পুলিশের মানবিকতায় বাক প্রতিবন্ধী পটল ফিরে পেল আপন ঠিকানা

  • Update Time : ০৫:৫৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অগাস্ট ২০২০
  • / 147
মশিয়ার রহমান, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
পুলিশের মানবিকতায় বাক প্রতিবন্ধী আট বছরের শিশু পটল ফিরে পেল আপন ঠিকানা । শিশুটিকে ফিরে পেয়ে তার ভাই ডোমার থানা পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান।পরিবারের কাছে শিশুটিকে ফিরিয়ে দিয়ে নীলফামারীর ডোমার থানা পুলিশ মানবিকতার নজির সৃষ্টি করে।
.
সুত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই রাত দুই টার দিকে পুলিশের নিয়মিত টহলের সময় ডোমার রেলঘুন্টিতে ব্যাগ হাতে একটি শিশু ঘোরাফেরা করছে। টহলে দায়িত্বরত এএসআই মিজানুর রহমান শিশুটির নাম, ঠিকানাসহ রাতে রাইরে থাকার কারণ জানতে চায়। শিশুটি বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন উত্তর পাওয়া যায় না। তখন তিনি ডোমার থানার ওসি মোঃ মোস্তাফিজার রহমানকে বিষয়টি অবগত করেন। ওসি মোস্তাফিজার রহমানের নির্দেশে শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়। শিশুটির পরিচয় জানার জন্য বিভিন্ন জায়গায় শিশুটির ছবি পাঠানো হয়।
.
পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে ফেসবুকে শিশুটির ছবি দিয়ে পোষ্ট দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় হাফসা খান ও সায়মা সামিয়া নামের ফেসবুক ব্যবহারকারী দুটি মেয়ে ওই শিশুটিকে সনাক্ত করে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। শিশুটির বড় ভাই সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডোমার থানার ওসি’র সাথে যোগাযোগ করে জানায়, শিশুটির নাম পটল, নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পৌর এলাকার আব্দুল রশিদ মিয়ার ছেলে।
মায়ের নাম সাহেরা খাতুন।
.
গত ২৮ জুলাই থেকে শিশুটিকে থানা পুলিশ দেখভাল করে আসছেন। রাতে ডিউটি অফিসারের রুমে ঘুমের ব্যবস্থা করা হয় এবং পুলিশ সদস্যদের মেসেই তার খাওয়া-দাওয়া চলে। ঈদ উপলক্ষে তাকে নতুন পঞ্জাবি-পায়জামা দেওয়া হয়েছে।
.
সোমবার (৩ আগষ্ট) সন্ধ্যায় ডোমার থানায় আসে পটল মিয়ার বড় ভাই সফিকুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই মাজু মিয়া। সফিকুল দুই মাস পর আদরের ছোট ভাই পটলকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারপর ডোমার থানার ওসি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ ও ওই এলাকার জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে পটলের বড় ভাইয়ের পরিচয় নিশ্চিত হয়। বাবা-মায়ের ছবি দেখে পটলও ইশারায় নিজের বাবা-মা বলে জানিয়ে দেয়। এরপর আইনী কাগজপত্র সম্পূর্ণ করে বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাকপ্রতিবন্ধি শিশু পটল মিয়াকে।
.
এ সময় ডোমার-ডিমলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল, ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিশ্বদেব রায়, এসআই পারভিন আক্তারসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৭ দিনে শিশু পটল মিয়ার সাথে পুলিশের অনেক সদস্যের গভির সম্পর্ক তৈরী হয়। বিদায়ের সময় পটল ও বেশ কিছু পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আবেগঘন পরিবেশ তৈরী হয়।
.
ডোমার হতে রাতে নেত্রকোনা যাওয়া কোন ব্যবস্থা না থাকায় পটল মিয়া, বড় ভাই সফিকুল মিয়া ও চাচাতো ভাই মাজু মিয়ার জন্য স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেন ওসি মোস্তাফিজার রহমান। পরদিন মঙ্গলবার (০৪ আগষ্ট) সকালে বাস যোগে কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।
.
শিশুটির বড় ভাই সফিকুল ইসলাম আবেগালুপ্ত হয়ে জানান, গত ১৮ জুন পটল বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসে না। অনেক খোঁজা-খোঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায় না। গত দুই আগষ্ট একটি মেয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে জানায়, ফেসবুকে পটলের ছবি দিয়ে সন্ধান চাওয়া হয়েছে। আমরা সাথে সাথে ডোমার থানার ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি। আর ডোমারে এসে পটলকে পাই।
.
তিনি আরো জানান, পুলিশ যে এতোটা মানবিক হয়, তা ডোমার থানায় না আসলে কোন দিনও জানতে পারতাম না। তিনি ডোমার থানার ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media


