারকারীরাও ভ্যাকসিন পাবে: প্রধানমন্ত্রী
- Update Time : ০৭:০৫:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২১
- / 138
নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাভাইরাসের টিকা দেশে আসার আগ থেকে অনেকে এটা নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে তাদেরও সুরক্ষার প্রয়োজন আছে, এজন্য করোনার টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। যেকোনো ধরনের সমালোচনায় কাজে গতি আসে, এজন্য সমালোচকদের সাধুবাদ জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।
বুধবার বিকালে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত হন। বক্তৃতা শেষে তিনি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
সময় মতো ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পারায় মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিন আনার জন্য যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছি এবং আমরা যে ভ্যাকসিনটা পাচ্ছি, আজকে তার যাত্রা শুরু করছি। আপনারা জানেন যে, ভ্যাকসিনটা আসার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো পরীক্ষা করা হয় এবং এরপরেই দেয়া হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, কিছু কিছু লোক থাকে সবকিছুতে একটা নেতিবাচক মনোভাব তারা পোষণ করে। মানুষ তাদের কাছে কোনো সাহায্য পায় না। কিন্তু কোনো কাজ করতে গেলে সেখানে বিরূপ সমালোচনা করা, মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঢোকানো, মানুষকে ভয়ভীতি দেয়া তাদের স্বভাব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের কিছু কাজ কারো কারো অভ্যাস আছে। সবসময়ই কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না। যত ভালো কাজই করেন, ‘কিছু ভালো লাগে না’ নামে একটা রোগে ভোগে। এ রোগের জন্য কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে কি-না তাও আমি জানি না। কিন্তু কিছু ভালো লাগে না, এ ধরনের একটা রোগ আপনারা পত্রিকা দেখলেই পাবেন। সেখানে সবকিছুর একটা দোষ ঢোকানো। আসবে না, আসবে না। আসলে পরে এত দাম হলো কেন? এটা চলবে কি-না। দিলে কী হবে… নানা প্রশ্ন তাদের। যা হোক। আমি চাই তারা সাহস করে আসবেন। আমরা তাদেরকেও ভ্যাকসিন দিয়ে দেব। তারাও যেন সুরক্ষিত থাকে।’
সমালোচনাকারীদের সমালোচনার কারণে সরকার কাজের প্রণোদনা পায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের যদি কিছু হয় তাহলে আমাদের সমালোচনাটা করবে কে? সমাচলোচনার লোকও থাকা দরকার। থাকলে আমরা জানতে পারি আমাদের কোনো ভুল ভ্রান্তি হলো কি-না। সেজন্য তাদেরকে আমরা সাধুবাদ দিচ্ছি। তাদের সমালোচনা যত হয়েছে, আমরা ততবেশি দ্রুত কাজ করার প্রণোদনা পেয়েছি।‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা এমন একটি ভাইরাস, এর থেকে কে ধনী কে দরিদ্র কেউ বাদ গেল না। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সবই যেন স্থবির। অর্থনীতি স্থবির হওয়ার পথে।‘
ভাকসিন নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আগে থেকেই নির্দেশনা দেয়া ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন দেশ ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছিল। তখনই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের নির্দেশনা ছিল, কোথায় ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করছে, যেটা আগে হবে, ভালো হবে, আমরা সেটা নেব।’
ভ্যাকসিনের জন্য এক হাজার কোটি টাকা আগেই বরাদ্দ করে রাখা হয়েছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে আসার জন্য আমরা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করলাম। আমি এক হাজার কোটি টাকা আলাদা বরাদ্দ করে রেখেছিলাম। দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।‘
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ ভাইরাস পৃথিবীতে প্রথম দেখা দিয়েছে। এর নিয়ন্ত্রণ কারো জানা ছিল না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি।‘
করোনার আঘাতে বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। সে অবস্থায় বাংলাদেশ সকল দিক থেকে স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বিশ্বের মধ্যে প্রায় সর্বনিম্ন।‘
মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশ এখনো ভ্যাকসিন পায়নি। সেখানে ভারত সরকারের বিশ লাখ ডোজ উপহারসহ আমরা এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছি। যার মাধ্যমে ৩৫ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব হবে।‘
টিকা দেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।‘
সিরামের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের সঙ্গে অন্য ভ্যাকসিনের তুলনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সেরামের ভ্যাকসিন নিঃসন্দেহে অন্য সব ভ্যাকসিনের তুলনায় নিরাপদ।