পুলিশের মানবিকতায় বাক প্রতিবন্ধী পটল ফিরে পেল আপন ঠিকানা

Update Time : ০৫:৫৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ অগাস্ট ২০২০
মশিয়ার রহমান, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
পুলিশের মানবিকতায় বাক প্রতিবন্ধী আট বছরের শিশু পটল ফিরে পেল আপন ঠিকানা । শিশুটিকে ফিরে পেয়ে তার ভাই ডোমার থানা পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান।পরিবারের কাছে শিশুটিকে ফিরিয়ে দিয়ে নীলফামারীর ডোমার থানা পুলিশ মানবিকতার নজির সৃষ্টি করে।
.
সুত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই রাত দুই টার দিকে পুলিশের নিয়মিত টহলের সময় ডোমার রেলঘুন্টিতে ব্যাগ হাতে একটি শিশু ঘোরাফেরা করছে। টহলে দায়িত্বরত এএসআই মিজানুর রহমান শিশুটির নাম, ঠিকানাসহ রাতে রাইরে থাকার কারণ জানতে চায়। শিশুটি বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন উত্তর পাওয়া যায় না। তখন তিনি ডোমার থানার ওসি মোঃ মোস্তাফিজার রহমানকে বিষয়টি অবগত করেন। ওসি মোস্তাফিজার রহমানের নির্দেশে শিশুটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়। শিশুটির পরিচয় জানার জন্য বিভিন্ন জায়গায় শিশুটির ছবি পাঠানো হয়।
.
পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে ফেসবুকে শিশুটির ছবি দিয়ে পোষ্ট দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় হাফসা খান ও সায়মা সামিয়া নামের ফেসবুক ব্যবহারকারী দুটি মেয়ে ওই শিশুটিকে সনাক্ত করে তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। শিশুটির বড় ভাই সাইফুল ইসলাম মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ডোমার থানার ওসি’র সাথে যোগাযোগ করে জানায়, শিশুটির নাম পটল, নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ পৌর এলাকার আব্দুল রশিদ মিয়ার ছেলে।
মায়ের নাম সাহেরা খাতুন।
.
গত ২৮ জুলাই থেকে শিশুটিকে থানা পুলিশ দেখভাল করে আসছেন। রাতে ডিউটি অফিসারের রুমে ঘুমের ব্যবস্থা করা হয় এবং পুলিশ সদস্যদের মেসেই তার খাওয়া-দাওয়া চলে। ঈদ উপলক্ষে তাকে নতুন পঞ্জাবি-পায়জামা দেওয়া হয়েছে।
.
সোমবার (৩ আগষ্ট) সন্ধ্যায় ডোমার থানায় আসে পটল মিয়ার বড় ভাই সফিকুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই মাজু মিয়া। সফিকুল দুই মাস পর আদরের ছোট ভাই পটলকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। তারপর ডোমার থানার ওসি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ ও ওই এলাকার জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করে পটলের বড় ভাইয়ের পরিচয় নিশ্চিত হয়। বাবা-মায়ের ছবি দেখে পটলও ইশারায় নিজের বাবা-মা বলে জানিয়ে দেয়। এরপর আইনী কাগজপত্র সম্পূর্ণ করে বড় ভাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় বাকপ্রতিবন্ধি শিশু পটল মিয়াকে।
.
এ সময় ডোমার-ডিমলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল, ডোমার থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বিশ্বদেব রায়, এসআই পারভিন আক্তারসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ৭ দিনে শিশু পটল মিয়ার সাথে পুলিশের অনেক সদস্যের গভির সম্পর্ক তৈরী হয়। বিদায়ের সময় পটল ও বেশ কিছু পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আবেগঘন পরিবেশ তৈরী হয়।
.
ডোমার হতে রাতে নেত্রকোনা যাওয়া কোন ব্যবস্থা না থাকায় পটল মিয়া, বড় ভাই সফিকুল মিয়া ও চাচাতো ভাই মাজু মিয়ার জন্য স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেন ওসি মোস্তাফিজার রহমান। পরদিন মঙ্গলবার (০৪ আগষ্ট) সকালে বাস যোগে কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দেয়।
.
শিশুটির বড় ভাই সফিকুল ইসলাম আবেগালুপ্ত হয়ে জানান, গত ১৮ জুন পটল বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসে না। অনেক খোঁজা-খোঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায় না। গত দুই আগষ্ট একটি মেয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে জানায়, ফেসবুকে পটলের ছবি দিয়ে সন্ধান চাওয়া হয়েছে। আমরা সাথে সাথে ডোমার থানার ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করি। আর ডোমারে এসে পটলকে পাই।
.
তিনি আরো জানান, পুলিশ যে এতোটা মানবিক হয়, তা ডোমার থানায় না আসলে কোন দিনও জানতে পারতাম না। তিনি ডোমার থানার ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যকে ধন্যবাদ জানান।